ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকার দিনরাত

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ২৬ মে ২০১৫

ঢাকার দিনরাত

ব্যক্তিজীবনে নিরবচ্ছিন্নভাবে সুখ বা দুঃখলাভ ঘটে না। সুখে-দুঃখেই জীবন। পালাক্রমে তার আগমন। পাল্লায় কোনটা ভারি তার হিসেব মেলাতে কে বসে! তবে ঢাকার নগরজীবন সুখেদুঃখে এমন মাখামাখি যে মনে হয় পাশাপাশি দুটি স্রোত বয়ে চলেছে। ঢাকা কখনও আনন্দে নেচে ওঠে, কখনওবা বেদনায় মুষড়ে পড়ে; কখনও অপমানে নিভে যায়, কখনওবা প্রতিবাদে জ্বলে ওঠে। দাহ ও দ্রোহের এই সমান্তরাল অস্তিত্ব অনুভব করা যায় নিঃশব্দে-নীরবে। আর আবহাওয়ার কথা যদি বলি তো বলতেই হবে গত সপ্তাহে গলে পড়া মোমের তপ্ত আবহের ভেতর হঠাৎ হঠাৎ শীতল হাওয়া এসে প্রাণটা জুড়িয়ে দিয়ে গেছে ঢাকাবাসীর। আর একটি কথা না বললেই নয়। ঢাকার পথে পথে এখন রীতিমতো ছোটখাটো ‘ফল বাগান’ চোখে পড়ছে। কোথাও দেখি তরমুজের পাহাড় উঠে গেছে, কোথাও কাঁঠালের সমাহার, লিচুর বৈভব। বাজারে বোধহয় জায়গা পাচ্ছেন না এইসব ফল ব্যবসায়ীরা। ফলে পথই এখন হাট। পথচলতি রাস্তার ধারে জড়ো করে রাখা নানা রসময় মৌসুমি ফলের বাহ্যিক সৌন্দর্য বহু ঢাকাবাসীর দৃষ্টি কাড়ছে। প্রখর তপনতাপে শান্তির বর্ষা তীব্র দাবদাহ যেমন সংবাদ, তেমনি অসহনীয় তাপপ্রবাহের ভেতর ঝমঝম বৃষ্টি নেমে আসাও সুসংবাদ। সংবাদপত্রের প্রথম পাতাটি এ সপ্তাহে এই দুটো দিককেই প্রাধান্য দিতে বাধ্য হয়েছে। যদিও সুখেরও অসুখ থাকে। অল্প বৃষ্টিতেই ঢাকার বহু স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টিও রীতিমতো সংবাদ হয়েছে। বৃষ্টির ছোঁয়ায় নগরীতে স্বস্তি নেমে আসার সুসংবাদটি গুরুত্বের সঙ্গেই পরিবেশিত হয়েছে। আবার রবীন্দ্রনাথেই শরণ নিতে হচ্ছে। গ্রীষ্মের যত গান আছে তাঁর সেসবের মধ্যে ‘প্রখর তপনতাপে আকাশ তৃষায় কাঁপে, বায়ু করে হাহাকার’ ঢাকার শেষ মে-র সঙ্গে বেশ মিলে যাচ্ছে। দুঃসহ এ গরমের ভেতর আকস্মিক সাময়িক বৃষ্টিকে বর্ষাকালের আগমনধ্বনি রূপে বিবেচনা করতে সাধ জাগে। আমরা মানে ঢাকাবাসী কর্মজীবী নাগরিকরা চাই বৃষ্টি আমাদের সুবিধামতো আসুক। সব সময়ে কি তা হয়, বলুন। সেদিন সন্ধ্যার ওই বৃষ্টি স্বস্তি ও শান্তি দিলেও বিড়ম্বনাও দিয়েছিল কিছু বটে অফিস-ফেরতাদের। তবে গত সপ্তাহ পুরো বঞ্চিতও করেনি। পরদিনই গভীর রাত্তিরে আধঘণ্টার জন্য হলেও প্রচুর বৃষ্টি হয়েছিল, তীব্র বাতাসের ঝাপটা ছিল সঙ্গে। সারাটা দিন তন্দুর সেঁকার চুলোর ভেতর কাটিয়ে ঢাকা বেরিয়ে এসেছিল শরীরমন জুড়ানো সুশীতল বারিধারায়। এমন বৃষ্টি আবার উদাসীনতার মুড নিয়ে আসে, কেউ কেউ হয়ে পড়েন নস্টালজিক। অবধারিতভাবে