বিডিনিউজ ॥ উন্নয়ন কাজে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী আরও ব্যাপকভাবে অংশ নেবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাম্প্রতিক বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করে বৃহস্পতিবার ঢাকা সেনানিবাসে সেনাবাহিনীর জেনারেলস কনফারেন্সে বক্তব্যে এই প্রত্যাশা প্রকাশ করেন সরকারপ্রধান, যিনি একইসঙ্গে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বেও রয়েছেন।
শেখ হাসিনা বক্তব্যে জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করা, ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ, হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রানওয়ে উন্নয়ন, রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী স্মৃতি সৌধের সৌন্দর্য বর্ধনসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে সেনাবাহিনীর কাজের প্রশংসা করেন। এসব উন্নয়নমূলক কাজের মাধ্যমে সেনাবাহিনী জনগণের আস্থা অর্জন করেছে। এ ধরনের জাতীয় উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে আপনাদের সম্পৃক্ততা জাতি আরও ব্যাপকভাবে প্রত্যক্ষ করবে বলে আমি আশা রাখি, বলেন তিনি।
পেশাগত উৎকর্ষের কারণে পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজের তদারকিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বভার সেনাবাহিনীর ওপর দেয়ার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা জেনারেলদের উদ্দেশে বলেন, “জাতীয় ও জনগুরুত্ব¡পূর্ণ এই দায়িত্ব সেনাবাহিনী অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে সম্পন্ন করবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।”
সেনাসদর কনফারেন্স কক্ষে এই অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূইয়াসহ বাহিনীর উর্র্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন ভাতা পুনঃনির্ধারণের লক্ষ্যে বেতন ও চাকরি কমিশন গঠনের ধারাবাহিকতায় সশস্ত্র বাহিনীর বেতন কমিটি ইতোমধ্যে তাদের প্রস্তাব পেশ করেছে, যা বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী।
“পারিপার্শ্বিক সীমাবদ্ধতা বিবেচনা করে সেনাবাহিনীর দেয়া বেতন কাঠামো যত দূর সম্ভব বাস্তবায়ন করা হবে।” আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের গত দুই মেয়াদে সেনাবাহিনীর অবকাঠামো খাতে ‘যুগান্তকারী’ উন্নয়নের কথাও বক্তব্যে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
“আমাদের সরকারের তৃতীয় মেয়াদেও সেনাবাহিনীর অবকাঠামোগত উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে পদ্মার পাড়ে আরও একটি পদাতিক ডিভিশন প্রতিষ্ঠার বিষয় আমাদের সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে।”
তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে আন্তর্জাতিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে সেনাবাহিনীকে ঢেলে সাজাতে সরকারের নেয়া উদ্যোগগুলোও তুলে ধরেন তিনি।
সরকারপ্রধান হিসেবে গত দুই মেয়াদে আমি আমার সাধ্য মোতাবেক সেনাবাহিনীকে আধুনিকায়ন করার চেষ্টা করেছি, যাতে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সেনাবাহিনী মাথা উঁচু করে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হয়।
উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যেই সেনাবাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে বলেও শেখ হাসিনা মন্তব্য করেন। সেনাবাহিনীকে আরও কার্যক্ষম ও যুগোপযোগী করতে প্রচুর অত্যাধুনিক যুদ্ধসরঞ্জাম সংযোজনের কথাও বলেন তিনি।
রাশিয়ার এক বিলিয়ন ডলার সামরিক ঋণ প্রটোকলের আওতায় ছয়টি এমআই-১৭১ হেলিকপ্টার, ৩৩০টি এপিসি এবং ১০টি আর্মার্ড রিকভারি ভেহিকেল কেনার চুক্তি ইতোমধ্যেই সম্পাদিত হওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সমরাস্ত্রগুলোর প্রথম চালান ২০১৬ সালের শেষ নাগাদ সেনাবাহিনীর বহরে যুক্ত হবে।
১৭৪টি টি-৫৯ ট্যাঙ্কের উন্নীতকরণও প্রক্রিয়াধীন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
সেনাবাহিনীকে স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমপিএফ) এবং বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানার সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠনের কথাও বলেন তিনি।
বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানায় বিদেশী প্রযুক্তির পাশাপাশি নিজস্ব উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আর্মস এবং এ্যামুনিশন প্রস্তুত করা হচ্ছে।
৬০ মিলিমিটার মর্টার, ৮২ মিলিমিটার মর্টার এবং মর্টার শেলের পরীক্ষামূলক উৎপাদন সফল হওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, মিসাইল এ্যাসেমব্লিং প্লান্ট, এক্সপ্লোসিভ টেসটিং ল্যাব, বুলেট প্রুফ জ্যাকেট প্রস্তুতকরণ প্লান্ট এবং এপিসি ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্ট প্রস্তুতের কাজ প্রক্রিয়াধীন। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে সমরাস্ত্র কারখানা অত্যাধুনিক বিমান বিধ্বংসী মিসাইল এফএন-১৬ তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যা খুব তাড়াতাড়ি বাস্তবে রূপ নেবে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের আবাসনের উন্নয়নে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর অফিসারদের জন্য জলসিঁড়ি আবাসন প্রকল্পের কাজও উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এবং ইতোমধ্যে ছয় হাজার ৬৫টি প্লট অফিসারদের হস্তান্তর করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তাদের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে বলেন, “উর্ধতন নেতৃত্বের প্রতি আস্থা, পারস্পরিক বিশ্বাস, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ, কর্তব্যপরায়ণতা, দায়িত্ববোধ এবং সর্বোপরি শৃঙ্খলা বজায় রেখে আপনারা স্বীয় কর্তব্য সম্পাদনে একনিষ্ঠভাবে কাজ করবেন।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: