ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

চাহিদানুগ বিদ্যুত উৎপাদন সত্ত্বেও ঢাকায় লোডশেডিং

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২৭ মে ২০১৫

চাহিদানুগ বিদ্যুত উৎপাদন সত্ত্বেও ঢাকায় লোডশেডিং

রশিদ মামুন ॥ চাহিদার সঙ্গে সামাঞ্জস্যপূর্ণ বিদ্যুত উৎপাদনের পরেও নিয়মিত বিভ্রাটের জবাব চেয়েছে বিদ্যুত বিভাগ। রাজধানী ঢাকার বেশিরভাগ এলাকায় নিয়মিত বিদ্যুত বিভ্রাট হচ্ছে। বিদ্যুত বিভাগ বলছে কোনক্রমেই ঢাকায় এই বিদ্যুত বিভ্রাট কাম্য নয়। বিদ্যুত সচিব ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালককে বিদ্যুত বিভ্রাটের কারণ অনুসন্ধান করে পনেরো দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছে। বিদ্যুত সচিব মনোয়ার ইসলাম সাম্প্রতিক এক চিঠিতে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে জানান, দেশে এখন ক্যাপটিভসহ বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ১৩ হাজার ২৬৫ মেগাওয়াট। গত ৬ মে দেশে সর্বোচ্চ বিদ্যুত উৎপাদন হয়েছে সাত হাজার ৭১২ মেগাওয়াট। দেশে এখন সর্বোচ্চ চাহিদার সময় অর্থাৎ সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বিদ্যুতের চাহিদা সাত হাজার ৫০০ থেকে সাত হাজার ৭০০ মেগাওয়াট। চাহিদার তুলনায় দেশে বিদ্যুত সরবরাহে কোন ঘাটতি নেই। কিন্তু এরপরও ডিপিডিসির আওতাধীন আজিমপুর, ধানম-ি, সেগুনবাগিচা, বাসাবো, রামপুরা, ফতুল্লা, ডেমরাসহ বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত বিদ্যুত বিভ্রাট হচ্ছে যা কোনক্রমেই কাম্য নয়। চিঠিতে রাজধানী ঢাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহে নিশ্চিত করার জন্য সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের জন্য একটি কারিগরি কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেয়া হয়। এজন্য একটি করিগরি কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ওই কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ারও সময় বেঁধে দেয়া হয়। সূত্র জানায়, দেশে কোন বিতরণ কোম্পানির সেবায় এখনও আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। পুরাতন, ত্রুটিযুক্ত সরবরাহ ব্যবস্থায় অনেকটা খুঁড়িয়ে চলছে সারাদেশের বিদ্যুতের বিতরণ। খোদ রাজধানী ঢাকার দুই বিদ্যুত বিতরণ কোম্পানি ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) এবং ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানিতেও (ডেসকো) এই সমস্যাও প্রকট। সামান্য ঝড় বৃষ্টিতে বিদ্যুত চলে যায়। আবার ওয়াসা, সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন সংস্থার খোঁড়াখুঁড়িতে প্রায়শই বিপত্তি ঘটছে ভূগর্ভস্থ বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থার। দেশের বৃহত্তর এলাকায় বিদ্যুত সরবরাহকারী সংস্থা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) তে এ সমস্যা সব থেকে প্রকট। দেশের সবগুলো পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকের এ অবস্থা অনেকটা গা সওয়া হয়ে গেছে। সরকার সামাঞ্জস্যপূর্ণ উৎপাদনের কথা বললেও গ্রামে অন্তত ছয় ঘণ্টা বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ থাকছে। ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) এবং বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) বিতরণ ব্যবস্থায়ও যথেষ্ট ত্রুটি রয়েছে। বলা হচ্ছে কোন কোন ক্ষেত্রে পাওয়ার গ্রীড কোম্পানির (পিজিসিবি) সঙ্গে বিতরণ ব্যবস্থার লাইন অসামাঞ্জস্যপূর্ণ। এতে ঘটছে বিপত্তি। