ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আলিয়ঁসে দুই দিনব্যাপী গ্রীষ্মের কবিতা উৎসব

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২৯ মে ২০১৫

আলিয়ঁসে দুই দিনব্যাপী গ্রীষ্মের কবিতা উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ফরাসী শব্দ ‘লে’তে দ্যু পোয়েত’। বাংলায় বাক্যটির অর্থ দাঁড়ায় ‘কবির গ্রীষ্ম’। আর এই শিরোনামকে উপজীব্য করে ফরাসী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে শুরু হলো গ্রীষ্মের কবিতা উৎসব। বৃহস্পতিবার জ্যৈষ্ঠের বিকেলে দুই দিনের উৎসবের সূচনা হয় আলিয়ঁসের লা গ্যালারিতে। রাত পর্যন্ত চলে কবিতাকেন্দ্রিক চমৎকার এই উৎসবটি। কবিকণ্ঠে কাব্যের দোলায়িত ছন্দের অনুরণনে স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে পড়ে আয়োজনজুড়ে। আবৃত্তির সঙ্গে ছিল কবিতা নিয়ে কবি ও বিশিষ্টজনদের ভাবনার প্রকাশ। উঠে আসে কবিতার কাঠামোসহ যাপিত জীবনে কাব্যের প্রয়োজনীয়তা কিংবা প্রভাবসহ নানা বিষয়। ফ্রান্স ও কানাডার কেবেক এ ১৯৯৯ সাল থেকে সংঘটিত অনুরূপ নামের একটি কবিতা উৎসব দ্বারা এ উৎসবটি অনুপ্রাণিত হয়েছে। এ উৎসবের মূল উদ্দেশ্য কবিতা এবং সংশ্লিষ্ট অভিব্যক্তির উদ্যাপন। কবিতা কেন জীবন্ত অথবা সচল এবং কী ভাবে প্রভাবিত হয় বা প্রভাবিত করে, মানুষ কী করে কবিতা থেকে অফুরন্ত শক্তি আহরণ করে এবং কবিতা কী ভাবে অন্বেষণকারীর পাথেয় হয়Ñ এমন সব আলোচ্য বিষয় যুক্ত হয়েছে উৎসবে। উৎসবের প্রথম দিনের সূচনা অধিবেশনে ‘বঙ্গসাহিত্যে ফরাসী সাহিত্যের অনুভাব’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক কায়সার হক। আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, সবাচ্য লেখক ও কবি সৈয়দ শামসুল হক এবং অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন আলিয়ঁসের পরিচালক ব্রুনো প্লাস। কবিতাকেন্দ্রিক নিজ জীবনের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে আলোচনা শুরু করেন সৈয়দ শামসুল হক। মজার তথ্য তুলে ধরে বলেন, অনেকেই আমাকে জিজ্ঞাসা করেÑ কবিতা কোন কাজে লাগে? সেই প্রশ্নের উত্তরের সন্ধানে কিছুদিন আগে চন্দ্রিমা উদ্যানের পাশ দিয়ে হাঁটছিলাম। দেখলাম একটি ছেলে এটি মেয়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। লক্ষ্য করলাম ছেলেটি হাতে একটি বই। সেটা থেকে সে পড়ে যাচ্ছে আর মেয়েটি মনোযোগ দিয়ে শুনছে। উৎসাহ নিয়ে সামনে গিয়ে দেখলাম আমার একটি কবিতার বই পড়ছে ওই প্রেমিক ছেলেটি। তখনই প্রশ্নের খুঁজে পেলাম। সেটি হচ্ছে, কবিতার আশ্রয়ে মানুষে মানুষে সৃষ্টি হয় সেতুবন্ধন। এভাবেই সংকেতে, ইঙ্গিতে বা অপ্রকাশ্যে কাজ করে কবিতা। একটি বদলে ভাল কবিতা পড়ে কিছুটা হলেও আমরা বদলে যাই। নজরুলের ‘বল বীর চির উন্নত মম শির’ কবিতার এই চরণটি শুনলে কুঁজো লোকটিও একটি হলেও সোজা হয়ে বসে। তাই কবিতার শৈল্পিক উচ্চারণে আমরা বদলে যাই, সরে যাই কিংবা অন্যরকম হয়ে যাই। বাংলা সাহিত্যে ফরাসী সাহিত্যের প্রভাব প্রসঙ্গে এই কবি বলেন, মূলত ফরাসী ভাষার কবিতার সঙ্গে আমাদের তেমনভাবে প্রত্যক্ষ পরিচয় ছিল না। সখ্য ছিল ফরাসী গদ্যের