ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সাত খাতে অনিয়ম, রাজস্ব ফাঁকি

দুর্নীতি জেঁকে বসেছে শিপিং দফতরে

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ৩০ মে ২০১৫

দুর্নীতি জেঁকে বসেছে  শিপিং দফতরে

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ সমুদ্রগামী জাহাজের অফিসার ও নাবিকদের কর্মসংস্থানে নিয়োজিত সরকারী সংস্থা চট্টগ্রামের শিপিং অফিসে দুর্নীতি ব্যাপকভাবে জেঁকে বসেছে। সাত খাতে ব্যাপক অনিয়ম ও জাল জালিয়াতির ঘটনা ঘটেই চলেছে। আর এ কারণে মোটা অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। অফিসার ও নাবিকদের সিজিসি (কন্টিনিউয়াস ডিসচার্জ সার্টিফিকেট) ইস্যুর পাশাপাশি দেশী-বিদেশী জাহাজে নাবিকদের সাইন অন ও অফের দায়িত্ব পালনকারী সংস্থাটি সরকারী শিপিং অফিস নামে পরিচিত এবং এটি নৌমন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ। এ সংস্থায় দুর্নীতি ও অনিয়ম যেন ওপেন সিক্রেট। এ অফিসের শীর্ষ কর্মকর্তা থেকে কর্মচারীরা দুর্নীতির আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। প্রসঙ্গত, এ দফতরের যিনি শীর্ষ পদে আছেন তিনি শিপিং মাস্টার। তাঁর নিয়োগ এবং এর পাশাপাশি সাবেক শিপিং মাস্টারের বরখাস্তের পুরো ঘটনাটিই আইন ও সরকারী নিয়োগ প্রক্রিয়া বহির্ভূত বলে অভিযোগ রয়েছে। সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমেই এ অপকর্মের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। বরখাস্তকৃত প্রাক্তন শিপিং মাস্টার আইনের আশ্রয় নিলে সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের সকল অপকর্ম ফাঁস হয়ে যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ অধিদফতরের প্রসিকিউশন অফিসার নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করণে সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তাকে প্রভাবিত করেন। অভিযোগ উঠেছে, প্রাক্তন শিপিং মাস্টারকে বরখাস্ত করে পছন্দমাফিক এ কর্মকর্তাকে বসিয়ে এ সেক্টরটিকে রীতিমতো কলঙ্কিত করা হয়েছে। বর্তমানে এ বরখাস্তের বিষয়ে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল অবৈধ বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে গেল নবেম্বর মাসে উক্ত রায়কে সঠিক ও তথ্যভিত্তিক বলে উল্লেখ করলেও এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে আইনত সুফল পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। অধিকন্তু অহেতুক রাষ্ট্রীয় অর্থ ও সময়ের অপচয়ের শঙ্কা ব্যক্ত করা হয়েছে। অথচ, রাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের আদেশকে রীতিমতো বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে দীর্ঘ ছয়মাস প্রাক্তন শিপিং মাস্টারকে পুনর্বহালের কোন উদ্যোগ নেয়নি সমুদ্র পরিবহন দফতর। সূত্র জানায়, এ শিপিং অফিসে দুর্নীতির যে সাতটি খাত রয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে অবসরপ্রাপ্ত নেভাল রেটিংদের সিডিসি প্রদান ও ভুয়া সার্টিফিকেটদের বাবদ জনপ্রতি ১ লাখ ২০ হাজার করে উৎকোচ গ্রহণ করা হয়েছে। এসব সার্টিফিকেট কোন অনুমোদিত ইনস্টিটিউট থেকে প্রদান করা হয়নি। ডিজি শিপিং অফিসে এ সংক্রান্ত কোনো রেকর্ডও নেই। পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ খাতে সরকার রাজস্ব হারিয়েছে ৫ লাখ টাকা। জাহাজে কর্মরত নাবিকদের বিভিন্ন খাতে জমাকৃত ২০ লাখ টাকা দীর্ঘ দুই বছর এফডিআর করে তা সাধারণ এ্যাকাউন্টে রেখে সুদ বাবদ প্রায় ২ লাখ টাকার ক্ষতি সাধন করেছে এ শিপিং অফিস। বিদেশী সিডিসিধারীদের বাংলাদেশী সিডিসি ইস্যুতে ন্যূনতম ১ লাখ টাকা হারে উৎকোচ গ্রহণ করে শিপিং অফিসের কর্তারা প্রায় ১২০টি অনুরূপ সিডিসি গ্রহণ করেছেন। এছাড়াও মেরিন একাডেমিসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা নাবিক প্রতি ২০ হাজার থেকে একলাখ টাকা পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে যে সমস্ত ভুয়া সিডিসি ও দক্ষতার সনদ ইস্যু করা হয়েছে সেগুলো বিদেশী কোম্পানি থেকে যাচাই বাছাইয়ের প্রক্রিয়ায় প্রকৃত ঘটনা উপেক্ষিত হওয়ায় ভুয়া সনদ ও সার্টিফিকেটধারীরা পার পেয়ে গেছে। সীম্যান আইডিধারীদের সমুদ্রগামী জাহাজে না ওঠার নির্দেশ সত্ত্বেও অনুরূপ আইডিধারীদের কাছ থেকে ন্যূনতম ২ লাখ টাকার বিনিময়ে শিপিং অফিস কর্মকর্তার মনোনীত ৫টি ম্যানিং এজেন্টের মাধ্যমে জাহাজে ওঠার সুযোগ পেয়েছে। এ খাতে বছরে সরকার রাজস্ব হারিয়েছে ১০ লাখ টাকা পাশাপাশি প্রকৃত নাবিকরা জাহাজে ওঠার সুযোগ হারিয়েছে এবং বর্তমানেও হারাচ্ছে। ক্যাডেট ও অফিসারদের ভয়েজ এন্ডোর্সমেন্ট করার প্রক্রিয়ায় জনপ্রতি ৫০ হাজার টাকা উৎকোচ গ্রহণ করে এ পর্যন্ত সাতশ’ জনকে অনুরূপ এন্ডোর্সমেন্ট প্রদান করা হয়েছে, যাতে সরকার হারিয়েছে ৭ লাখ টাকার রাজস্ব। ভুয়া সিডিসিধারী নাবিকদের ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্সের জন্য সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত পর্যায়ে সরকারী প্যাড ব্যবহার করে প্রত্যয়নপত্র দিয়ে এ অফিসের কর্তারা জনপ্রতি প্রায় ৩ লাখ টাকা অবৈধ আয় করে থাকে। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত প্রায় ২৫০ ভুয়া সিডিসিধারীদের অনুরূপ ক্লিয়ারেন্স দিয়ে প্রকৃত সিডিসিধারীদের চাকরির বাজার নষ্ট করা হয়েছে এবং বিদেশী কোম্পানিগুলোতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœœ হয়েছে। সূত্র মতে, এ শিপিং অফিস থেকে সরকার প্রায় দেড় কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হওয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। যা সরকারী নির্দেশে তদন্ত পরিচালিত হলে তা ধরা পড়বে।
×