ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নারীর পোশাক বিতর্ক ॥ হলিক্রসের দুঃখ প্রকাশ

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ২৮ মে ২০১৫

নারীর পোশাক বিতর্ক ॥ হলিক্রসের দুঃখ প্রকাশ

বিডিনিউজ ॥ যৌন নিপীড়নের জন্য নারীর পোশাকের দিকে ইঙ্গিত করে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরির ঘটনায় ‘দুঃখ’ প্রকাশ করেছেন রাজধানীর খ্যাতনামা স্কুল হলিক্রস উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিস্টার রানী ক্যাথরিন গোমেজ। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বিষয়টা অসাবধানবশত হয়েছে। আরও গভীরে আমাদের চিন্তা করা উচিত ছিল।” যে শিক্ষক ওই প্রশ্নপত্র তৈরি করেছেন, তিনি নিজেও এ ‘ভুলের জন্য’ দুঃখ প্রকাশ করেছেন বলে জানান প্রধান শিক্ষক। “ভুল যা হয়েছে সেটা স্বীকার করাই উচিত। সৃজনশীল প্রশ্ন করার জন্য আমরা ট্রেনিং পাই। যে শিক্ষক এই প্রশ্ন করেছেন উনি স্যরি বলেছেন। উনি অনুতপ্ত। ভবিষ্যতে এ রকম করা হবে না বলে তিনি লিখিত দেবেন।” হলিক্রস উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর প্রথম সাময়িকীর ইসলাম ধর্ম (সৃজনশীল) পরীক্ষা হয় গত সোমবার। ৫০ নম্বরের প্রশ্নপত্রের ৫ নম্বর প্রশ্নে নারীকে অবমাননা এবং নারীর পোশাককে উদাহরণ টেনে নারীর প্রতি সহিংসতা উস্কে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। ৫ নম্বর প্রশ্নে বলা হয়েছে, “সানজিদার চালচলন, বেশভূষা ও কথাবার্তায় বেশ মার্জিত সবাই তার সাথে সদাচরণ করে। অপরপক্ষে তার সহপাঠী রুমানা আঁটসাঁট পোশাক পরে। তাই সে গেঞ্জি ও জিন্সের প্যান্ট পরে প্রতিবছর বৈশাখী মেলাসহ বিভিন্ন মেলায় অংশ গ্রহণ করে। মাঝে মধ্যে সে অনেক সমস্যায় পড়ে, তার কথাবার্তা চালচলন মার্জিত নয়। পাড়ার ছেলেরা অনেক সময় তাকে উত্ত্যক্ত করে। এ বছর বৈশাখী মেলায় ঘটে যাওয়া বিষয় সম্পর্কে রুমানা সানজিদাকে জানালে সানজিদা তাকে পোশাক পরিচ্ছদে শালীনতা অবলম্বনের পরামর্শ দেয়।” ক. শালীনতা কী? ১ খ. রুমানা পোশাক পরিচ্ছদে শালীনতা অবলম্বন করবে কেন? ব্যাখ্যা কর। ২ গ. সানজিদাকে অনুসরণ করে আমরা কিভাবে সামাজিক অবক্ষয় থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারি? ব্যাখ্যা কর। ৩ ঘ. সুস্থ, সুন্দর সমাজ গঠনে শালীনতার তাৎপর্য ও গুরুত্ব কুরআন-হাদীসের আলোকে বিশ্লেষণ কর। ৪ বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের ছয়টি সেকশনের শিক্ষার্থীরা এই প্রশ্নপত্রে পরীক্ষায় অংশ নেন। ওই প্রশ্ন পাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তিতে পড়ে এই বালিকা বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী। বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে সাম্প্রতিক যৌন নিপীড়নের ঘটনার পর একটি নামী স্কুলের পরীক্ষায় এ ধরনের প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে অনেকেই কর্তৃপক্ষের সমালোচনায় মুখর হন। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে মঙ্গলবার ওই প্রশ্ন নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ও বেসরকারী সংস্থা গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এ ধরনের শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের মনে দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু বক্কর ছিদ্দিকও বলেন, “এটি একটি সেনসেটিভ বিষয়। এ ধরনের বিষয় প্রশ্নপত্রে পরিহার করাই ভালো।” হলিক্রসের প্রধান শিক্ষক ক্যাথরিন গোমেজ বুধবার নিজের কার্যালয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যখন প্রশ্ন দেখলাম, ওই মুহূর্তে এত গভীরভাবে ফিল করিনি। পরীক্ষার পর মেয়ে কিংবা অভিভাবকরাও কিছু বলেননি। আপনাদের রিপোর্ট দেখে টিচারদের সঙ্গে আজ এ নিয়ে এ্যানালাইসিস হয়েছে। (প্রশ্নটি) আর একটু অন্যভাবে করলে ভাল হতো।” প্রধান শিক্ষক দাবি করেন, বাঙালী সংস্কৃতিকে তুলে ধরাই এ প্রশ্নের মূল উদ্দেশ্য ছিল। “আমরা বৈশাখী মেলার বাঙালি সংস্কৃতি তুলে ধরার কথা ভেবেছি। কিন্তু প্রশ্নে যেভাবে এসেছে বাকিটা খেয়াল করিনি। আরও গভীরে আমাদের চিন্তা করা উচিত ছিল। মেয়েরা যদিও বলেনি, কিন্তু আমরা মেয়েদের ডেকে বিষয়টি তুলে ধরবে।”
×