সঙ্গে। মূলত আমাদের চিত্রকলায় অনেক বেশি ফরাসী প্রভাবের সন্ধান মেলে। তবে ফরাসী কবি শার্ল বোদলেয়ারের কবিতা আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। সেই অনুপ্রেরণার একজন কবি হচ্ছেন শিকদার আমিনুল হক। বক্তব্য শেষে তিনি নিজের অনূদিত ‘আয়নার সমুখে এসে’ শিরোনামের একটি ফরাসী কবিতা পাঠ করেন। বক্তব্যের শুরুতেই মজা করে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, আমি কবিও নই, সমালোচকও নেই। একটু আগে সৈয়দ শামসুল হক জিজ্ঞেস করছিল, আমি কী করতে এখানে এসেছি। তাঁকেই বলেছি, কিছুই না, এমনি এমনি এসেছি। এরপর আলোচনায় ফিরে তিনি বলেন, গিরীশ চন্দ্র রেঘাষ বোদলেয়ারের বেশ কিছু কবিতার অনুবাদ করেছেন। বুদ্ধদেব বসুর অনূদিত বোদলেয়ারের কবিতা এই ভূখ-ের মানুষের মাঝে অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। যতীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই ফরাসী কবির কবিতার অনুবাদ করেছেন। আর বিংশ শতাব্দীতে ফরাসী লেখকদের মধ্যে ভিক্টর হুগো আমাদের প্রভাব সঞ্চার করেছিল। একইভাবে সমাদৃত হয়েছে মোপাসার ছোটগল্প। সেই হিসেবে ফরাসী সাহিত্যের এদেশের বিশেষ যোগ আছে। আলোচনা শেষে সন্ধ্যায় শুরু হয় কবিতাপাঠের আসর। নিজেদের প্রিয় কবিতাটি পাঠ করে শোনান কবিরা। কবিতা পড়ার এ আয়োজনে অংশ নেন আসাদ চৌধুরী, মুহম্মদ নুরুল হুদা, অধ্যাপক ইফফাত আরা নাসরীন মজিদ, মইনুদ্দীন খালেদ, মফিদুল হক প্রমুখ। এছাড়াও উৎসবে ছিল ‘কবিতা এয়ারলাইন্স’ শীর্ষক একটি প্রদর্শনীর। এতে ধরনের ইনস্টলেশনের মাধ্যমে কাব্যানুরাগীদের স্বরচিত এবং প্রিয় কবিতা আর তাদের গভীরের গল্পগুলোকে তুলে ধরা হয়। ২০১৪ সালে ক্যানাডায় নির্মিত তথ্যচিত্র ‘ইফ দা পোয়েট’ যেখানে ইয়ান ফ্রেঞ্চ নামক একজন মধ্যবয়স্ক ব্যক্তির প্রতিযোগিতামূলক কবিতা সø্যামের বিজয়ী হবার গল্প বলা হয়েছে, তার বিশেষ প্রদর্শনী এ উৎসবের অংশ হিসেবে আয়োজন করা হয়। এছাড়াও অনুষ্ঠিত হয় কবিতা নিয়ে ছোট্ট এবং মজার একটি সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন-জিজ্ঞাসার আসর। আজ শুক্রবার উৎসবের দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম শুরু হবে বিকেল ৫টায়। এদিন কবিতাবিষয়ক আয়োজনের সঙ্গে থাকবে গায়ক, গীতিকার ও সুরকার সায়ান এবং ব্যান্ডদল মণোসরণীর সঙ্গীত পরিবেশনা । স্পেনের শিল্পী ভিক্টর মঙ্গের গিটারসন্ধ্যা আজ ॥ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় আজ শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় পরিবেশিত হবে স্পেনের প্রখ্যাত গিটারশিল্পী ভিক্টর মঙ্গের একক গিটারসন্ধ্যা। সিরানিত শীর্ষক এ যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশনাটি যৌথভাবে আয়োজন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের স্পেনের ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগের সমন্বয়কারী আমপারো পোর্তা রিভাস এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন শিল্পী ভিক্টর মঙ্গ ও তাঁর দলের সদস্যসহ আয়োজক সংস্থার প্রতিনিধিরা। সংবাদ সম্মেলনে শিল্পী ভিক্টর মঙ্গে