না ভোলা অতীত দিনের স্মৃতি এসে মোহন বাঁশি বাজায়। চিত্রকর্মে ঢাকা ঢাকা মহানগরের সৌন্দর্য ও সঙ্কট নিয়ে শিল্পীমন কী ভাবে? কখনও কোন প্রদর্শনীতে ঢাকার রূপ দেখে মুগ্ধ হয়ে যাই। আবার কোন আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর মতো করে ঢাকার দুরবস্থা দেখিয়ে দেয়া হয়। তখন নিজের মনেই প্রশ্ন জাগে আমরা কি সত্যি সত্যি এই মর্ত্যরে নরকের অধিবাসী! ঢাকায় এ্যাথেনা বলে একটি গ্যালারি বা চিত্রশালা রয়েছে তা বোধকরি অনেকেই জানেন না। এখানে অনুষ্ঠিত হয়েছে নেপালে ভূমিকম্প ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দানের উদ্দেশ্যে চ্যারিটি শো। একটি ছবি দেখে দম বন্ধ হওয়ার যোগাড়। ক্যানভাসে এক্রিলিকে আঁকা চিত্রকর্মটির শিরোনাম ‘ঢাকা নগরী’। ছবিতে পিচবোর্ডের একটি মুখ খোলা বাক্সের ভেতর একদল সুবেশধারী নারী-পুরুষ মাথা ঢুকিয়ে দেয়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। স্পষ্ট বক্তব্য। মানুষের ভারে ভারাক্রান্ত ঢাকা। বাক্সের সীমিত পরিসরে লোকজনের হাঁসফাঁস দশা। ছবিটি এঁকেছেন লুবনা চর্যা। অকালপক্ব কদম! রবীন্দ্রনাথ আমাদের জীবনে কোথায় নেই! কদম ফুলের কথায় তাঁরই গানের বাণী মনে পড়ে গেল : বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল করেছো দান। রবীন্দ্রনাথ বলেননি বাদল দিন মানে আষাঢ়ের প্রথম দিন, তবু যেহেতু ওই দিনই পঞ্জিকা অনুযায়ী বর্ষাকাল শুরু হয়ে যায়, তাই আষাঢ়কে আবাহন করতে গিয়ে খবরের কাগজের পাতায় কদম ফুলের ছবি ছাপানো হয়। অথচ জ্যৈষ্ঠের শুরুতেই চোখে পড়ে গেল সুউচ্চ কদম গাছের ডালে থোকা ফুল। তাকে কি অকালপক্ব বলা যাবে? শাহবাগের যানজটে আর আগুনরাক্ষসের ফুঁয়ে ধস্ত নাকাল আমার চোখ পড়ল গিয়ে পাঠক সমাবেশ প্রাঙ্গণের দীর্ঘদেহী গাছটায়। সত্যি তো কদম ফুল। গুনে দেখি এক ফ্রেমে সাতটি ফুল, ঠিক যেন সপ্তর্ষীম-ল! বেলা বারোটায় যাত্রী ছাউনিতে গত সপ্তাহে এই কলামে মধ্যরাতে ফুটপাথের খোলা আকাশের নিচে একা মানুষের নিদ্রাযাপনের প্রসঙ্গ এসেছে। এবার দিনের বেলা ফুটপাথে দলবদ্ধ শয়নের কথাটি বলা যাক। সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রবিবারে ফার্মগেটের যাত্রী ছাউনির মেঝেয় কাছাকাছি বয়সের ছয় ব্যক্তি ঘুমোচ্ছেন দেখলাম। বেলা বারোটায় এভাবে ঘুমোনো একটু অস্বাভাবিকই বটে। তবু কেউ ফিরেও তাকাচ্ছেন না সেদিকে। না, ভুল বললাম, দেখতে শুনতে ঘুমন্তদের দলেরই একজন বলে ভ্রম হবে লুঙ্গি-জামা পরা এক পথচারী খুব কৌতূহল নিয়ে ঘুমন্ত মুখগুলো পরখ করলেন। তিনটে রুট থেকে আসা বিপুল সংখ্যক যানবাহনের মোহনা এ ফার্মগেটের গাড়ির তীব্র হর্ন, আর মানুষের হল্লা এই