ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এক কুলাঙ্গারের শাস্তি

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ২৯ মে ২০১৫

এক কুলাঙ্গারের শাস্তি

ধর্ষণ এক মারাত্মক ব্যাধি হিসেবে চিহ্নিত সমাজে। ধর্ষণ বিগত কয়েক বছরে অনেকটা বেড়েছে। নারী নিপীড়কদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ সমাজের সভ্যদের কাছ থেকে বার বার ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদ-ের কথা উচ্চারিত হয়ে থাকে। এর পেছনের আবেগ ও অনুভূতিকে অস্বীকার করা চলে না। ধর্ষণ কেবল একজন নারীর চরম অবমাননাই নয়, অনেক সময় তা তার মৃত্যুরই নামান্তর। ধর্ষণের শিকার নারী সারাজীবন এক অসহনীয় মানসিক যন্ত্রণার ভেতরে থাকেন। শিশু ধর্ষণের বিষয়টি আরও মারাত্মক। অত্যন্ত গর্হিত এ অপরাধের শিকার শিশুর মনোজগত ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশের স্বাভাবিক ধারাটি নেতিবাচকভাবে পরিবর্তিত হয়ে যায়। আমাদের দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনমূলক অপরাধগুলো কঠোরভাবে দমনের উদ্দেশ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ নামে একটি আইন প্রণয়ন করা হয়। পরে এই আইনের কিছু ধারা সংশোধন করে ২০০৩ সালে প্রণীত হয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) আইন ২০০৩। এই আইন দিয়ে যে অপরাধগুলোর বিচার নিশ্চিত করা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো যৌতুক, এ্যাসিড নিক্ষেপ, নারী বা শিশু পাচার, নারী ও শিশু অপহরণ, ধর্ষণ, ধর্ষণজনিত মৃত্যু, নারীর আত্মহত্যায় প্ররোচনা, যৌননিপীড়ন, ভিক্ষাবৃত্তি ইত্যাদির উদ্দেশ্যে শিশুর অঙ্গহানি। দলবদ্ধ ধর্ষণের শাস্তিস্বরূপ মৃত্যুদ- প্রদানের বিধান বলবত ছিল। অবশ্য চলতি মাসে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ সংশ্লিষ্ট আইনের তিনটি ধারা অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করেছেন। যার একটিতে বলা ছিল, ধর্ষণের পর কোন ব্যক্তি বা একাধিক ব্যক্তি যৌথভাবে যদি কোন নারী বা শিশুর মৃত্যুর কারণ ঘটান, তাহলে আদালত তাকে মৃত্যুদ- দেবেন। অর্থাৎ ধর্ষককে মৃত্যুদ- প্রদানের বিষয়টি আর আইনে থাকল না। শিশু ধর্ষণকারীর মৃত্যুদ- মানুষের কাছে কাক্সিক্ষত হলেও এখন আর সে সুযোগ নেই। রাজধানীর চাঞ্চল্যকর একটি শিশু ধর্ষণ মামলায় আরবী শিক্ষক মিনহাজ উদ্দিনের যাবজ্জীবন কারাদ- হয়েছে। তারপরও বিষয়টি সমাজে উত্তম দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। কারণ সমাজে খুব কমসংখ্যক ধর্ষকেরই উপযুক্ত শাস্তি প্রাপ্তির উদাহরণ রয়েছে। ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক যা বলেছেন তা যেন জাতির বিবেকেরই উচ্চারণ। তিনি বলেন, ‘স্কুলের আরবী শিক্ষক হলেন ছাত্রছাত্রীদের ন্যায়নীতি, মূল্যবোধ ও চরিত্র গঠনের সর্বোত্তম শিক্ষাগুরু অথচ এই শিক্ষক একটা অবুঝ শিশুকে ধর্ষণ করে যে পশুত্বের বহির্প্রকাশ ঘটিয়েছেন তাতে আসামি শুধু শিক্ষক সমাজের নয় বরং মানবকুলের মৌলিক বিশ্বাসের জায়গাটি ধ্বংস করে মানবতাকে ভূলুণ্ঠিত করেছেন।’ এক কুলাঙ্গারের শাস্তি হয়েছে, কিন্তু বহু কুলাঙ্গার এখনও আইনের চৌহদ্দির বাইরে রয়ে গেছেন। নারী নিপীড়নকারী সব নরাধমের ন্যায্য বিচার নিশ্চিত করতে সমর্থ হলেই সমাজ কলুষমুক্ত হবে। আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হলে আইন ভঙ্গকারী সব অপরাধী সাজা পাবেÑ এমনটাই শুভবোধসম্পন্ন নাগরিকদের প্রত্যাশা। আইন থাকলেও অনেক সময় তার প্রয়োগ ঘটে না। তাই আইন বাস্তবায়নই বড় ব্যাপার। এটি হতে দেখলে মানুষের মধ্যে স্বস্তি ও আস্থা তৈরি হয়। আইনের মাধ্যমে অপরাধীর শাস্তি প্রদান নিশ্চিত করা হয়। তবে ধর্ষণের মতো অপরাধের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার কাজটিও যে অনেক বেশি জরুরী, সেটাও সমাজের বিবেকবান মানুষ আমাদের মনে করিয়ে দেন।
×