ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অর্থনৈতিক উন্নয়নে চীন সব সময় পাশে থাকবে ॥ লিও ইয়ানদং

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৭ মে ২০১৫

অর্থনৈতিক উন্নয়নে চীন সব সময় পাশে থাকবে ॥ লিও ইয়ানদং

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এজন্য বাংলাদেশ চীন-ভারত ও মিয়ানমার (বিসিআইএম) নিয়ে গঠিত ফোরাম কার্যকর করা হবে। নতুন কানেকটিভিটি চালু হবে এই চার দেশের মধ্যে। বাড়বে আঞ্চলিক বাণিজ্য। এসব উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়িত হলে শুধু ভারত নয়, চীনের সঙ্গেও বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসবে। দক্ষিণ-এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ চীনের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। চীনা উপ-প্রধানমন্ত্রী লিও ইয়ানদংয়ের ঢাকা সফরের মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গতিশীল ও জোরদার হবে বলে মনে করা হচ্ছে। মঙ্গলবার সকালে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত একটি সেমিনারে অংশগ্রহণ করে লিও ইয়ানদং দুপুরে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। যাওয়ার আগে আবারও বলে গেলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নে চীন সব সময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে। বাংলাদেশী পণ্যের রফতানি বাড়বে চীনে। শুধু তাই নয়, আগামী তিন চার বছরে দেশটিতে রফতানি ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদও। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় (এনএসইউ) আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। ওই সময় চীনের ব্যবসায়ীদের জন্য বরাদ্দ বাংলাদেশের বিশেষ শিল্পাঞ্চল ব্যবহার করে এদেশে চীনা বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানান বাণিজ্যমন্ত্রী। এছাড়া চীনের বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়ার জন্য চীন সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, চীন বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। দেশটি বাংলাদেশের উন্নয়নে বিভিন্নভাবে সহায়তা করে যাচ্ছে। বাণিজ্যমন্ত্রীর কথার প্রেক্ষিতে লিও ইয়ানদং বলেন, দক্ষিণ-এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ চীনের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। গত বছর দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২৫০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি। ৯০টিরও বেশি চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠান ১৭ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। তোফায়েল আহমেদ বলেন, চীন বাংলাদেশের ঘনিষ্ট বন্ধু এবং উন্নয়ন সহযোগী। চীনের আর্থিক সহায়তায় বাংলাদেশে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতকে সহায়তা করতে মুন্সীগঞ্জ জেলার বাউসিয়ায় তৈরি পোশাক পল্লী নির্মাণ, পূর্বাচলে স্থায়ী বাণিজ্যমেলা ক্যাম্পাস এবং কর্ণফুলী টানেলের মতো বড় প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ চীনকে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প গড়ে তোলার জন্য সুযোগ করে দিচ্ছে। এতে বাংলাদেশে চীনের শিল্প খাতে বিনিয়োগ অনেকগুণ বেড়ে যাবে। ভারত সরকারও বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বাণিজ্য সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এখন নেশাদ্রব্য ও অস্ত্র ছাড়া বাংলাদেশের সব পণ্য ভারতে শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা পাচ্ছে। মুন্সীগঞ্জের পোশাক পল্লীকে চীনের ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন করেছে। চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত দুই দিনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করেছি। সার্বিক সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বের সম্পর্ক গভীরতর করা, পারস্পরিক রাজনৈতিক আস্থা জোরদার করা, ঐতিহাসিক মৈত্রী সুসংহত করা, বাস্তবিক সহযোগিতা সম্প্রসারণ এবং পারস্পরিক কল্যাণ বাস্তবায়নের বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় চীনকে সমর্থনের জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ-চীনের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। ভবিষ্যতে এ সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে। দুই দেশের মানুষের প্রচেষ্টা দিয়ে একসঙ্গে স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করতে হবে। তিনি আরও জানান, চীন যেসব অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং একবিংশ শতাব্দীর সহযোগিতা প্রস্তাব দিয়েছে তাতে ৬০টিরও বেশি দেশ এবং আঞ্চলিক সংস্থা ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের উন্নয়নের সম্ভাবনা অনেক বেশি। এ সময় বাংলাদেশী একশ’ শিক্ষার্থীকে চীনা একটি ক্যাম্পে অংশগ্রহণের সুযোগ এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের জন্য ১ হাজার চীনা বই প্রদানের ঘোষণা দেন চীনা উপ-প্রধানমন্ত্রী। এদিকে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক দিন দিন বাড়ছে। এ লক্ষ্যে গঠন হচ্ছে বাংলাদেশ চীন-ভারত-মিয়ানমার (বিসিআইএম) জোট। বিসিআইএম কার্যকর করা হবে ॥ বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, ভারত ও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য হয়ে থাকে। কিন্তু এ দুটি দেশের সঙ্গেই বাণিজ্য ঘাটতি বাংলাদেশের অনুকূলে নয়। এ কারণে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে ভারত ও চীন বাংলাদেশকে বাণিজ্য সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। তবে বিসিআইএম কার্যকর হলে এ বাণিজ্য ঘাটতি উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে বলে মনে করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। সম্প্রতি একটি সেমিনারে এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব বাণিজ্যে সার্কভুক্ত দেশসমূহের অবদান কম। বাংলাদেশ চীন-ভারত-মিয়ানমার (বিসিআইএম) যোগাযোগ স্থাপিত হলে এ বাণিজ্যের পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে। আমদানি-রফতানি ॥ বাংলাদেশ-চীন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে জানা যায়, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক দিন দিন বাড়ছে। তবে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের প্রায় পুরোটাই চীন থেকে আমদানির মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। রফতানির পরিমাণ খুব সামান্য। চীন বাংলাদেশের সর্ববৃহত আমদানিকারক দেশ। দেশের মোট আমদানির ১৮-২০ শতাংশ আসে চীন থেকে।
×