ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নগরে ভূমিধসের ঝুঁকি

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ৩০ মে ২০১৫

নগরে ভূমিধসের ঝুঁকি

বুধ ও বৃহস্পতিবার পর পর দু’দিন রাজধানীর পান্থপথে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের বহুতল ভবন নির্মাণের স্থানে ধসের ঘটনায় এলাকাবাসীর মনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার পাইলিং কাজের সময় পাশের দেয়াল ও ফুটপাথসহ একটি রাস্তা ধসে পড়ে। ধসে পড়া অংশ অন্তত দু’শ’ ফুট নিচে চলে যায়। এর ফলে পার্শ্ববর্তী সুন্দরবন আবাসিক হোটেল বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। তবে স্বস্তির বিষয় হলো, এ ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। তাছাড়া হোটেল কর্তৃপক্ষও বিচক্ষণতার সঙ্গে দ্রুততম সময়ের ভেতর হোটেলে অবস্থানকারী লোকজনদের অন্যত্র সরিয়ে নেয়। বালির বস্তা ফেলে ধস ঠেকানোর ব্যবস্থা নেয়া হয়। সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে এ সময় গ্যাস, বিদ্যুত, পানি ও স্যুয়ারেজের সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। ভূমিধসের পর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের একাধিক টিম সম্ভাব্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে। সব মিলিয়ে সম্ভাব্য বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি কমানোর সকল উদ্যোগই নেন সংশ্লিষ্টরা। এটি প্রশংসাযোগ্য। এক সংসদ সদস্য, ঢাকার দুই মেয়র ছাড়াও বুয়েটের শিক্ষক এবং রাজউক, তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। বলা যায়, ভূমিধস পরবর্তী সতর্কতা ও সহমর্মিতার দিক বিবেচনা করলে এ সবই ইতিবাচক। এতে এলাকাবাসীর আশ্বস্ত বোধ করারই কথা। তবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তিগত সামর্থ্যই বড় কথা। ভূমিধসের প্রকৃত কারণ নিশ্চয়ই অচিরে জানা যাবে। এ নিয়ে নানা কথাই আলোচিত হয়েছে। হোটেলটির মহাব্যবস্থাপকের মতে, ত্রুটিপূর্ণ পাইলিংয়ের জন্য হোটেলের সীমানাপ্রাচীর, ভূগর্ভস্থতলা ও রাস্তা ধসে পড়েছে। রাজউকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের অভিমত নক্সা অনুযায়ী পাইলিং করা হয়নি। তবে নির্মিয়মান ব্যাংক ভবনের সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক দাবি করেন, সম্প্রতি ভূমিকম্পের কারণে ওই এলাকায় ওয়াসার পাইপ লাইন ফেটে যায়। ভাঙ্গা পাইপ দিয়ে অনবরত পানি ঝরার কারণে রাস্তার মাটিসহ হোটেলের প্রাচীর ধসে গেছে ও বেজমেন্ট দেবে গেছে। ঢাকা উত্তরের মেয়রের নেতৃত্বে ইতোমধ্যে সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাইলিং কাজে ত্রুটি থাকলে তা নিশ্চয়ই বেরিয়ে আসবে। ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতি পূরণের উদ্যোগ নেয়াও সমীচীন হবে। এতে কোন সংশয় নেই যে, সুউচ্চ ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে সুগভীর গর্ত খোঁড়া না হলে এই ধসের ঘটনা ঘটত না এমন ধারণা করা যায়। বৃহস্পতিবার এলাকাটির উত্তর-পূর্ব পাশ আবারও ধসে তিনটি বিলবোর্ড ভেঙ্গে পড়লে পান্থপথ সড়কের একপাশে যান চলাচল বন্ধ করে দিতে হয়। ফলে পুরো বিষয়টিই এখন নতুন করে পর্যালোচনার দাবি রাখে। রাজধানী ঢাকায় নির্মিয়মান বহুতল ভবনগুলোর নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের জন্য এ ঘটনাটি এক ধরনের সতর্কবার্তা। কারণ রাজধানীর অনেক জায়গাতেই জলাশয় ভরাট করে ভবন নির্মিত হয়েছে। আবার নির্মিত ভবনের লাগোয়া নতুন ভবন তৈরির কাজও চালু রয়েছে। মহানগরীতে ভূমিধসের ঝুঁকি বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করবেন, দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবেনÑ এটাই প্রত্যাশা। এ জন্য নিবিড় তদারকির বিকল্প নেই। রাজউক তার দায় এড়াতে পারে না। তাদের আরও সক্রিয় হতে হবে। যে কোন ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের যে বিষয়টির দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া জরুরী, তা হলো লাগোয়া ভবন এবং প্রতিবেশীদের নিরাপত্তা।
×