ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ড. ইউনূসের তিন শূন্য তত্ত্ব

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৯ মে ২০১৫

ড. ইউনূসের তিন শূন্য তত্ত্ব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবার তিন শূন্য ও চার মহাশক্তির তত্ত্ব দিলেন। পৃথিবীকে বসবাস উপযোগী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এ তত্ত্ব প্রদানকালে তিনি বলেন, আমাদেরকে তিন শূন্যের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হবে। দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও কার্বন নিঃসরণ শূন্য মাত্রায় নিয়ে আনতে পারলেই বিশ্ব এগোবে। আর এ লক্ষ্য অর্জনে চারটি মহাশক্তি আমাদের পক্ষে কাজ করছে। তারুণ্য, প্রযুক্তি, সুশাসন ও সামাজিক ব্যবসা তিন শূন্য অর্জনে চারটি বড় মহাশক্তি। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘সামাজিক ব্যবসা দিবস-২০১৫’ উদযাপনকালে প্রধান বক্তার বক্তৃতায় তিনি এ তত্ত্ব দেন। দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য ছিল ‘আমরা চাকরি প্রার্থী নই, আমরা চাকরিদাতা’। বক্তৃতাকালে ড. ইউনূস বলেন, প্রতিটি মানুষকে তার সৃজনশীল ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হবে। চাকরি দেয়া ও চাকরি করা বিষয়টি আমাদের মধ্যে একটি ভুল ধারণার সৃষ্টি করেছে। চাকরি না করে, চাকরিদাতা হিসেবে নিজের সৃজনশীল ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হবে। এ সময় তিনি বলেন, আয় বৈষম্য শুধু আয় বৈষম্য-ই নয়, সম্পদের বৈষম্যও বটে। এ পৃথিবীতে কারও কারও সম্পদের পাহাড় অথচ কেউ কেউ সম্পদ থেকে নিগৃহীত। সমাজের এ বৈষম্য দূর করতে সৃজনশীল ক্ষমতা প্রয়োগের বিকল্প নেই। ড. ইউনূস বলেন, প্রতি ১২ বছরে বিশ্বে ১০০ কোটি জনসংখ্যা বাড়ছে। সম্পদ সীমিত হওয়ায় অতীতে আমরা যেভাবে চলেছি, বর্তমানে আর সেভাবে চলার উপায় নেই। আগের চিন্তাধারা থেকে নতুন চিন্তাধারায় প্রবেশ করতে হবে। সমাজ ও বিশ্বকে এগিয়ে নিতে টেকসই উন্নয়ন করার বিকল্প নেই। সমাজকে উন্নয়নে টেকসই চিন্তাভাবনা করতে হবে। তিন শূন্য ও চার মহাশক্তির প্রভাব বাস্তবে কাজে লাগাতে পারলে তা নতুন পৃথিবী সৃষ্টিতে সহায়তা করবে। কারণ পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষমতা রাখে। তিনি ওই অনুষ্ঠানে আরও বলেন, বর্তমানে তরুণরা চাকরির জন্য হা-পিত্যেশ করেন। কিন্তু কেন। তারা অন্যের চাকরি না করে নিজেই আরেকজনকে চাকরি দেয়ার সুযোগ তৈরি করবেন। আমাদের সঙ্গে যারা রয়েছেন, যারা আসবেন, তারা আমাদের ঋণগ্রহীতা নন, তারা আমাদের অংশীদার। তিনি আরও বলেন, শিশুদের জন্য ভবিষ্যতের জীবিকার নিশ্চয়তা তৈরি করতে হবে। কিভাবে কোন পথে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আসবে তা নিয়ে আমরা কথা বলছি। আমরা টেকসই সমাজের কথা বলছি। আমরা আমাদের চিন্তাকে প্রয়োজনে নতুন করে সাজাব। কেন কেউ কাজ না করে বসে থাকবে। মনে রাখতে হবে, বেকারত্ব শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়, এ সমস্যা ইউরোপেও রয়েছে। যেখানেই যে কাজ করতে চাইবে, তার জন্য সুযোগ রয়েছে বলেও যোগ করেন তিনি। ড. ইউনূস এ সময় আরও বলেন, পৃথিবীতে মোট সম্পদের ৫০ ভাগ মাত্র ৮৫ জন লোকের হাতে রয়েছে। আর বাকি ৫০ ভাগ সম্পদের মালিক অবশিষ্ট জনগণ। তাই সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে আমাদের বেশি বেশি উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে। এ জন্য বিশ্বব্যাপী সামাজিক ব্যবসার ধারণাটি ছড়িয়ে দিতে হবে। সামাজিক ব্যবসার এ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেন, উদ্যোক্তা ও সামাজিক উদ্যোক্তাদের সমর্থন দেয়া আমাদের পররাষ্ট্র দফতরের লক্ষ্যগুলোর অংশ। এ লক্ষ্যে ২০১৭ সালের মধ্যে এক হাজার কোটি ডলার সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ওই তহবিলের অর্থ দিয়ে নারী ও তরুণ উদ্যোক্তাদের সমর্থন দেয়া হবে। অগ্রণী এ উদ্যোক্তারা উন্নয়নশীল দেশগুলোর অভাবী মানুষদের সামাজিক সুবিধা নিশ্চিত করবে। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আগত গ্রামীণ ব্যাংকের ৮ জন নারী সদস্য ওই অনুষ্ঠনে অংশ নেন। এদের অনেকেই বর্তমানে নানা ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন। বিশ্বের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখা একাধিক উদ্যোক্তা ওই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তাদের জীবনের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। এছাড়া বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দিনভর সেমিনার, উদ্যোক্তাদের নানা পণ্য নিয়ে মেলাও অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের ব্র্যাক সেন্টারসহ বিশ্বের বহু দেশে দিবসটি উপলক্ষে নানা আয়োজন ছিল বলেও জানা যায়। ঢাকায় নানা আয়োজনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনসহ বিশ্বের স্বনামধন্য একাধিক ব্যক্তি ভিডিও বার্তা পাঠান। অনুষ্ঠানে বিশ্বের অন্তত ৩০ টি দেশের ২৫০ জন প্রতিনিধি অংশ নেন। প্রতিবছর ২৮ জুন ড. ইউনূসের জন্মদিনে দিবসটি পালিত হয়ে আসলেও এ বছর রমজান উপলক্ষে তা এক মাস এগিয়ে নিয়ে আসা হয়। সামাজিক ব্যবসা দিবসের ওই অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন ও ঢাকা সফরকারী মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা শরিফা হাফসা।
×