ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এবার ভারতে বিদ্যুত খাতে বিনিয়োগ করতে চায় সামিট

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৯ মে ২০১৫

এবার ভারতে বিদ্যুত খাতে বিনিয়োগ করতে চায় সামিট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের গন্ডি পেরিয়ে বাইরে বিনিয়োগের স্বপ্ন দেখছে সামিট গ্রুপ। ভারতের বিদ্যুত খাতে বিনিয়োগ করতে চায় দেশের শীর্ষ বিদ্যুত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সামিট পাওয়ার। ইতোমধ্যেই যৌথ বিনিয়োগের ব্যাপারে আলোচনা শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। দেশের বাইরে বিনিয়োগের ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন সাপেক্ষে অগ্রসর হতে চায় সামিট। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সামিট গ্রুপের পরিচালক (অর্থ) আয়েশা আজিজ খান। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আয়েশা আজিজ বলেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে আমাদের আগ্রহ আছে। আমরা সরকারের কয়লা নীতির জন্য অপেক্ষা করছি। কয়লা আমদানি, সরবরাহ, পরিবহনসহ কয়লার বিষয়গুলো চূড়ান্ত হলে কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে অগ্রসর হবে সামিট। আয়েশা আজিজ বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত জেনারেল ইলেকট্রিকের (জিই) সঙ্গে কাজ করছি আমরা। ভারতে তাদের বিনিয়োগ রয়েছে। তাই জিই-এর মাধ্যমে ভারতের বড় বড় কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে। দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে সক্ষমতা ও সফলতা দেখাতে চায় সামিট। আয়েশা আজিজ খান বলেন, মেঘনাঘাট ও বিবিয়ানা-২ নামের দুটি বড় বিদ্যুত প্রকল্পে ৬২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। অনেক চ্যালেঞ্জ থাকলেও প্রকল্প দুটি বাস্তবায়ন করে সামিট সক্ষমতার প্রমাণ দেখিয়েছে। দেশের জন্যও এটা গর্বের। এখন এক বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যাপারে আমরা আত্মবিশ্বাসী। দেশের বিদ্যুত খাতে ভারতীয় কোম্পানির বিনিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশীয় কোম্পানির যথেষ্ট সক্ষমতা রয়েছে। তারা যে কোন বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার সামর্থ্য রাখে। তাই ভারতীয় কোম্পানির সঙ্গে প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা রাখতে হবে। সমান সুযোগ দেয়া হলে তাদের সঙ্গে আমরা প্রতিযোগিতা করতে পারব। মেঘনাঘাট ৩৩৭ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল ও বিবিয়ানা-২ ৩৪১ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুত কেন্দ্র দুটি নিয়ে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সামিট। রাজধানীর কাওরানবাজারে অবস্থিত সামিটের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন আয়েশা আজিজ খান। তার সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন সামিট টারবাইন বিভাগের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএনএম তারিকুর রশীদ ও আইন কর্মকর্তা ব্যারিস্টার কারিশমা জাহান। তারাও বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। এক প্রশ্নের জবাবে আয়েশা আজিজ বলেন, মেঘনাঘাট ও বিবিয়ানা বিদ্যুত কেন্দ্র শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করার পরিকল্পনা নেই। তবে ভবিষ্যতে বড় প্রকল্পে স্থানীয় পর্যায় থেকে বিনিয়োগ সংগ্রহের পরিকল্পনা আছে সামিটের। দেশের মধ্য থেকে অনেক বিনিয়োগকারী পাওয়া সম্ভব বলেও মনে করেন তিনি। প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উল্লেখ করার মতো দেরি হয়নি। আর যেটুকু দেরি হয়েছে তাতে সামিটের পক্ষ থেকে কোন ব্যর্থতা নেই। বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) পক্ষ থেকে জমি হস্তান্তরে দেরি হওয়ায় কাজ শুরু করতে গিয়ে পিছিয়ে গেছে সামিট। এছাড়া রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। এসব বিষয় অবশ্যই পিডিবি বিবেচনা করবে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দুটি প্রকল্পের জন্য বিদেশী উৎস থেকে ঋণ সংগ্রহ করা হয়েছে। ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, জার্মানির ডিইজি, এমএমও এতে অর্থায়ন করেছে। এছাড়া ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক মেঘনাঘাট প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে। বিদেশী উৎস থেকে কম সুদে (৫ শতাংশ) এবং দীর্ঘমেয়াদে (১২-১৫ বছর) ঋণ সরবরাহ করেছে সামিট। অন্যদিকে দেশীয় উৎস থেকে নেয়া ৫ থেকে ৭ বছর মেয়াদী ঋণে সুদ দিতে হচ্ছে ১২ শতাংশ। বেসরকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে সামিটই এককভাবে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুত কেন্দ্রের কাজ পেয়েছে। সরকারের পরিকল্পনায় সাশ্রয়ী বিদ্যুত প্রকল্প হিসেবে বড় অংশ জুড়ে আছে এ তিনটি প্রকল্প্র। অর্থ সংস্থান নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়ায় সামিটের বিবিয়ানা-১ বিদ্যুত কেন্দ্রটি বাতিল করা হয়। বাকি দুটি কেন্দ্রের কাজ বাস্তবায়ন করা হয়। বেসরকারী মালিকায় প্রতিষ্ঠিত সবচেয়ে বড় বিদ্যুত কেন্দ্র হচ্ছে বিবিয়ানা-২। ৩৪১ মেগাওয়াট গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রটি পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করেছে। এই কেন্দ্রটি থেকে সবচেয়ে কম দরে বিদ্যুত পাওয়া যাবে। দুই টাকার কম দরে প্রতি ইউনিট বিদ্যুত পাওয়া যাবে। এ ছাড়া মেঘনাঘাট ৩৩৭ মেগাওয়াট মেঘনাঘাট ডুয়েল ফুয়েল জ্বালানি ভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রটি ৮ মাস আগে উৎপাদনে এসেছে।
×