ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কানে সেরা ‘ধীপান’

প্রকাশিত: ০৪:২০, ২৬ মে ২০১৫

কানে সেরা  ‘ধীপান’

সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ কান চলচ্চিত্র উৎসবের ৬৮তম আসরের পর্দা নেমেছে। এবারের কান চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা সম্মান স্বর্ণপাম জিতে নিয়েছে ফ্রান্সে বসবাসরত এক পলাতক তামিল গেরিলার গল্পের চলচ্চিত্র ‘ধীপান’। চলচ্চিত্রের নির্মাতা জাক অদিয়ার। এর ফলে গাস ফন স্যান্ট, ন্যানি মোরেত্তি, পাওলো সরেন্তিনোর মতো খ্যাতিমান নির্মাতাদের পেছনে ফেলে নিজের দেশেই সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কারটি রাখার গৌরব অর্জন করলেন তিনি। ১৯৯৬ সালের কান উৎসবে ‘এ্যা সেলফ-মেড হিরো’র জন্য সেরা চিত্রনাট্য এবং ছয় বছর আগে ‘এ্যা প্রফেট’-এর জন্য গ্র্যাঁ প্রিঁ পুরস্কার যায় তার ঘরে। পুরস্কার নেয়ার সময় জ্যাকের সঙ্গে ছিলেন ‘ধীপান’ চলচ্চিত্রের দুই অভিনয়শিল্পী এ্যান্থনিথাসান জেসুথাসান ও দক্ষিণ ভারতের মঞ্চ অভিনেত্রী কালিয়েশ্বরী শ্রীনিবাসন। ‘ধীপান’ পরিচালক জ্যাকের হাতে স্বর্ণপাম তুলে দেন কোয়েন ভ্রাতৃদ্বয় এবং ফরাসি অভিনেত্রী সেসিল ডি ফ্রান্স। স্বর্ণপাম গ্রহণ করে এ্যান্থনিথাসানকে ধরে সামনে নিয়ে আসেন ৬৩ বছর বয়সী এই ফরাসি নির্মাতা। এ্যান্থনিথাসান সত্যিকারেরই তামিল যোদ্ধা ছিলেন। স্বর্ণপাম জয়ের পেছনে তার অবদানের কথা গুরুত্বের সঙ্গে বোঝালেন জ্যাক। এবারের উৎসবে মূল প্রতিযোগিতা বিভাগ ছিল মোট ১৯টি চলচ্চিত্র। স্বর্ণপামের মতো সেরা অভিনেতা-অভিনেত্রী বিভাগেও দেখা গেলো চমক। স্টেফানি ব্রিজের পরিচালনায় ‘দ্য মেজার অব এ ম্যান’ চলচ্চিত্রের জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কার বাগিয়েছেন ভিনসেন্ত লান্দন। তার হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছেন মার্কিন অভিনেত্রী মিশেল রড্রিগেজ। অভিনেত্রীদের মধ্যে সেরা পুরস্কার ভাগাভাগি করেছেন আমেরিকার রুনি মারা ও ফ্রান্সের ইমানুয়েলে ব্যাকো। টড হায়েন্স পরিচালিত ‘ক্যারল’ চলচ্চিত্রে উচ্চাভিলাষী আলোকচিত্রী ও সমকামী চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় রুনিকে এনে দিয়েছে এই পুরস্কার। ৩০ বছর বয়সী এই মার্কিন অভিনেত্রী নিজেও হয়তো ভাবেননি পুরস্কার পাবেন। সেজন্যই অনুপস্থিত ছিলেন সমাপনীতে। এদিকে মিওয়েনের ‘মাই কিং’ চলচ্চিত্রে স্বামীভক্ত স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন ইমানুয়েলে ব্যাকো। অনুভূতি জানাতে গিয়ে কান্নায় বাকরুদ্ধ হয়ে যাচ্ছিল তার কণ্ঠ। ৪৭ বছর বয়সী এই ফরাসি অভিনেত্রী-নির্মাতা পরিচালিত ‘স্ট্যান্ডিং টল’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে দিয়েই গত ১৩ মে এবারের উৎসবের উদ্বোধন হয়। কানের ইতিহাসে এবারই প্রথম হাঙ্গেরির কোন চলচ্চিত্র অংশ নিল। নাম- ‘সান অব সাউল’। আর প্রথমবারেই বাজিমাত করলেন এর পরিচালক লাজলো নেমেস। সমালোচকদের রায়ে প্রতিযোগিতা বিভাগে আগের দিন ফিপরেস্কি পুরস্কার জেতার পর এবার উৎসবের দ্বিতীয় সম্মানজনক