ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সমঝোতার কমিটি জাতীয় প্রেসক্লাবে

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৯ মে ২০১৫

সমঝোতার  কমিটি  জাতীয়  প্রেসক্লাবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নির্বাচন ছাড়াই মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার ছয় মাস পর বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সমঝোতার ভিত্তিতে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সমঝোতার কমিটিতে স্থান পায়নি স্বাধীনতাবিরোধী সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর ঘোর সমর্থক কোন সদস্য। প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহম্মদ শফিকুর রহমানকে সভাপতি ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) বার্তা সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে ঘোষণা করা হয়েছে এই নতুন কমিটি। একই সঙ্গে ২০১৫ ও ২০১৬ দুই বছরের জন্য ১৭ সদস্যের নতুন ব্যবস্থাপনা কমিটিও গঠন করা হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠান এবং নতুন কমিটি ঘোষণার এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে জাতীয় প্রেসক্লাবের বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটি। কমিটির পক্ষে সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ প্রদত্ত বিবৃতিতে বলা হয়, কেবলমাত্র নির্বাচনের মাধ্যমেই এক কমিটির কাছ থেকে আরেক কমিটিকে দায়িত্ব হস্তান্তরের প্রথা রয়েছে। এর কোনরূপ ব্যত্যয় এবং লঙ্ঘন জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য ও দেশের সাংবাদিক সমাজ কোনভাবেই মেনে নেবে না। বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। তবে এ সাধারণ সভায় বর্তমান প্রেসক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ বেশ কয়েকজন অনুপস্থিত ছিলেন। ক্লাবের প্রবীণ সদস্য এম শাহজাহান মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় বেশকিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় নতুন কমিটির নাম প্রস্তাব করেন বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এলাহী নেওয়াজ খান। প্রস্তাবটি সমর্থন করেন সরকার দল সমর্থিত ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের বর্তমান সভাপতি আলতাফ মাহমুদ। সভার সভাপতি গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ ১৪.ক মোতাবেক প্রস্তাবটি ভোটে দিলে তা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। প্রেসক্লাবে ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কমিটির মধ্যে রয়েছেন- সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান, সিনিয়র সহ-সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, সহ-সভাপতি আমীরুল ইসলাম কাগজী, সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফ আলী ও ইলিয়াস খান, কোষাধ্যক্ষ কার্তিক চ্যাটার্জী এবং সদস্য হয়েছেন সিনিয়র সদস্য আমানুল্লাহ কবীর, খোন্দকার মনিরুল আলম, আজিজুল ইসলাম ভুঁইয়া, সাইফুল আলম, শ্যামল দত্ত, শামসুদ্দিন আহমেদ চারু, মোল্লাহ জালাল, সরদার ফরিদ আহমদ, হাসান আরেফিন ও শামসুল হক দুররানী। পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার মাধ্যমে দীর্ঘ সময় পর নেতৃত্বে অনেকটাই জামায়াতমুক্ত হলো জাতীয় প্রেসক্লাব। নতুন কমিটি ঘোষণা ছাড়াও সাধারণ সভায় বেশকিছু প্রস্তাব গৃহীত হয়। গৃহীত প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিগত অতিরিক্ত সাধারণ সভার প্রস্তাব অনুযায়ী ক্লাব সদস্য সংখ্যা বর্তমান এক হাজারের সঙ্গে ৫শ’ যোগ করে ১৫শ’ করা হবে। ক্লাবের বিগত দিনের আর্থিক অস্বচ্ছতার ওপর তদন্ত করে শ্বেতপত্র প্রকাশ এবং প্রেসক্লাবের জাতীয় মর্যাদা অনুযায়ী জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। ক্লাবের প্রবীণ সদস্য ও ডেইলী অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী এ প্রস্তাবগুলো সাধারণ সভায় পেশ করলে সদস্যরা তা অনুমোদন করেন। সভায় দৈনিক সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, সাবেক সভাপতি ও প্রবীণ সদস্য হাসান শাহরিয়ার, বাসসের প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, দৈনিক দিনকালের সম্পাদক কাজী সিরাজ, দৈনিক আমার দেশের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক আমানুল্লাহ কবির, সাবেক সভাপতি খন্দকার মনিরুল আলম, মনজুরুল আহসান বুলবুল, আলতাফ মাহমুদ, আবদুল জলিল ভুঁইয়া, কুদ্দুস আফ্রাদ. এলাহী নেওয়াজ খান সাজু প্রমুখ। সাধারণ সভায় অবিলম্বে নতুন কমিটির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য প্রেসক্লাবের বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রতি আহ্বান জানিয়ে ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, কয়েক বছর ধরে জাতীয় প্রেসক্লাব একটি গোষ্ঠী ও রাজনৈতিক দলের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এভাবে ক্লাব চলতে পারে না। আমি স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, আমরা দেশে স্বেচ্ছাচারিতা মানি নাই, জাতীয় প্রেসক্লাবেও কোন স্বেচ্ছাচারিতা আর মেনে নেয়া হবে না। মেয়াদোত্তীর্ণ বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটিকে ‘অবৈধ’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ৩১ মার্চের পর থেকে এই কমিটির ক্লাব পরিচালনার কোন আইনগত বৈধতা নেই। অতিরিক্ত সাধারণ সভায় ক্লাবের তাদের ৩১ মার্চের মধ্যে সাধারণ সভা ও নির্বাচনের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছিল। তারপরও তারা চেয়ার আঁকড়ে রেখেছেন। আমরা সাধারণ সদস্যরা এর জবাবে বলতে চাই, আপনারা অবৈধ, আপনারা আর ক্ষমতায় নেই। এরপরও যদি আপনারা ক্লাবের চেয়ার আঁকড়ে থাকেন, তাহলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। সাধারণ সদস্যরা আপনাদের মোকাবেলা করবে। ক্লাবের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এই সাধারণ সভা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, আজকের সভায় যারা সমবেত হয়েছেন, তারা জাতীয় প্রতিষ্ঠানকে অপশক্তির হাত থেকে মুক্তি করার সংগ্রামে শামিল হলেন। সভায় বিএনপি সমর্থক সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা আমানুল্লাহ কবীর বলেন, জাতীয় প্রেসক্লাবকে ইউনিয়নের মতো বিভক্ত করে এর অখ- ঐতিহ্যকে বিনষ্ট করায় আজকের এই সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। যদি এক ব্যক্তি এই ক্লাবের দেখভাল না করত, এই সঙ্কট সৃষ্টি হত না বলে আমি মনে করি। আমরা সেজন্য সমঝোতার একটি প্যানেলের মাধ্যমে এই সঙ্কট থেকে উত্তরণ ঘটাতে চাই। তিনি বলেন, কথা ছিল একটি সমঝোতা হবে। কার কারণে ওই সমঝোতা ভেঙেছে? সমঝোতা যারা ভেঙেছে তারা আজ এই সভায় আসেননি। তিনি বলেন, আমরা মনে করি, দল-মত নির্বিশেষে ক্লাবকে রাজনীতির উর্ধে রাখতে হবে। একে কোন রাজনৈতিক দলের প্ল্যাটফর্ম বানানো যাবে না।
×