ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আবারও কলঙ্কিত ফিফা

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ২৮ মে ২০১৫

আবারও কলঙ্কিত ফিফা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শুক্রবার ফিফা সভাপতি পদে নির্বাচন। এ নিয়ে এখন তোড়জোড়া ফিফার সদর দফতর সুইজারল্যান্ডের জুরিখ। শেষ মুহূর্তের প্রচার ব্যস্ত প্রার্থীরা। ভোটের খেলায় কে কাকে হারাবেন তা নিয়ে অধীর আগ্রহ। কিন্তু আচমকা এক ঘটনায় সবই যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে। আবারও ফিফার বিরুদ্ধে উঠেছে দুর্নীতি আর অনিয়মের অভিযোগ। এবার যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগের ভিত্তিতে আটক করা হয়েছে ফিফার উচ্চপর্যায়ের নয় কর্মকর্তাকে। বুধবার সুইজারল্যান্ডের পুলিশ হোটেল থেকে তাদের গ্রেফতার করেছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। এদের মধ্যে ফিফার দু’জন ভাইস-প্রেসিডেন্টও আছেন। পাশাপাশি অভিযুক্ত হয়েছেন আরও পাঁচজন। দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্তদের যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গ্রেফতার হওয়া নয় ক্ষমতাধর কর্মকর্তা হলেনÑ ফিফার সহসভাপতি জ্যাক ওয়ার্নার, কনমেবল (ল্যাতিন আমেরিকা), সাবেক ফিফা কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নিকোলাস লিওজ, ব্রাজিল ফুটবল কনফেডারেশনের সভাপতি জোশে মারিয়া মারিন, কোস্টারিকা ফুটবল এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এডুয়ার্ডে লি, ভেনেজুয়েলা ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি রাফায়েল এসকুইভেল, কনক্যাকাফ সভাপতি জেফরি ওয়েব, কনমেবলসহ সভাপতি ইগুইনো ফিগুয়েরেডো, ফিফার ডেভেলপমেন্ট অফিসার জুলিও রোচা ও কনকাকাফ অঞ্চলের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য কোস্টাস টাক্কাস। ফিফার শীর্ষ এই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ দায়ের করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ। এমন খবর চাউর হয় আগেই। ওই খবরেই ফিফার শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের বিষয়ে সুইস সরকারের সবুজ সংকেত পাওয়ার বিষয়টি জানিয়েছিল জুরিখ পুলিশ। ফিফা কর্মকর্তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে মার্কিন বিচার বিভাগের অনুরোধেই। শুক্রবারের নির্বাচনে চতুর্থবারের মতো ফিফা সভাপতি হওয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন সেপ ব্লাটার। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জর্দানের প্রিন্স আলী বিন আল হুসেইন। পর্তুগালের সাবেক তারকা ফুটবলার লুইস ফিগো নির্বাচনে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেও সরে দাঁড়িয়েছেন শেষ মুহূর্তে। এই নির্বাচন ঘিরে বার্ষিক সভায় মিলিত হওয়ার জন্য সুইজারল্যান্ডের জুরিখে জড়ো হয়েছিলেন ফিফার উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা। কিন্তু কোন রকম ঘোষণা না দিয়ে একটি পাঁচতারা হোটেল থেকে অভিযুক্তদের আটক করেছে সাদা পোশাকের সুইস পুলিশ। গত দুই দশকে বহু দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে ফিফার বিরুদ্ধে। বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়ার প্রতিযোগিতা, বিপণন ও সম্প্রচার স্বত্ব, টাকা পাচার ইত্যাদি বিষয়ে নয়-ছয় করেছেন বলে অভিযোগ ফিফার ক্ষমতাশালী নির্বাহী কমিটির বিরুদ্ধে। বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবার বড় ধরনের ঝামেলাতেই পড়ল। সুইজারল্যান্ডের বিচার বিভাগ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিভিন্ন সময় ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে তাদের ওপর তদন্ত করছিল যুক্তরাষ্ট্র। ফিফার প্রতিনিধি ও ফিফার অন্যান্য সহ-সংগঠনের কয়েকজন কর্মকর্তাকে ১০ কোটিরও বেশি ডলার ঘুষ দিয়েছে খেলাধুলাবিষয়ক গণমাধ্যম ও খেলাধুলা প্রসারে নিয়োজিত কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বিশেষভাবে তদন্ত করেছে কনকাকাফ অঞ্চল নিয়ে। উত্তর, মধ্য আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চল নিয়ে গঠিত ফিফার এই কনফেডারেশনের সাবেক প্রধান জ্যাক ওয়ার্নারের বিরুদ্ধে বেশকিছু দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু ২০১১ সালে তিনি সরে দাঁড়ানোর পর থেমে যায় দুর্নীতির তদন্তও। ২০১৮ ও ২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজক নির্বাচনের সময়ও অনিয়ম করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল ফিফার বিরুদ্ধে। ২০১৮ সালে রাশিয়া ও ২০২২ সালে কাতারে হবে ফুটবল বিশ্বকাপ। এর পরিপেক্ষিতে একজন স্বাধীন তদন্ত কর্মকর্তাও নিয়োগ দিয়েছিল ফিফা। সেই তদন্ত প্রতিবেদনেও ছিল কিছু অনিয়মের কথা। এমন কা- নিয়ে সভাপতি প্রার্থী প্রিন্স আলী বিন আল হুসেইন বলেছেন, ফিফার কর্মকার্তাদের গ্রেফতারের বিষয়টি ফুটবল দুনিয়ায় কালো দিন হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে থাকবে। দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে ফিফার শীর্ষ কর্মকর্তাদের আটক করার পর ২০১৮ ও ২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজক নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে জুরিখে ফিফার সদর দফতরে পুলিশ হানা দিয়ে জব্দ করেছে বেশকিছু নথিপত্র। পুলিশ অভিযান চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামিতে অবস্থিত উত্তর, মধ্য আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চল নিয়ে গঠিত কনকাকাফ কনফেডারেশনের সদর দফতরেও। কলঙ্কিত এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বুধবারই জরুরী বৈঠক করেছে ফিফা। সেখানে ফিফার এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, পুরো ঘটনার তদন্ত করা হবে। আর বর্তমান সভাপতি সেপ ব্লাটার না কি স্বস্তিতে আছেন। তিনি না কি এসবের সঙ্গে জড়িত নন এমন জানিয়ছেন এক মুখপাত্র!
×