পুরস্কার গ্র্যাঁ প্রিঁ জিতেছেন ৩৮ বছর বয়সী এই হাঙ্গেরিয়ান। তার চলচ্চিত্রে নাৎসীদের গণহত্যার গল্প বলা বিচারকদের মুগ্ধ করেছে। এবারের উৎসবে জুরি প্রাইজ গেছে ইওর্গেস লানটিমসের হাতে। ‘দ্য লবস্টার’ চলচ্চিত্রটি বানিয়ে পুরস্কার জিতেছেন এই গ্রিক পরিচালক। ৪৫ দিনের মধ্যে যুতসই সঙ্গী খুঁজে না নিলে জন্তুতে রূপান্তর হওয়া মানুষের কাল্পনিক সমাজকে দেখিয়েছেন তিনি। মার্শাল আর্ট নিয়ে ‘দ্য এ্যাসাসিন’ চলচ্চিত্রটি বানিয়ে তাইওয়ানের হো সিয়াও সিয়েন নিজের নামের পাশে লিখিয়েছেন সেরা পরিচালকের সম্মাননা। ঘরে ঘরে গিয়ে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত মানুষকে সেবাদান ও তাদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করিয়ে দেয়ার হৃদয়ছোঁয়া চিত্রনাট্যের জন্য পুরস্কার জিতেছেন মেক্সিকোর মিশেল ফ্রাঙ্কো। ‘ক্রনিক’ নামের চলচ্চিত্রটি তারই বানানো। জীবনের প্রথম চলচ্চিত্রের জন্য ক্যামেরা দ’র পুরস্কার জিতেছেন কলম্বিয়ার সিজার অগাস্তো এ্যাসভেদো (ল্যান্ড এ্যান্ড শেড)। তার হাতে পুরস্কার তুলে দেন এ বিভাগের বিচারক স্যাবিন আজেমা। এদিকে উৎসবের সমাপনী দিনে সকাল থেকে রাত অবধি সাল দিবুসি, সাল বুনুয়েল ও সাল দ্য সোসেনতিয়েমে আবার মূল প্রতিযোগিতা বিভাগের ছবিগুলো দেখানো হয়। এদিকে পুরস্কার বিতরণীর পর আমেরিকার কোয়েন ভাইদের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে আসেন প্রতিযোগিতা বিভাগের বিচারক ফরাসি অভিনেত্রী সোফি মার্সো, ব্রিটিশ অভিনেত্রী সিয়েনা মিলার, স্প্যানিশ অভিনেত্রী রসি ডি পালমা, মার্কিন অভিনেতা জ্যাক গিলেনহাল, মেক্সিকান নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার ও প্রযোজক গুইলারমো দেল তোরো, কানাডিয়ান নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার, প্রযোজক ও অভিনেতা হাভিয়ার দোলান এবং মালির সুরকার, গায়ক ও গীতিকার রকিয়া ট্রাওর। এরপর একে একে হাজির হন বিজয়ীরা। সবশেষে দেখা দেন প্রথমবার স্বর্ণপাম জেতা জ্যাক অদিয়ার। ওদিকে পুরস্কার প্রদানের পরপরই শুরু হয় সমাপনী চলচ্চিত্র লুক জ্যাকের ‘আইস এ্যান্ড দ্য স্কাই’। যাকে ঘিরে এই চলচ্চিত্র, সেই পরিবেশবিজ্ঞানী ক্লদ লরিয়াস লালগালিচা মাড়িয়ে গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে ঢুকতেই সবাই দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানান। উদ্বোধনীর মতো সমাপনী অনুষ্ঠানও উপস্থাপনা করেন ফরাসি অভিনেতা ল্যাম্বার্ট উইলসন। পুরস্কার বিতরণী ছাড়া ছিল চলচ্চিত্রের শৈল্পিক দিক নিয়ে মনোমুগ্ধকর নৃত্য, মার্কিন অভিনেতা জন সি রেইলি এবং বেঞ্জামিন ক্লেমেন্তেইনের পৃথক সঙ্গীত পরিবেশনা। এর আগে ২৪ মে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬-৫৫ মিনিটে কানের গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে সমাপনী অনুষ্ঠান শুরু হয়ে রাত আটটায় বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ১২টায় বিজয়ীদের নাম ঘোষণা ও পুরস্কার বিতরণী শেষ হয়। এর মধ্য দিয়ে এ উৎসবের ১২ দিনের মহাযজ্ঞ শেষ হলো।
×