ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিক্ষককে পা ধরে মাফ চাইতে বাধ্য করা

ম্যাজিস্ট্রেট ও ইউএনওকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৬ মে ২০১৫

ম্যাজিস্ট্রেট ও ইউএনওকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারী কলেজের শিক্ষককে পা ধরিয়ে মাপ চাইতে বাধ্য করার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট ও ইউএনওকে আগামী ১৫ জুন আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ওইদিন আদালতে সশরিরে হাজির হয়ে পিরোজপুরের ভা-ারিয়ার সেই আলোচিত ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আশরাফুল ইসলাম ও ঘটনার সময় উপস্থিত ইউএনও মনির হোসেন হাওলাদারকে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে হবে। ঘটনার শিকার শিক্ষক মোনতাজ উদ্দিনকেও এদিন হাজির হয়ে বিষয়টি লিখিতভাবে জানানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এদিকে হাইকোর্ট লক্ষ্মীপুরে এক নারী শিক্ষকসহ দুই শিক্ষককে ম্যাজিস্ট্রেটের জেল-জরিমানা করার ঘটনা কেন অবৈধ হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে। ম্যাজিট্রেটের হাতে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাসহ শিক্ষকদের শাস্তি দেয়ার বৈধতা ও এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা দুটি পৃথক রিট পিটিশনের শুনানি শেষে সোমবার এ আদেশ দিয়েছে বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও আবু তাহের মোহাম্মদ সাউফুর রহমানের আদালত। দুটি ঘটনার দু’জন ভিকটিম বাদী হয়ে রবিবার হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেছিলেন। আদালতের এ আদেশের ফলে শিক্ষক সমাজের চলমান আন্দোলন আপাতত স্থগিত থাকবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষক নেতৃবৃন্দ। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার সমিতির নির্বাচিত মহাসচিব ও ঢাকা কলেজের শিক্ষক আ ই কে সেলিম খোন্দকার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বিধিবহির্ভূত ও অমানবিকভাবে নির্বাহী ম্যাজিট্রেট শাস্তি দিয়েছেন ভা-ারিয়া সরকারী কলেজের একজন সহযোগী অধ্যাপককে। একজন শিক্ষককে পা ধরাতে বাধ্য করেছেন। অপরদিকে লক্ষ্মীপুরে একজন শিক্ষককে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাহীন একজন প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তা বিধি বহির্ভূতভাবে শাস্তি দিয়েছেন। দুটি ঘটনা ঘটেছে এপ্রিল মাসে এইচএসসি পরীক্ষা চলাকালে। এর আগে গত ৯ এপ্রিল এইচএসসি ইংরেজী প্রথমপত্র পরীক্ষা চলাকালীন পিরোজপুরের ভা?-ারিয়া সরকারী কলেজ কেন্দ্রে প্রধান পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন সহকারী অধ্যাপক মোনতাজ উদ্দিন। এক পর্যায়ে সেলফোনে কথা বলতে বলতে কেন্দ্রে প্রবেশ করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশ্রাফুল ইসলাম। পরিচয় না জানায় কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা শিক্ষকরা হতচকিত হয়ে যান। এরই মধ্যে ওই ম্যাজিস্ট্রেট শিক্ষককে উদ্দেশ করে বলেন, এক বেঞ্চে দুই ছাত্রী পাশাপাশি বসছে কেন? তাদের সরিয়ে দিন। শিক্ষক মোনতাজ উদ্দিন তার পরিচয় জানতে চাইলে ক্ষেপে যান আশ্রাফুল ইসলাম। এমনকি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনির হোসেন হাওলাদার ও পুলিশ ডেকে পাঠান ওই ম্যাজিস্ট্রেট। শিক্ষককে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তি দেয়ার হুমকি দেন ম্যাজিস্ট্রেট। প্রকাশ্যে মোনতাজ উদ্দিনকে ম্যাজিস্ট্রেটের পা ধরে ক্ষমা চাইতেও বাধ্য করেন। এ ঘটনার ছবি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এর পর থেকে প্রতিদিনই বিভিন্ন সরকারী কলেজে চলছে প্রতিবাদ সমাবেশ, মানববন্ধন। গতকালও আন্দোলন হয়েছে বিভিন্ন কলেজে। ৩০ এপ্রিল সারাদেশের সরকারী কলেজে ও এ সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটও পালন করেন শিক্ষকরা। ২ মে রাজধানীতে সবাবেশ করে লাগাতার কর্মসূচীও ঘোষণা করা হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠন করে তদন্ত কমিটি। সেই কমিটি ইতোমধ্যেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেটের শাস্তি না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত আদালতে যান শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। লাঞ্ছিত ওই শিক্ষকের চেয়ে অনেক জুনিয়র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুল ইসলামের পা ধরে ক্ষমা চাওয়া কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না অধ্যাপক মোনতাজ উদ্দীন। তিনি এ লাঞ্ছনার হাত থেকে রক্ষা পেতে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন। তিনি বলছিলেন, যখন আত্মহত্যা করতে যান, সে সময় তার একমাত্র শিশুকন্যার মুখটি বারবার ভেসে ওঠে। শিশুটি বাবা বলে আর ডাকতে পারবে না- এ কথা ভেবে তিনি আর আত্মহত্যা করতে পারলেন না। পরে তিনি বিষয়টি বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির নেতৃবৃন্দকে অবহিত করেন। ভা-ারিয়া সরকারী কলেজে ছুটে যান বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির নেতৃবৃন্দসহ সাধারণ শিক্ষকরা। শিক্ষক নেতৃবৃন্দ শিক্ষামন্ত্রীসহ বিভিন্ন দফতরে স্মারকলিপি প্রদান করলে জুনিয়র হয়ে সিনিয়র কর্মকর্তাকে পা ধরতে বাধ্য করার ঘটনায় পৃথক চারটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এদিকে এই ঘটনার মধ্যেই লক্ষ্মীপুরে বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক মহিলা শিক্ষিকাসহ দুই শিক্ষকের ওপর ম্যাজিস্ট্রেটের নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। ঘটনার প্রতিবাদে এবার আন্দোলনে নামে বেসরকারী স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা। শিক্ষক নেতারা অবিলম্বে ঘটনার বিচার দাবি করে বলেন, লক্ষ্মীপুরে মহিলা শিক্ষিকার ওপর নির্যাতন, পিরোজপুরের ভা-ারিয়া কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মোনতাজ সাহেবকে পা ধরিয়ে পুরো শিক্ষক সমাজকে অপমান করা হয়েছে। শিক্ষক নির্যাতনকারীদের গ্রেফতার ও বিচার করা না হলে দেশব্যাপী বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচী দেয়ারও হুমকি দেন শিক্ষক নেতারা।
×