ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

৬ ও ৭ জুন নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফর

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২৭ মে ২০১৫

৬ ও ৭ জুন নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফর

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ দুইদিনের সফরে আগামী ৬ জুন ঢাকা আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মঙ্গলবার দুপুরে মোদির বহুল প্রত্যাশিত সফরের সময়সূচী নিশ্চিত করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, ৬ ও ৭ জুন দুইদিনের সফরে ঢাকা আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তবে এ সফরে কারা মোদির সফরসঙ্গী থাকছেন এ ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে আগামী ৬ ও ৭ জুন দু’দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকা আসছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ সফরে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই সফরে দুই প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবেন। প্রধানমন্ত্রী মোদি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গেও সাক্ষাত করবেন। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আরোহণের পর এটাই মোদির প্রথম বাংলাদেশ সফর। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘের অধিবেশনে এবং নেপালে সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের সময় দুই দফা সাক্ষাতে তাঁকে বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই এক বছরে প্রতিবেশী দেশ ভুটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ছাড়াও পূর্ব এশিয়ার সিঙ্গাপুর, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিল, উত্তর আমেরিকার দেশ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপের দেশ ফ্রান্স ও জার্মানি এবং অস্ট্রেলিয়াও সফর করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু বহু আলোচিত স্থলসীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন ও তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে ঝুলে থাকা চুক্তির মতো অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সুরাহা না হওয়ায় মোদির আর বাংলাদেশে আসা হচ্ছিল না। গত ৬ ও ৭ মে ভারতীয় রাজ্যসভা ও লোকসভায় সংবিধানের সংশোধনীর মধ্য দিয়ে স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন ও দুই দেশের ১৬২টি ছিটমহল বিনিময়ের বাধা কাটে। আর আটকে থাকা তিস্তা চুক্তির আলোচনাতেও যে নতুন করে গতি আসছে, তা দুই পক্ষের বক্তব্যেই স্পষ্ট। সফরকালে নরেন্দ্র মোদি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে বক্তৃতা দেবেন। এছাড়া তিনি মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ীকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দেয়া স্বাধীনতা সম্মাননা গ্রহণ করবেন। দিল্লীর পক্ষ থেকে কয়েক মাস আগেই মোদির ঢাকা সফর আয়োজনের প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঢাকা সফরে অনেকটা স্পষ্ট হয়ে যায়, তিস্তা চুক্তির জট সহজে খুলছে না। সুরাহা হচ্ছিল না সীমান্ত চুক্তিও। দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হলেও জুন মাসেই সফর আয়োজনে দুই দেশের প্রাথমিক সম্মতি ছিল। সীমান্ত বিল পাস হওয়ায় এখন মোদির সফর আয়োজন চূড়ান্ত হলো। ঢাকার কূটনীতিকরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই প্রতিবেশীর সম্পর্ক বিশেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। মোদির ঢাকা সফরে বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে। কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এ সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তুতি চলছে। ইতোমধ্যে দীর্ঘ ৪১ বছর পর স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে ভারত সরকার। সহযোগিতাকে আরও নিবিড় করতে এবার প্রথমবারের মতো প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হবে। বিশেষ করে নেপাল ও ভুটানে যেভাবে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে, এবার বাংলাদেশেও এ ধরনের কাজ শুরু করবে ভারত। কুমুদিনী ট্রাস্টের একটি পানি প্রকল্পের মাধ্যমে এর সূচনা হবে। দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরের জন্য উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তি, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি নবায়ন, অভ্যন্তরীণ নৌ প্রটোকল নবায়ন, সামুদ্রিক অর্থনীতি, জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ মোকাবেলা, শিক্ষা, সংস্কৃতি, দুই দেশের মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থার মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) চূড়ান্ত করার প্রস্তুতি চলছে। নতুন একটি ঋণচুক্তি স্বাক্ষরের কথাও রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে ভারতকে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্দিষ্ট করে দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
×