ঘুমন্তদের নিদ্রায় সামান্য ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে বলে মনে হলো না। কী পরিশ্রান্তই না এসব গৃহহীনরা! বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ঢাকার মেয়ররা শেষ পর্যন্ত একটি সেমিনারে বললেন মহানগরীর পরিচ্ছন্নতার দিকটিই তাদের কাছে সর্বোচ্চ প্রাধান্য পাচ্ছে। জানতে পারলাম নগরীর ৬০০ খোলা কন্টেনার থেকে প্রতিদিন ৫,০০০ টন বর্জ্য অপসারণ করা হচ্ছে। আমরা এই কলামে দফায় দফায় রাজপথের দুরবস্থার কথা লিখে আসছি। বিশেষত রাস্তার মাঝখানে রাখা আবর্জনা ফেলার কন্টেনার এবং রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পচা উচ্ছিষ্টের দুর্গন্ধে পরিবেশ দূষণের প্রসঙ্গ নিয়ে বার বার লেখা হয়েছে। সেদিন দেখলাম শাহবাগে ফুলের দোকানগুলোর কাছাকাছি ফুটপাথের নালায় পচা গাঁদা ফুলের জঞ্জাল, দুটো ভ্যান লাগবে সরাতে এই পরিমাণ আবর্জনা। আমরা আগেও বলেছি ঢাকার সড়কগুলোর পাশে যেসব দোকানপাট গড়ে উঠেছে সেসব দোকানের দোকানিদের তাদের সামনের রাস্তাকে ডাস্টবিন জ্ঞান করার এক অদ্ভুত মানসিকতা রয়েছে। রাস্তার পাশে নয়, একেবারে মাঝখানে সিটি করপোরেশনের মুখ খোলা কন্টেনার রাখার কথা আবারও বলতে হচ্ছে। রাজধানীর রাজপথের পাঁজরে দুষ্ট ক্ষতের মতো জেগে থাকা একেকটা ভাগাড় পথচারীদের বিপর্যস্ত করে চলেছে। মিউনিসিপ্যালিটির খোলা কন্টেনার থেকে রাস্তায় ছড়িয়ে পড়া বর্জ্যরে কুশ্রিতা আর তা থেকে বাতাসে ছড়িয়ে পড়া অস্বাস্থ্যকর উৎকট গন্ধে মানুষের নাভিশ্বাস ওঠা- এ তো আর বছরের পর বছর ধরে চলতে পারে না একটা মহানগরীতে। অবাক মানতে হয় কর্তৃপক্ষের কা-জ্ঞান দেখে! মিরপুরের একটি সড়কে পাশাপাশি রাখা হয়েছে চার-চারটে কন্টেনার। একটিতেই তিষ্টানো দায় আর চার-চারটি...। অবশ্যই ঢাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। নগরবাসীর আবর্জনা ফেলা এবং কর্তৃপক্ষের তা অপসারণ- সব কিছুই হতে হবে নিয়মমাফিক। ভাবি এর প্রতিকারে জনস্বার্থে আমরা একটা রিট কেন পাই না! প্রসঙ্গ নারীর নিরাপত্তা সপ্তাহের সর্বাধিক আলোচিত বিষয়াবলীর ভেতর প্রথমেই চলে আসে চলন্ত মাইক্রোবাসে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা। কর্মজীবী তরুণী কাজ শেষে রাতে বাড়ি ফেরার সময় অপহরণের শিকার হন এবং অস্ত্র ঠেকিয়ে তার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়। এই ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। রাজপথে প্রতিদিনই এ অন্যায়ের প্রতিবাদে সমাবেশ ও মানববন্ধন হচ্ছে। প্রয়াত নাট্যকার আবদুল্লাহ আল মামুনের ‘অরক্ষিত মতিঝিল’ নামের নাটকটির কথা মনে পড়ে গেল। এখন পুরো ঢাকাই কি