ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পান্থপথ মোড়ে পাইলিং ধস

ঝুঁকি কমে আসছে, বাসিন্দাদের মধ্যে স্বস্তি

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৯ মে ২০১৫

ঝুঁকি কমে আসছে, বাসিন্দাদের মধ্যে স্বস্তি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর পান্থপথ মোড়ে বহুতল ভবনের পাইলিং ধসের ঘটনায় ঝুঁকি কমে আসছে। কমে যাচ্ছে আতঙ্ক। আশপাশের ভবনের বাসিন্দারাও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পাইলিংয়ের গর্তে প্রায় পাঁচশ ট্রাক বালু ফেলা হয়েছে। যত বালু ফেলা হচ্ছে, ঝুঁকি তত কমে আসছে। ভারি বৃষ্টি বা বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে মারাত্মক কোন দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা নেই বলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ দল দাবি করেছেন। এদিকে সুন্দরবন হোটেলসহ আশপাশের বহুতল ভবনগুলোকে নিরাপদ রাখতে লিখিতভাবে সেনাবাহিনীর সহায়তা চাওয়া হয়েছে। যদিও বুধবারই সেনাবাহিনীর একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়ার আগাম ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। বুধবার গভীর রাতে সুন্দরবন হোটেলের পাশের দেয়াল ও রাস্তার কিছু অংশ নতুন করে ধসে পড়লেও বড় ধরনের কোন সমস্যা হয়নি। বুধবার সকাল সাতটার দিকে রাজধানীর কলাবাগান থানাধীন পান্থপথ মোড়ে সি আর দত্ত সড়কের ১/সি/১ নম্বর হোল্ডিংয়ে নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের পাইলিংয়ের গর্তে ধসে পড়ে পাশের সুন্দরবন হোটেলের সীমানা প্রাচীর, রাস্তা, ফুটপাথ, বৈদ্যুতিক তারের খুঁটি, কয়েকটি গাছ, টং দোকান, ফুচকা ও কয়েকটি ভ্যানগাড়ি চাপা পড়ে। ঘটনার সময় কাজ না চলায় কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। সুন্দরবন হোটেলের নিচের মাটি সরে যাওয়ায় হোটেলটি রীতিমত ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। বুধবার রাতে হোটেলের নিচের আরও কিছু মাটি ধসে পড়ে। হোটেলের নিচের পিলারগুলো থেকে মাটি সরে যাওয়ায় আলগা হয়ে আছে। যদিও বুধবারই অতিথিদের নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে হোটেলটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সুন্দরবন হোটেলের নিচের পানির লাইন ফেটে যাওয়ায় দ্রুত পানি পড়ে মাটি সরে গিয়ে হোটেল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। হোটেলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াজেদ আলী সাংবাদিকদের জানান, হোটেলের তরফ থেকে ক্ষতিপূরণ চেয়ে কলাবাগান থাকায় বুধবার একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। বৃহস্পতিবার রাত আটটায় রাজউকের তরফ থেকে মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল জনকণ্ঠকে জানান, পুরো বিষয়টির শেষ পর্যন্ত দেখার পরই মামলার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। সার্বিক পরিস্থিতি দেখভাল করতে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক। বৃহস্পতিবার বেলা তিনটার দিকে তিনি ঘটনাস্থলে হাজির হন। সার্বিক পরিস্থিতি দেখেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ধসে পড়া জায়গার পাশে থাকা ভবনগুলো নিরাপদ রাখাই এখন প্রধান কাজ। এজন্য লিখিতভাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। যদিও বুধবারই সেনাবাহিনীর একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আশপাশের ভবন ঝুঁকিমুক্ত রাখতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করার আগাম ঘোষণা দিয়ে যায়। মেয়র আরও জানান, বুধবার রাত দশটার পর থেকে বালু ফেলা শুরু হয়। বালু মূলত সোনারগাঁও হোটেলের প্রাচীর দেয়ালের কাছে ফেলা হচ্ছে। যাতে হোটেলটিকে আগে নিরাপদ করা যায়। হোটেল নিরাপদ হলে স্বাভাবিকভাবেই আশপাশের ভবনগুলো নিরাপদ হবে। রাত দশটার পর থেকে ভোর পর্যন্ত প্রায় ৫শ’ ট্রাক বালু ফেলা হয়েছে। এছাড়া বৃহস্পতিবারও ট্রাকে করে বালু ফেলা হয়। দুর্ঘটনার কারণ জানতে রাজউকের গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর প্রকৃত বিষয়টি বেরিয়ে আসবে। ভারি বৃষ্টিপাতসহ বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা নেই। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ফকরুল আমিনও এমন দাবি করে সাংবাদিকদের বলেন, পাইলিংয়ের গর্তে দ্রুত বালু ফেলে ভরাট করা সম্ভব হলে আর কোন সমস্যা হবে না। বালু ফেলার কারণে ঝুঁকি কমে আসছে বলেও তিনি দাবি করেন। গত বুধবারের তুলনায় বৃহস্পতিবার ঝুঁকি অনেক কমে গেছে বলে জানান তিনি। এদিকে পুরো এলাকায় কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তুলেছে র‌্যাব ও পুলিশ। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দলও প্রস্তুত রয়েছে। পান্থপথ মোড় থেকে নূর টাওয়ার পর্যন্ত রাস্তা বন্ধ করে যানবাহনসহ সর্বসাধারণের চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
×