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গোটা এলাকাতে বিদ্যুত সঞ্চালন ব্যবস্থাই ত্রুটিযুক্ত। লোডশেডিং-এর প্রধান কারণ হিসেবে সঞ্চালন ব্যবস্থার এ ত্রুটিকে দায়ী করা হয়। বিভিন্ন সূত্রের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে রাজধানীর কিছু এলাকাতে বিদ্যুত না থাকায় বিষয়টি সরকারের নজর কেড়েছে। তবে গ্রামের মানুষ বিদ্যুত বিভ্রাটে কষ্ট পেলেও তার খোঁজ কেউ রাখে না। বিশেষ করে সারাদেশের পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকরা বিদ্যুত বিভ্রাটের যন্ত্রণা পোহাচ্ছে। কিন্তু মাঠ পর্যায় থেকে তা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডকে অবহিতও করা হয় না। সবক্ষেত্রেই বিদ্যুতের চাহিদা কম দেখিয়ে দায়সারা ‘জিরো লোডশেডিং’-এর প্রতিবেদন দেয়া হয়। মাঠ পর্যায়ের চাহিদার পূর্ণাঙ্গ চিত্র না জানতে পারাতে সরকারের পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নেও সমস্যা হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে দেশের বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থার একটি বড় অংশই ওভারলোডে চলছে বছরের পর বছর। বিদ্যুত বিতরণে ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা না থাকায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আর এখন উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় বিদ্যুত সংযোগ বৃদ্ধির নির্দেশ দেয়া হয়েছে এতে লাইনগুলো আরও বেশি ওভার লোডে চলছে। যাতে বিদ্যুত বিভ্রাটের মাত্রা বাড়ছে। বিদ্যুত সূত্র জানায় এখন আমাদের সঞ্চালন ব্যবস্থায় প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আসে ৪০ বছরের পুরাতন বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে। এছাড়া দেশের গ্রীড এবং সাবস্টেশনের অনেকটাই মেয়াদোত্তীর্ণ পুরাতন। এসব বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোর তথ্যও দ্রুত পাওয়া যায় না। বিদ্যুত বিভাগের চিঠি পাওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে বিদ্যুত বিভাগ। বিতরণ ব্যবস্থার কিছু আন্তঃসমন্বয়ের মাধ্যমে ওভারলোড সমস্যা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা হচ্ছে। এজন্য ডিপিডিসি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক (সিইও) মোঃ রমিজ উদ্দিন সরকারকে আহ্বায়ক করে আট সমস্যর একটি কমিটি গঠন করে সাত দিনের মধ্যে লোডশেডিং-এর কারণ অনুসন্ধানে কমিটি গঠন করেছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হচ্ছেনÑ প্রধান প্রকৌশলী (নর্থ) কৃষ্ণপদ পাল, প্রধান প্রকৌশলী (সাউথ) মোঃ একরামুল হক, প্রধান প্রকৌশলী (সেন্ট্রাল) মুহাম্মদ নূরুল আমিন, প্রধান প্রকৌশলী (পিএ্যান্ডডি) এএসএম হাফিজুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী (ডেভেলপমেন্ট) দিলীপ কুমার সেন, প্রধান প্রকৌশলী (গ্রীড) মোঃ শওকত জামিল এবং তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সাত মসজিদ সার্কেল) ছানাউল হক। কমিটির আহ্বায়ক রমিজ উদ্দিন সরকার জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা এখনও এ বিষয় নিয়ে বৈঠক করছি। আমাদের বেশিরভাগ লাইন ওভারলোডে রয়েছে। এছাড়া মাঝে মাঝে কোন কোন এলাকায় উন্নয়ন কাজ চালাতে গিয়ে কেবল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়াও স্থানীয়ভাবেও কিছু সমস্যা হচ্ছে যাতে নিয়মিত বিদ্যুত বিভ্রাটের সৃষ্টি।
×