বলেন, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে ফ্লেমেনকোর অন্যরকম আবেদন আছে সারা পৃথিবীর দর্শকের কাছে। আমরা ফ্লেমেনকোর এমন কিছু পরিবেশনা দর্শকের সামনে তুলে ধরব যা দর্শকদের দারুণভাবে আমোদিত করবে। আমার পরিবেশনায় প্রতিটি পর্যায়ে দর্শক ও আমার নিজের দ্বারা অনুপ্রাণিত হই। প্রসঙ্গত, এই শিল্পী বহু বছর ধরে ফ্লেমেনকোকে একটি চমৎকার শিল্পে রূপান্তর করার জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। আরও কয়েকজন সারথির সঙ্গে দীর্ঘদিনের সংগ্রাম ও সাধনা চালিয়ে আসছেন। দুই কবি স্মরণে সঙ্গীতাসর প্রাণের খেলা ॥ বাংলাদেশের মনন ও জীবনে প্রাণস্ফূর্তিতে প্রাসঙ্গিক দুই কবিকে স্মরণ করে ‘প্রাণের খেলা’ শীর্ষক দুটি সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। ধানমি-র বেঙ্গল শিল্পালয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হলো প্রথম পর্ব। এদিন সুললিত কণ্ঠের মায়াজালে নজরুলের গান শোনান শারমিন সাথী ইসলাম ও ইয়াকুব আলী খান। ইয়াকুব আলী খান পরিবেশিত গানগুলোর শিরোনাম ছিলÑ খেলিছে এ বিশ্ব লয়ে বিরাট শিশু, তুমি কোন্ পথে এলে হে মায়াবী কবি, হে প্রিয় তোমার আমার বিরহ, এ কি অসীম পিয়াসা, নয়নে নিদ নাহি, আসলো যখন ফুলের ফাগুন, পিয়া স্বপনে এসো নিরজনে, আমার কোন্ কুলে আজ ভিড়লো তরী, বঁধু তোমার আমার এই যে বিরহ ও একি অপরূপ। শারমিন সাথী ইসলাম গেয়ে শোনানÑ পাষানের ভাঙালে ঘুম, তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয়, বনে বনে দোলা লাগে, এ কোন মায়ায় ফেলিলে আমায়, সৃজন ছন্দে আনন্দে, কেন কাঁদে পরান, সন্ধ্যা গোধূলি লগনে, আবার ভালবাসার সাধ জাগে, দীপ নিভিয়াছে ঝড়ে, ওরে নীল যমুনার জল, আমি কুল ছেড়ে চলিলাম ভেসে, হে প্রিয় আমারে দিবনা ভুলিতে, যারে হাত দিয়ে মালা দিতে পার ও মোর ঘুম ঘোরে এলে মনোহর। দ্বিতীয় প্রাণের খেলা অনুষ্ঠানে থাকবে রবীন্দ্রনাথের গানের পরিবেশনা। আগামী ৯ জুন অনুষ্ঠিত ওই সঙ্গীতানুষ্ঠানে গাইবেন মহিউজ্জামান চৌধুরী ও শামা রহমান। নজরুলজয়ন্তীর আবৃত্তিসন্ধ্যা অগ্নিঝরা রুদ্রবীণা ॥ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হলো রুদ্রবীণা অগ্নিঝরা শীর্ষক আবৃত্তিসন্ধ্যা। এটি ছিল নজরুলের কবিতা নিয়ে সংবৃতা আবৃত্তি চর্চা ও বিকাশ কেন্দ্রের দ্বাদশতম আবৃত্তি প্রযোজনাটির দ্বিতীয় মঞ্চায়ন। আবৃত্তি পরিবেশনায় নজরুলের লেখা ২৩টি কবিতা দৃশ্যকল্পের পরম্পরায় উপস্থাপন করা হয়। আবৃত্তি প্রযোজনাটির সেøাগান ছিল ‘কভু প্রশান্ত, কভু অশান্ত দারুণ স্বেচ্ছাচারী/আরুণ খুনের তরুণ, আমি বিধির দর্পহারী’। আরুণ আরিফের গ্রন্থনা এবং এ কে এম সামছুদ্দোহার নির্দেশনায় অনুষ্ঠানাটিতে একক ও দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করেন তরুণ আবৃত্তি শিল্পীবৃন্দ। মানুষ, নারী, ঈশ্বর, সাম্যবাদী, বাংলাদেশ, অভিযানসহ জাতীয় কবির বিভিন্ন বিখ্যাত কবিতা আবৃত্তি করেন সংবৃতার আবৃত্তি শিল্পীরা। কবিতার শিল্পিত এ উচ্চারণে এ কে এম সামছুদ্দোহা, শামছি আরা, লাবন্য শিল্পী, হ্যাপী আকতার, কাকন জামান, হাম্মাদ সোহাগসহ বেশ কয়েকজন আবৃত্তিশিল্পী আবৃত্তি পরিবেশন করেন।
×