ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মেয়াদ না বাড়ানো পর্যন্ত অর্থছাড় বা ব্যয় বন্ধের সিদ্ধান্ত

২০৯ মেয়াদোত্তীর্ণ প্রকল্পের বোঝা

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ২৭ মে ২০১৫

২০৯ মেয়াদোত্তীর্ণ প্রকল্পের বোঝা

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ নতুন এডিপির ঘারে চাপছে ২০৯ মেয়াদোত্তীর্ণ প্রকল্পের বোঝা। আগামী ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এসব প্রকল্পের ঘানি টানতে হবে সরকারকে। বলা হয়েছে অনুমোদিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) এবং কারিগরি প্রকল্প প্রস্তাব (টিপিপি) অনুযায়ী এসব প্রকল্প ২০১৫ সালের জুনের মধ্যে সমাপ্ত হওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন কারণে তা হচ্ছে না। ফলে মেয়াদোত্তীর্ণ এ প্রকল্পগুলোকে তারকা চিহ্ন দিয়ে নতুন এডিপিতে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করেছিল পরিকল্পনা কমিশন। এই প্রকল্পগুলোর মেয়াদ বৃদ্ধি ছাড়া অর্থছাড় কিংবা ব্যয় করা যাবে না বলে নির্দেশনাও দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে এসব সুপারিশ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আগামী অর্থবছরে প্রকল্প বাস্তবায়ন বাড়াতে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে কোন ধরনের অনিয়ম সহ্য করা হবে না। ভুয়া ব্যাংক গ্যারান্টি দিয়ে কাজ নেয়ার সুযোগ বন্ধ করা হবে। একই ঠিকাদার বিভিন্ন নামে কাজ নিয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের দু’একটি ঘটনার জন্য বিশ^ব্যাংকের কাছে বাংলাদেশের ইমেজ নষ্ট হচ্ছে। অনেকে প্রকল্পের গাড়ির সুযোগ-সুবিধা নিতে দফায় দফায় সংশোধন করে। নতুন অঙ্গ যুক্ত করে প্রকল্পের অর্থ ও মেয়াদ বাড়ায়। এগুলো সবই ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে করা হয়। আগামী জুনের পর সরকার অদক্ষ প্রকল্প পরিচালকদের সরিয়ে দেবে। এজন্য আলাদা প্রকল্প পরিচালকদের পুল করা হবে। পরিকল্পনা সচিব মোহাম্মদ সফিকুল আজম জনকণ্ঠকে জানান, মেয়াদোত্তীর্ণ এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ বৃদ্ধি করলেই কেবল অর্থছাড় বা ব্যয় করা যাবে এ রকম একটি প্রস্তাবনা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এসব প্রকল্প চলতি বছরের জুনের মধ্যেই শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নানা কারণে হয়নি। বাস্তবতা বিবেচনা করে সময় দেয়া উচিত বলে আমরা মনে করেছি। কেননা মাঝপথে হাফডান করে প্রকল্প বন্ধ করলে তো প্রকৃত উদ্দেশ্য এবং পুরো অর্থ নষ্ট হয়ে যাবে। তাছাড়া প্রয়োজন অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দের সমস্যা, টেন্ডার প্রক্রিয়ার দীর্ঘ সূত্রিতাসহ নানা কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন দেরি হয়। এসব বিষয়ও তো মাথায় রাখতে হবে। সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের (২০১৪-১৫) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে (এডিপি) ৩০৮টি মেয়াদোত্তীর্ণ প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। আগামী অর্থবছরের পরিমাণ প্রায় ১০০টির মতো কমলেও সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দসহ মোট প্রকল্প থাকছে ৯৯৮টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প থাকছে ৮৫৪টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১৩২টি এবং জেডিসিএফ অর্থায়িত প্রকল্প থাকছে ১২টি। এডিপিতে বরাদ্দসহ একেবারেই নতুন প্রকল্প থাকছে ৪১টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ৩৬টি এবং কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ৫টি। এছাড়া স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অর্থায়নের ১২৫টি প্রকল্পসহ এডিপিতে মোট ১ হাজার ১২৩টি প্রকল্প থাকছে। মেয়াদোত্তীর্ণ প্রকল্পের বিষয়ে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম জনককণ্ঠকে বলেন, কিছু ক্ষেত্রে এসব প্রকল্প নতুন এডিপির ঘারে বাঝা হিসেবে দেখা দেয়। তাছাড়া ২০১৫ সালের জুনের মধ্যে শেষ না হওয়ার বিষয়টিও তো এক ধরনের ব্যত্যয়। কারণ কেন প্রকল্পগুলো লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী শেষ হলো না। এগুলোর অনেক প্রকল্প শেষ না হওয়ার যৌক্তিক কারণও থাকে। আবার অযৈাক্তিক কারণও রয়েছে। অর্থবছরের শুরুতেই প্রকৃত কারণগুলো খুঁজে বের করে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া উচিত। বিশেষ করে সচিবদের সঙ্গে বৈঠক করা দরকার। কেন শেষ হয় না, তাদের সীমাবদ্ধতা কতটুকু ইত্যাদি বিষয়গুলো আলোচনা হলে তাহলে এক ধরনের জবাবদিহিতা তৈরি হবে। তখন দেখা যাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি আসবে। সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরে জন্য ৯৭ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এর বাইরে সংস্থার নিজস্ব তহবিল উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনায় ৪ হাজার দেয়া হয়েছে। নতুন এডিপিতে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৬২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সাহায্য থেকে ৩৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এডিপির আকার ছিল ৮০ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে সেটি কমিয়ে ৭৫ হাজার কোটি টাকা করা হয়। বড় আকারের এডিপি অনুমোদনকে ঐতিহাসিক ঘটনা বলে মনে করছেন আহম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ছয় বছর আগে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর এডিপির আকার ছিল ২৩ হাজার কোটি টাকা। সেটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার বরাদ্দসহ বেড়ে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। বড় আকারের এডিপি বাস্তবায়নে অর্থবছরের শুরু থেকেই নজরদারি করা হবে। সূত্র জানায়, এডিপি সঠিকভাবে বাস্তবায়নের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সচিবদের উদ্দেশ করে বলেছেন, সকলের বেতন বাড়ানো হয়েছে। আরও উদ্দীপ্তভাবে কাজ করতে হবে। বাস্তবায়ন, মূল্যায়ন ও পরিবীক্ষণ বিভাগ (আইএমইডি) কে আরও শক্তিশালী করে নজরদারি বাড়াতে হবে। চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ভাল অর্জিত হয়েছে। হরতাল-অবরোধ না থাকলে ৭ শতাংশে পৌঁছে যেত বলে উল্লেখ করেন তিনি। নতুন এডিপি অনুমোদন দেয়ার সময় এনইসি বৈঠকে এসব মন্তব্য করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
×