ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

শিল্পাঙ্গনে বরেণ্য চার শিল্পীর বৈচিত্র্যময় চিত্রপ্রদর্শনী

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৭ মে ২০১৫

শিল্পাঙ্গনে বরেণ্য চার শিল্পীর বৈচিত্র্যময় চিত্রপ্রদর্শনী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বর্ণবহুল বিশাল ক্যানভাস। সেখানে দৃশ্যমান শরতের নীলাভ আকাশ। ভেসে বেড়াচ্ছে গুচ্ছ গুচ্ছ শুভ্র মেঘের ভেলা। আর চিত্রপটের জমিনজুড়ে দেখা দিয়েছে সবুজ ঘাসের বিস্তীর্ণ চরাচর। সেথায় অনেকখানি জায়গাজুড়ে গজিয়ে উঠেছে প্রকৃতির শোভাময় কাশফুল। পরিচর্যাহীন সেই কাশফুলের বনে মনের আনন্দে লুটোপুটি খাচ্ছে একঝাঁক দুরন্ত শিশু। এ্যাক্রিলিক মাধ্যমে আশ্রয়ে আমার দেশ শিরোনামের চিত্রকর্মটি এঁকেছেন শিল্প আবদুল মান্নান। ছবিটি এখন শোভা পাচ্ছে ধানম-ির শিল্পাঙ্গন গ্যালারিতে। প্রদর্শনালয়টিতে চলছে দেশবরেণ্য সৃষ্টিশীল চার শিল্পীর যৌথ প্রদর্শনী। এতে অংশ নেয়া বাকি তিন খ্যাতিমান শিল্পী হলেন অধ্যাপক সমরজিৎ রায় চৌধুরী, বীরেন সোম ও রেজাউল করিম। দৈনিক সকালের খবরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজনের অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই প্রদর্শনী। মঙ্গলবার জ্যৈষ্ঠের বিকেলে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়। প্রদর্শনী উদ্বোধন বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন প্রদর্শনীর সহায়তাকারী ব্যাংক এশিয়ার নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান রুমি এ হোসেন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মেহমুদ হোসেন। অধ্যাপক সমরজিৎ রায় চৌধুরীর সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সকালের খবরের সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী। প্রদর্শনীর ছবিগুলোয় উপস্থাপিত হয়েছে চার শিল্পীর শিল্প রচনার বৈচিত্র্যময় প্রকাশ। নিজস্ব ভাবনা ও আঙ্গিকে উজ্জ্বল প্রত্যেকের চিত্রপট। সেই সঙ্গে দীপ্যমান রং ও রেখার কারুকার্য এবং বিন্যাসের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যময় বিভাজন। সহজবোধ্য মূর্ত ছবির সঙ্গে পরিবেশিত হয়েছে মননের স্পর্শময় বিমূর্ত চিত্রকর্ম। নান্দনিক বিন্যাসের সঙ্গে রঙের স্বতঃস্ফূর্ততায় বিশেষভাবে নজর কাড়ে সমরজিৎ রায় চৌধুরীর ছবিগুলো। তাঁর ক্যানভাসে চোখ পড়লে মনে হয় আকাশ থেকে পাখির দৃষ্টিতে নিচে তাকিয়ে নদীনালা, গাছপালা, খাল-বিল, জমি-জিরাতের কিংবা বাড়ি-ঘর, শহর-গ্রামÑসবকিছুই হাজির হয়েছে বিমূর্ততায়। গভীরতার সন্ধানে ছবির মধ্যে নানা স্তর সৃষ্টি করেছেন রেজাউল করিম। বহুমাত্রিম রূপে উপস্থাপন করেছেন বিষয়কে। ড্রইংয়ের নিপুণতা ও রং-লেপনের শৈলীতে একইসঙ্গে সহজাত এবং প্রাণবন্ত প্রকাশ ঘটেছে আবদুল মান্নানের ছবিগুলোয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই শিল্পীর ক্যানভাস। অনবদ্য বিন্যাস ও রঙের ব্যবহারে বিভিন্ন আঙ্গিকে রকমারি বিষয়কে চিত্রপটে উপস্থাপন করেছেন বীরেন সোম। বিমূর্ত রীতির আশ্রয়ে বিষয়ের ভেতর অবলীলায় চমৎকারভাবে জুড়ে গেছে গাছের পাতা, ফুল কিংবা শিকড়। সামগ্রিকভাবে এই চার শিল্পীর প্রদর্শনীর সূত্র ধরে দেখা মিলেছে দেশের সাম্প্রতিক শিল্পজগতের গতি-প্রকৃতি। প্রত্যেকের ১০টি করে মোট চল্লিশটি চিত্রকর্ম দিয়ে সাজানো হয়েছে প্রদর্শনী। দশ দিনব্যাপী এ প্রদর্শনী শেষ হবে ৫ জুন। প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। নৃত্য-গীত-কবিতায় জাদুঘরের নজরুলজয়ন্তী উদ্্যাপন ॥ সোমবার ছিল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৬তম জন্মবার্ষিকী। আর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নৃত্য-গীত ও কবিতার ছন্দে বন্দনা জানানো হলো দ্রোহ, প্রেম, সাম্য ও মানবতার কবিকে। জ্যৈষ্ঠের সন্ধ্যায় নজরুলজয়ন্তী উদ্্যাপনের আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর। জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে বর্ণিল এই সাংস্কৃতিক পরিবেশনার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। সভাপতিত্ব করেন জাদুঘর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য শিরীন আক্তার। আলোচনা শেষে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন দেশের বিশিষ্ট নজরুলসঙ্গীত শিল্পীবৃন্দ। নজরুলের কবিতা থেকে আবৃত্তি করেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। এছাড়াও নজরুলসঙ্গীতের সঙ্গে নাচ পরিবেশন করেন দেশবরেণ্য নৃত্যশিল্পীবৃন্দ। শিল্পকলা একাডেমির নজরুলজয়ন্তী আয়োজনের সমাপ্তি ॥ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৬তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। মঙ্গলবার শেষ হলো নজরুলজয়ন্তীর এ আয়োজন। সমাপনী সন্ধ্যায় একাডেমির জাতীয় সঙ্গীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অঞ্জলী লহ মোর চল্ চল্ চল্্ গানের সুরে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে আনিসুল ইসলাম হিরুর পরিচালনায় সৃষ্টি কালচারাল একাডেমি। এছাড়াও সম্মেলক নৃত্য পরিবেশন করে লায়লা হাসানের পরিচালনায় নটরাজ এবং মুনমুন আহমেদের পরিচালনায় রেওয়াজ পারফর্মিং আর্ট। সম্মেলক কণ্ঠে ‘জয় হোক জয় হোক’ ও ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু’ গান দুটি পরিবেশন করে নজরুল ইন্সটিটিউট। শিল্পকলা একাডেমি রেপার্টরি গানের দল পরিবেশিত সঙ্গীতের শিরোনাম ছিল ‘দাও শৌর্য্য দাও ধৈর্য্য’। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী খালিদ হোসেন, রেবেকা সুলতানা, সুমন চৌধুরী, ফাতেমা-তুজ-জোহরা, ডালিয়া নওশীন, নাসিমা শাহীন ফ্যান্সি, অনিন্দিতা রায়, ডালিয়া নওশিন, মফিজ, শামীমা পারভীন শিমু, রওশন আরা সোমা, সঞ্জয় কবিরাজ ও সোনিয়া আলী মিত। একক আবৃত্তি পরিবেশন বাকশিল্পী শিমুল মুস্তাফা, ঝর্ণা সরকার ও ফয়জুল্লাহ সাঈদ। নাগরিক নাট্যাঙ্গনের নাট্যোৎসবে মঞ্চস্থ ম্যাকবেথ ॥ ‘চিত্ত আমার ভয় শূন্য উচ্চ আমার শির’ সেøাগানে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় চলছে নাগরিক নাট্যাঙ্গনের ২০ বছর পূর্তির নাট্যোৎসব। ৮ দিনব্যাপী এ উৎসবের ষষ্ঠ দিন ছিল মঙ্গলবার। এদিন নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ পদাতিক নাট্য সংসদের (টিএসসি) নাটক ম্যাকবেথ। উইলিয়াম শেক্সপিয়ার রচিত নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন সুদীপ চক্রবর্তী। ‘ম্যাকবেথ’। নাটকটি সংগঠনটির ৩৬তম প্রযোজনা। নাটকটির বাংলা অনুবাদ করেছেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক। প্রযোজনাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন শামছি আরা সায়েকা, মশিউর রহমান, হামিদুর রহমান পাপ্পু, জাবেদ পাটওয়ারি, মহিউদ্দিন জুয়েল, শাখাওয়াত হোসেন শিমুল, ইকরাম, শুভ, জনি, রাসেল, জয়, তন্ময় ও লিমন। ‘অঞ্জলি লহ মোর’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা কুমিল্লা থেকে জানান, নানান আয়োজনের মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার কুমিল্লায় জাতীয় পর্যায়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৬তম জন্মবার্ষিকীর দ্বিতীয় দিন উদযাপন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে কুমিল্লা টাউনহল চত্বরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সন্ধ্যায় কুমিল্লা জেলা প্রশাসন কর্তৃক প্রকাশিত অধ্যাপক শান্তি রঞ্জন ভৌমিক এর ‘অঞ্জলি লহ মোর’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও কুমিল্লা জেলা প্রশাসন আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক ডেপুটি স্পীকার ও কুমিল্লা-৭ (চান্দিনা) আসনের এমপি অধ্যাপক মোঃ আলী আশরাফ। কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোঃ হাসানুজ্জামান কল্লোলের সভাপতিত্বে ওই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ইন্দু ভূষণ ভৌমিক, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব এএফএম হায়াতুল্লাহ, চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ ইসমাইল হোসেন, কুমিল্লা সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর নাজনীন রহমান, এ্যাডভোকেট আহমেদ আলী, নজরুল পরিষদের সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট রুস্তম আলী প্রমুখ।
×