অরক্ষিত হয়ে পড়েনি? এখানে মানবরূপী জানোয়ারদের হাত থেকে নারীর রক্ষা পাওয়ার কী উপায়? সময় এসেছে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সব শ্রেণীপেশার নাগরিকের উদ্যোগী হয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার। ওই গণধর্ষণের ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দা ও প্রতিবাদের শব্দ ঝড় বয়ে যায়। এখানে দু’জন নারী-পুরুষের অভিমত তুলে ধরা হলো। রবিশঙ্কর মৈত্রী লিখেছেন, ‘ঢাকায় মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে ধর্ষণ। এই ঘটনা আমাদেরকে কতটুকু নাড়া দেবে? মেয়েটির পক্ষে কতজন রাস্তায় দাঁড়াবে? মনে হয় তেমন কিছু হবে না। যে ধর্ষিতা তার পরিচয় এখানে বড় হয়ে দেখা দেবে। সে যদি ছাত্রী হতো, কোন দলের কর্মী হতো। তবে জোরালো একটা প্রতিবাদ হতো।’ তানিয়া কামরুন নাহার লিখেছেন, ‘নারীবান্ধব নগর কী? নারীর জন্য নিরাপদ নগর, যেখানে নারী স্বাধীনভাবে, নির্ভয়ে চলাফেরা করতে পারে। যেখানে যে কোন ধরনের যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়। নারীর জন্য থাকে আবাসন, পরিবহনের সুব্যবস্থা। কর্মজীবী মায়েদের জন্য ডে কেয়ার/ বেবিসিটিংয়ের ব্যবস্থা, মাতৃত্বকালীন ছুটির সুবিধা, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থানের সুযোগ, পাবলিক টয়লেট, বিনোদন ব্যবস্থা ইত্যাদি। লৈঙ্গিক বৈষম্য দূর করে যেখানে নিশ্চিত করা হয় নারীর ক্ষমতায়ন। আর আমাদের নগরটি যেন যৌন সন্ত্রাসী ও নিপীড়কদের অভয়ারণ্য। কোন নারী যৌন হয়রানির শিকার হয়ে বিচার চাইতে গেলে তাকেই উল্টো হেনস্থা করা হয়। পাবলিক পরিবহন নারীর জন্য যেন আরেক বিভীষিকার নাম। নারী যদি সহজে, নিরাপদে, নির্ভয়ে চলাফেরাই না করতে পারে, তবে সে শিক্ষা/কর্মক্ষেত্রে কীভাবে অবদান রাখবে?’ ... পার্ক ও মাঠ ঢাকা শহরের আয়তন ও এলাকার বিন্যাস অনুযায়ী বিরানব্বুইটি পার্ক থাকার কথা। কিন্তু রাজউক এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের হিসাব অনুযায়ী রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরকারী সম্পত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত পার্কের সংখ্যা ৫৪; বলাবাহুল্য এ কাগজ-কলমের হিসাব। বাস্তবে অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে বড়জোর ১৫। একইভাবে ঊনিশটি খেলার মাঠের মধ্যে আটটি কোন মতে টিকে আছে। বাকিগুলো হাওয়া হয়ে গেছে। তালিকায় থাকলেও বহু পার্কের কোন অস্তিত্ব নেই। মোহাম্মদপুর এবং গুলশান-বনানী এলাকার পার্কগুলো তুলনামূলকভাবে ভাল অবস্থায় থাকলেও অন্য এলাকার পার্ক আস্তে আস্তে বেদখল হয়ে গেছে কিংবা