ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

দাঁড়ি রেখে ভোল পাল্টে বনে যাচ্ছে ধর্মপ্রাণ মুসল্লি

উখিয়া-টেকনাফের মানব পাচারকারীরা যোগ দিচ্ছে তাবলীগে

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ২৯ মে ২০১৫

উখিয়া-টেকনাফের মানব পাচারকারীরা যোগ দিচ্ছে তাবলীগে

নিজস্ব সংবাদদাতা, উখিয়া, ২৮ মে ॥ জলে-স্থলে সবখানে অনিরাপদ বোধ করায় তাবলীগে ঠাঁই নিয়েছে উখিয়া-টেকনাফের শীর্ষ বেশ কয়েকজন মানব পাচারকারী। দাঁড়ি রেখে মুসল্লি বনে গেছে তারা। প্রশাসনের কঠোর নজরদারির কারণে আত্মগোপনের চেষ্টায় তারা মিশে গেছে তবলীগে। স্থানীয় পর্যায়ে অনুসন্ধান চালিয়ে বিভিন্নসূত্রে এ বিস্ময়কর তথ্য পাওয়া গেছে। বিষয়টি গোয়েন্দা সংস্থার নজরেও এসেছে। গোয়েন্দা পুলিশের সূত্র মতে, কয়েক মাস আগে থেকেই শীর্ষ মানব পাচারকারীরা তবলীগে যোগ দিয়ে আত্মগোপন করার চেষ্টা করে। এ তথ্য হাতে আসার পরে বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রাখে ডিবিসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। শেষ অবধি তথ্যের সত্যতা খুঁজে পায় গোয়েন্দারা। মাঠ পর্যায়ে অনুসন্ধান করে জানা গেছে, থাইল্যান্ডে অভিবাসীদের গণকবরের সন্ধান পাওয়ার পর বাংলাদেশে প্রশাসন কঠোর অবস্থান নিলে ভড়কে যায় মানব পাচারকারীরা। এর মধ্যে পাচারকারীদের ধরতে পুলিশ সশস্ত্র অভিযান শুরু করলে তারা সটকে পড়ে। ইতোমধ্যে ৬ জন মানব পাচারকারী ক্রসফায়ারের শিকার হয়েছে, অনেককেই আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সম্প্রতি মানব পাচারের বিষয়টি ‘টক অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ হলে দেশজুড়ে প্রশাসনের তৎপরতা জোরদার হয়। এ পরিস্থিতিতে জলে-স্থলে দেশের কোন জায়গায় আত্মগোপন করার ক্ষেত্রে আস্থা না পাওয়ায় নিরূপায় হয়ে তবলীগ জামাতকে নিরাপদ আশ্রয়স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছে অবৈধ আদম ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় সূত্র মতে, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ায় গণকবর এবং সাগরে অসংখ্য লোকের ভাসমান থাকার বিষয় নিয়ে ‘টেনশনে’ ছিল মালয়েশিয়ায় মানব পাচারের শীর্ষ দালালরা। অভিবাসীদের গণকবর ও অথৈ জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণে নিরূপায় ভাসমান মানুষদের খবরে পুরো বিশ্বে যে তোলপাড় চলছে তা বিগত তিন মাস আগ থেকেই আঁচ করতে পেরেছিল। উল্লেখ্য, এর আগে এখানকার ইয়াবা ব্যবসায়ীরাও তবলীগে যোগ দিয়ে আত্মগোপন করেছিল। ইতোমধ্যে আটক মানব পাচারকারী ও দালালরাও এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। এমনকি আত্মগোপন করা মানব পাচারকারীরা কোন কোন এলাকায় অবস্থান করছে সে বিষয়েও তথ্য বের হয়ে আসছে। এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের অতিরিক্তি পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমদ জানান, ‘তবলীগ জামাতের প্রতি সরকারের নজরদারি না থাকার সুযোগে গ্রেফতার এড়াতে মানব পাচারকারীরা তবলীগে যোগ দিয়ে আত্মগোপন করেছে। এরকম তথ্য বের হয়ে আসার পর পুলিশের পক্ষ থেকে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।’ এদিকে সর্বশেষ গত রোববার থাইল্যান্ডের সীমান্ত সংলগ্ন পার্লিস প্রদেশের পাদাং বেসার এলাকায় অভিবাসী প্রত্যাশীদের ১৩৯টি গণকবর এবং ২৮টি শিবিরের সন্ধান মিলেছে। এসব কবরে ভাগ্যহত রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশীদের শত শত লাশ রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে অবৈধভাবে সাগরপথে বিদেশে পাড়ি দেয়ার বিষয়টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রধান আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মিয়ানমারের সরকারের বৈষম্য ও নিপীড়নমূলক আচরণের কারণে রোহিঙ্গারা বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগরপথে অন্য দেশে যাওয়ার বিষয়টি যৌক্তিক মনে করা হলেও বাংলাদেশের মানুষ কেন এ বিপজ্জনক পথ বেছে নিচ্ছে তার কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে না।
×