ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

একনেক বৈঠক

খুলনা-মংলা নতুন রেললাইনসহ ৯ প্রকল্প অনুমোদন

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২৭ মে ২০১৫

খুলনা-মংলা নতুন রেললাইনসহ ৯ প্রকল্প অনুমোদন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ খুলনা-মংলা রেললাইন স্থাপনসহ ৯ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৮৬৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারী তহবিলের ২ হাজার ২৭০ কোটি ১৯ লাখ, সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৩০ কোটি ৯৪ লাখ এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৩ হাজার ৫৬৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা সচিব মোহাম্মদ সফিকুল আজম, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম এবং ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আরাস্তু খান। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, শাহজাদপুরে দৈনিক সাড়ে ৫ লাখ লিটার দুধ উৎপাদন হয়। এর মধ্যে মিল্কভিটা আড়াই লাখ থেকে ৩ লাখ লিটার সংগ্রহ করে পাস্তরিত তরল দুধ, গুঁড়ো দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য তৈরি করে সারাদেশে সরবরাহ করে। অবশিষ্ট দুধ বাজারজাতকরণে সমস্যায় পড়েন ক্ষুদ্র খামারিরা। বিশেষ করে নবেম্বর থেকে মার্চ দুধের মৌসুম বলা হয়। সে সময়ে উৎপাদিত অতিরিক্ত দুধ বাজারজাতকরণে সত্যিকার অর্থেই সমস্যায় পড়েন খামারিরা। সেই সঙ্গে বর্ষার সমস্যা তো আছে। সেজন্য এ এলাকার ২ লাখ লিটার কাঁচা দুধ প্রক্রিয়াকরণ করে ২৫ মেট্রিকটন গুঁড়ো দুধ উৎপাদন করতে চায় সরকার। দুধের খামারিদের স্বার্থ রক্ষার সঙ্গে গুঁড়ো দুধ আমদানি কমবে বলে মনে করেন পরিকল্পনামন্ত্রী। অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে, ফিজিবিলিটি স্টাডিসহ খুলনা হতে মংলা পোর্ট পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প, এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৩ হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। বাংলাদেশ রেলওয়ের কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন পুনর্বাসন প্রকল্প, এর ব্যয় ৬৭৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা। বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকার অবকাঠামো উন্নয়নসহ সৌন্দর্য বর্ধন কাজ প্রকল্প, এর ব্যয় ৬১ কোটি ২০ লাখ টাকা। জামালপুর শহর বাইপাস সড়ক নির্মাণসহ জামালপুর-ইসলামপুর-দেওয়ানগঞ্জ সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্প, এর ব্যয় ৫৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। স্ট্রেনদেনিং ওমেন এবিলিটি ফর প্রোডাক্টটিভ নিউ অপারচ্যুনিটি (স্বপ্ন) প্রকল্প, এর ব্যয় ৮৫৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। কন্সট্রাকশন অব কোরস অব মিলিটারি পুলিশ এ্যান্ড স্কুল এ্যাট সাভার ক্যান্টনমেন্ট প্রকল্প, এর ব্যয় ৮৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। হ্যাচারিসহ আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামার স্থাপন প্রকল্প, এর ব্যয় ২১৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার মানিকনগর এলাকায় মেঘনা নদীর বাম তীরে প্রতিরক্ষামূলক কাজ প্রকল্প, এর ব্যয় ৩৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়িঘাটে গুঁড়ো দুগ্ধ কারখানা স্থাপন প্রকল্প, এর ব্যয় ৭৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। সূত্র জানায়, ভারতীয় ঋণ সহায়তায় খুলনা থেকে মংলা পর্যন্ত একটি নতুন রেললাইন নির্মাণ করবে সরকার। একইসঙ্গে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থেকে শাহবাজপুর পর্যন্ত বিদ্যমান রেললাইনের সংস্কারও হবে এই ঋণ সহায়তা দিয়ে। খুলনা থেকে মংলা পর্যন্ত নতুন রেললাইন স্থাপনের জন্য অনুমোদিত সংশোধিত প্রকল্পটি ২০১০ সালের ডিসেম্বরে যখন প্রথম অনুমোদিত হয় তখন এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। সংশোধিত এ প্রকল্পটির ব্যয় বৃদ্ধির কারণ ব্যাখ্যা করে পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল একনেক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘রেলপথের এলাইনমেন্ট পরিবর্তনের ফলে রূপসা নদীতে প্রায় ৭১৭ মিটার দৈর্ঘ্যরে একটি রেলসেতু নির্মিত হবে। সেই সঙ্গে রেললাইনের দৈর্ঘ্য ১২ কিলোমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও নতুন করে কিছু জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এখন এ প্রকল্পের আওতায় খুলনা থেকে মংলা পর্যন্ত প্রায় ৬৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন নির্মিত হবে। সেই সঙ্গে ২১ কিলোমিটার লুপ লাইন তৈরি হবে। এ প্রকল্পে নির্মাণ কাজে (রূপসা রেল সেতুসহ) প্রায় ২২০০ কোটি টাকা খরচ হবে। অপরদিকে, ৬৭৮ একর ভূমি অধিগ্রহণে খরচ হবে ১০০০ কোটি টাকা। এছাড়া অন্যান্য খরচত আছেই। সংশোধিত এ প্রকল্পের মোট ব্যয়ের মধ্যে ভারত সরকার ঋণ সহায়তা হিসেবে ২ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা দেবে। বাকি ১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকার বহন করবে। বাংলাদেশ রেলওয়ে এ প্রকল্পটি ২০১৮ সালের জুন নাগাদ সম্পন্ন করবে । অপরদিকে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথটিকে পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এজন্য একনেকে ৬৭৮ কোটি টাকার একটি সংশোধিত প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকার দেবে ১২২ কোটি টাকা। বাকি ৫৫৬ কোটি টাকা ভারত সরকার বাংলাদেশকে ঋণ হিসেবে দেবে। উল্লেখ্য, রেল চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ায় এ রেলপথটি ২০০২ সাল থেকে বন্ধ আছে। সরকার বলছে সাড়ে ৫১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ রেলপথটিকে আরও ৯ কিলোমিটার বাড়িয়ে ভারতীয় সীমান্ত পর্যন্ত ডুয়েলগেজে রূপান্তরিত করে চালু করলে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে আঞ্চলিক রেলওয়ে নেটওয়ার্ক এবং ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওযার্ক উভয়ের সঙ্গেই যুক্ত হতে পারবে। ফলশ্রুতিতে আঞ্চলিক বাণিজ্য ও পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটবে।
×