‘মা’ শব্দটি অত্যন্ত মধুর এবং গভীরতর। মা হচ্ছেন সবকিছুর সেরা। সন্তানের সঙ্গে মায়ের টানটা নাড়ির। সেই নারীর নিরাপদ মাতৃত্ব সুবিধা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় এই অগ্রগতি অনেক। বর্তমান সরকার মাতৃ মৃত্যুহার কমিয়ে এনেছে। ৫৫ শতাংশ মা নিরাপদ মাতৃত্ব সুবিধার আওতায় এসেছে। যা এই উন্নয়নশীল দেশের জন্য অভাবনীয় সাফল্য। সেই সঙ্গে শিশু মৃত্যু হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হয়েছে। ইতোপূর্বে বাংলাদেশকে পোলিওমুক্ত দেশ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। মা ও শিশুর পুষ্টি, স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদি নিশ্চিত করায় সাফল্যের পথ ধরে এগিয়ে চলছে দেশ। তবে বাকি যে ৪৫ শতাংশ মা এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন, তাদের ক্রমশ বঞ্চনামুক্ত করতে এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূর করার ক্ষেত্রে জনসচেতনতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। গ্রামে তো বটেই, শহরেও এখনও অনেকের প্রসব বাড়িতে অদক্ষ ধাত্রীদের পরিচর্যায় হয়। দেশে প্রতিবছর প্রায় ২২ লাখ নারী মা হন। এই মায়েদের স্বাস্থ্য সেবার জন্য দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থাপনা জরুরী। মায়ের গর্ভ ও প্রসবকালীন ও প্রসবপরবর্তী যতেœর যে বিষয় রয়েছে, সে সুবিধা আরও নিশ্চিত করা আবশ্যক। চিকিৎসকরা বলেছেন, দেশে গর্ভকালীন শতকরা ১৪ জন মহিলাই নানাবিধ ঝুঁকিপূর্ণ জটিলতায় ভোগেন। যা মাতৃ মৃত্যুর জন্য বহুলাংশে দায়ী। পরিবারের অবহেলা, চিকিৎসককে না দেখানো, ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থা, গর্ভকালীন জটিলতা, প্রসব-পরবর্তী রক্তক্ষরণ ও খিঁচুনি ইত্যাকার বিষয় মাতৃমৃত্যুর প্রধান কারণ।
বিশ্বে প্রতিবছর ২১ কোটি নারী গর্ভবতী হয় এবং দুই কোটিরও বেশি নারী গর্ভজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগেন। এদের মধ্যে আবার ৮০ লাখের জীবনাশঙ্কা দেখা দেয়। অত্যন্ত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে জটিলতায় ভোগার হার বেশি। কোন স্বাস্থ্যসেবাই তাদের কাছে পৌঁছে না। দেশে প্রতি লাখে মাতৃ মৃত্যুহার ছিল ২০০১ সালে ৩২২ জন। এই হার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে মা, নবজাতক ও শিশুস্বাস্থ্যের উন্নয়নকল্পে নানা কর্মসূচী হাতে নিয়েছিল শেখ হাসিনার সরকার। ২০১০ সালে ওই হার কমে ১৯৪-এ আসে। ২০১৫ সালের মধ্যে ১৪৩-এ কমিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সাফল্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ২০১০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের এমডিজি পুরস্কার দেয়া হয়। বর্তমান সরকার নারী শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটিয়েছে, মাতৃমৃত্যুর হার কমাতে হলে নারী শিক্ষার হার আরও বাড়ানো প্রয়োজন এবং বাল্যবিবাহ বন্ধ করা গেলে এই হার আরও কমে যাবে। সরকার কর্মজীবী মায়েদের ক্ষেত্রে মাতৃকালীন ছুটি ৬ মাস করে নিরাপদ মাতৃত্বের পথ সুগম করেছে।
জাতিসংঘ বলছে, বাংলাদেশের ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী জনগোষ্ঠী হচ্ছে বৃহত্তম প্রজননক্ষম অংশ। সন্তান জন্মকালে যে মায়েদের মৃত্যু হয়; তাদের বেশিরভাগেরই বয়স ১৯-এর নিচে। আর এর কারণ প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে অজ্ঞতা। ইতোমধ্যে মাতৃমৃত্যু হার কমাতে নানা পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোকে গতিশীল, সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সচল রাখা গেলে গর্ভকালীন নারী স্বাস্থ্যসেবা অধিকতর নিশ্চিত করা যাবে।
শীর্ষ সংবাদ: