ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গরমে হাঁসফাঁস

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ২৭ মে ২০১৫

গরমে হাঁসফাঁস

খরতাপ সর্বত্র। দাবদাহে পুড়ছে দেশ। পুড়ছে মানুষ। যেন এক অসহনীয় অবস্থা। সকালের সূর্র্য যেন আগুনের হল্কা নিয়ে উদয় হয়। সকালটা শুরু হচ্ছে কোথাও ২৭-২৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা নিয়ে। এরপর বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে মাত্রা। উত্তরবঙ্গে তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রীর বেশি হচ্ছে। খরতাপ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাতাসও তপ্ত হচ্ছে। বইছে যেন লু হাওয়া। বৃষ্টিবিহীন আবহাওয়ায় মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দিনে রোদের উত্তাপ, রাতে ভ্যাপসা গরম। টিকে থাকা কঠিন দায়। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বাতাসের আর্দ্রতাও বেড়েছে। বাতাসের গতিবেগ কমে গরমে হাঁসফাঁস করছে মানুষ। তাপমাত্রা না কমার কারণ, আকাশে কোন মেঘ নেই। কমছে না তাপমাত্রা। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান বেশি হওয়ায় এবং বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় গরমের তীব্রতা বাড়ছে। সমুদ্র উপকূলে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি হওয়ার ফলে চট্টগ্রামে তাপমাত্রার তুলনায় গরমের তীব্রতা স্বাভাবিকভাবেই বেশি অনুভূত হচ্ছে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে স্বাভাবিকভাবে বর্তমান সময়ে স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত গরম অনুভূত হচ্ছে। দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে আগত দাবদাহের কারণে গরমের তীব্রতা বেড়ে যাচ্ছে কয়েকগুণ। আর সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার বাতাসে জলীয়বাষ্পের উপস্থিতি বেশি। ফলে শরীরের ঘাম বায়ুম-ল শোষণ করতে পারছে না বলে গরমে অস্বস্তি বাড়ছে। খাঁ খাঁ করছে দেশের মাঠপ্রান্তর। খাল-বিল, নদী-নালা ও জলাশয় পানিশূন্য। অতিরিক্ত ঘামে পানিশূন্যতায় একটুতেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশু ও বয়স্ক মানুষ। নিউমোনিয়া, সর্দিকাশিসহ নানা মৌসুমি জ্বরের প্রকোপ যেমন বাড়ছে, তেমনি ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যাও প্রতিদিন বাড়ছে। রোগীর ভিড় হাসপাতালে। প্রচ- গরমে তৃষ্ণা মেটাতে গিয়ে দূষিত পানি পান করছে কেউ কেউ। গরমে পচন ধরা খাবার খাচ্ছে, আর এতে ডায়রিয়া হচ্ছে। বিশেষত শিশু ও বয়স্কদের। বাজারে যেসব খাবার স্যালাইন মেলে তার একাংশ নকল ও ভেজাল। অসাধু ব্যবসায়ীরা নকল স্যালাইনও ছেড়েছে বাজারে। এছাড়া এ্যালার্জি, আমাশয়, কলেরা, জন্ডিসসহ বিভিন্ন রোগও ছড়াচ্ছে। গরমকে পুঁজি করে নগরীর বিভিন্ন স্থানে ও ফুটপাতে তরমুজ, আনারস, আখের রস, লেবুর শরবত, পানীয় ও ফলমূলের দোকান বসিয়ে রমরমা ব্যবসা চলছে। মানুষের ভিড়ও এখানে। বলা চলে চরম অস্বস্তি থেকে জনজীবন মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা আপাতত নেই। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, চলতি বছর এ সময়ে গ্রীষ্মের দাবদাহ অন্য বছরের তুলনায় বেশি অনুভূত হচ্ছে। প্রচ- গরমে জনজীবন বিপর্র্যস্ত হলেও আবহাওয়া বিভাগ বলছে, আগামী ১০ জুনের আগে তাপমাত্রা হ্রাসের তেমন সম্ভাবনা নেই। বরং বাড়তে পারে। এমনকি তীব্র থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাস বয়ে যেতে পারে। প্রশান্ত মহাসাগরে এলনিনোর প্রভাবে উত্তাপ বাড়ছে। ফলে বৃষ্টিপাত হ্রাস পেয়েছে। এমনিতে বাংলাদেশ ক্রমে গরমের দেশে পরিণত হচ্ছে। গরমের হাঁসফাঁস থেকে বেরোনোর পথই আনতে পারে এই গরমের মধ্যে একটু স্বস্তি।
×