ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সামাজিক নিরাপত্তা

প্রকাশিত: ০৪:২০, ২৮ মে ২০১৫

সামাজিক নিরাপত্তা

বাংলাদেশে অতীতের তুলনায় দারিদ্র্যের হার কমেছে। দারিদ্র্য বিমোচনের ধারা অব্যাহত রয়েছে এমন ইতিবাচক সংবাদও পাওয়া যায় আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য বিমোচন বিষয়ক বিভিন্ন ধারণা সূচকে। বিশ্বে মধ্যম আয়ের দেশ বহু থাকলেও ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্য এখনও বিদ্যমান। এমনকি পার্শ্ববর্তী ভারত মধ্যম আয়ের দেশ হলেও সেখানে এখনও ৪০ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে। সেই দিক বিবেচনায় দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে মডেল। যার সূচনা প্রায় দেড় যুগ আগে। অদক্ষ, অসচ্ছল, অসহায়, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত নারী, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী, পঙ্গু, মুক্তিযোদ্ধা এবং অত্যন্ত দরিদ্র ও নিঃস্ব মানুষের কল্যাণে রাষ্ট্রের যে কিছু করণীয় আছে সেটা এদেশে সত্যিকার অর্থে প্রথম উপলব্ধি করেন শেখ হাসিনা। ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় এসেই তিনি সেই লক্ষ্যে সামাজিক নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। সে সময়ই তিনি বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, স্বামী পরিত্যক্তদের জন্য ভাতা, গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প চালু করেন, যা গ্রাম থেকে শুরু হয়। ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার পর তার প্রবর্তিত সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বাড়িয়ে দেশকে একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্র গড়ার উদ্যোগ নেন। একটি বাড়ি একটি খামার, অতিদরিদ্রদের জন্য ভিজিডি-ভিজিএফ কার্ড, মাতৃত্বকালীন কোটায় উপকারভোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি, হিজরাদের তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি এবং তাদের জীবনমানের উন্নয়নে নানা উদ্যোগসহ বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সহায়তার ক্ষেত্রই শুধু বাড়াননি, বাড়িয়েছেন অর্থের পরিমাণও। এবার এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ‘স্বপ্ন’ নামে নারীদের ভাগ্যবদলে একটি প্রকল্প। ৬৫ হাজার নারীর কর্মসংস্থানে ইউএনডিপির আর্থিক সহযোগিতায় এই প্রকল্পটি হাতে নেয়া হচ্ছে। যা বাস্তবায়নের দায়িত্ব স্থানীয় সরকার বিভাগের। তবে একথা সত্য যে, দ্রুতহারে দারিদ্র্য কমে এলেও এখনও চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে একটি অংশ। বলা হয় দেশের একটি বড় অংশ দারিদ্র্যের ফাঁদে বন্দী। দেশে পিছিয়ে থাকা এমন ২২টি জেলার ১ হাজার ৩০টি ইউনিয়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। বিশেষ করে উপকূলীয় ও চরম দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকায় বিশেষ এই কর্মসূচী পরিচালনা করা হবে। বছরের যে সময়টায় কোন কাজের সুযোগ থাকে না, সেই সময় গ্রামীণ অবকাঠামো ও সড়ক মেরামত এবং সংরক্ষণসহ নানা ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ত করা হবে। কাজের বিনিময়ে প্রতিদিন জনপ্রতি ১৫০ টাকা দেয়া হবে। আরও ৫০ টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হবে, যা দেড় বছর পর ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা হবে। এ সঞ্চয় করা অর্থই ব্যক্তি উপযোগী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নতুন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা হবে। এই প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৫৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক সহায়তা ৬৪০ কোটি টাকা। প্রকল্পটির বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এতে চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী নারীদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি কর্মসংস্থানমূলক নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রান্তিক ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ খবরটি আশাব্যঞ্জক তাতে সন্দেহ নেই। এখন প্রকল্পটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে দারিদ্র্যবিমোচনের পরিধি আরও ব্যাপকতর করা যাবে, সঙ্গে সঙ্গে আরও নতুন প্রকল্পও গ্রহণ করা যাবে; যা সামগ্রিক অর্থে দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়। এ প্রকল্পের মাধ্যমে দক্ষতা এবং সঞ্চয়ের মানসিকতার উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। তবে খেয়াল রাখতে হবে, প্রকল্পে প্রকৃত সুবিধাভোগীরা যাতে কোনভাবে বঞ্চিত না নয়, তাদের যেন কোন কারণে দারিদ্র্যের ফাঁদে নতুন করে ফিরে যেতে না হয়। সার্বিক বিচারে আশা করা যায়, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ‘স্বপ্ন’-এর মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে তা দারিদ্র্যবিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
×