হওয়ার উপক্রম ঘটেছে। একসময় জনসংখ্যার অনুপাতে রাজধানীতে পর্যাপ্ত পার্ক ও খেলার মাঠ ছিল। সময়ের ব্যবধানে নগরীতে লোকসংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ। বাড়তি মানুষের জন্য নূতন পার্ক ও খেলার মাঠ সৃষ্টির প্রয়োজন ছিল; কিন্তু বাস্তবে হয়েছে এর বিপরীত। বিভিন্ন এলাকার অনেক পুরনো পার্ক ও খেলার মাঠ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ফলে নগরজীবনের দৈনন্দিন ক্লান্তি ঘুচাতে নাগরিকদের ছায়াশীতল কোন স্থানে নিরিবিলি সময় কাটার সুযোগ বহুলাংশে অপসৃত হয়েছে, শিশু-কিশোরদের বিকাশের অন্যতম অনুষঙ্গ খেলাধুলা করার স্থানও বহুক্ষেত্রে দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে ও স্বাস্থ্যসচেতন নাগরিকের শরীরচর্চা ও নির্মল পরিবেশের সুযোগও ক্রমশ সঙ্কুচিত হচ্ছে। এসব ঘাটতিতে ঢাকা অনেক ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে ধুলা-ধোঁয়া-জটে আক্রান্ত এক শহরে। বলাবাহুল্য, এই পরিস্থিতি বসবাসের জন্য অনুকূল নয়। রাজপথের প্রজাদের বাহন রাজধানীর রাজপথে রয়েছে বাস-মিনিবাস ছাড়াও নানা ধরনের বাহন। তার কিছু কিছু নি¤œ আয়ের মানুষের জন্যে সাশ্রয়ী। ‘লেগুনা’ তেমনই একটি। যেসব সড়কে বাস চলে না, সেখানে যাত্রীরা অনেকটা বাধ্য হয়েই এসব যানবাহনে চলাচল করেন। বিপুল সংখ্যক নারীর জন্যও এই উদ্ভট নাম ও আকৃতির মোটরযানের বিকল্প নেই। গাদাগাদি করে বসানো হয় যাত্রীদের। পাদানিতেও তোলা হয় একাধিক যাত্রীকে। বলাবাহুল্য এসব যানের অধিকাংশই নিয়মরীতির তোয়াক্কা করে না। ফিটনেস সার্টিফিকেটের মেয়াদ বহু আগেই ফুরিয়ে গেছে এমন যানই চলে বেশি। আর চালকের লাইসেন্স? সেসব বলে আর কী হবে। ট্রাক-বাসের হেলপার কয়েক বছরের মধ্যে ড্রাইভার বনে যায়। এসব হিউম্যান হলারের দশা আর কী হবে! অনেক ক্ষেত্রে রুট পারমিটও থাকে না। হঠাৎ করেই লেগুনার ভাড়া দ্বিগুণ হয়ে গেছে। কী কারণ? লেগুনা কি বিশেষ ফুয়েলে চলে! তা কি দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে? আসল ব্যাপারটি ভিন্ন। লেগুনার মালিকদের ঘাটে ঘাটে চাঁদা দিতে হয়। নিজের দুর্বলতা ঢেকে ব্যবসা করার জন্যই এই অবৈধ লেনদেন। একটি জাতীয় দৈনিকেই গত সপ্তাহে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ঢাকায় লেগুনা থেকে মাসে কোটি টাকার চাঁদাবাজি চলছে। লেগুনার মালিকরা চাঁদা হিসেবে যে অর্থ দ- দেন সেটা আদায় করে নেয়া হয় যাত্রীদের কাছ থেকে। ফলে যাত্রীদের এই বাড়তি ভাড়া গোনা। যাত্রীরা তা দিতে বাধ্য হন। কারণ বিকল্প নেই। তারা ভাবেন, রিকশার চেয়ে তো কম ব্যয় পড়ছে! বলিহারি ঢাকা! ২৫ মে ২০১৫ [email protected]
×