ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্পের বহুমাত্রিক সম্ভারে শুরু জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২৫ মে ২০১৫

শিল্পের বহুমাত্রিক সম্ভারে শুরু জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দড়িতে ঝুলছে পেট্রোলবোমায় পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া একটি গাড়ি। আর তার নিচে পলিমাটিতে সবুজ তৃণভূমি। সেখানে দগ্ধ হয়ে শরীরটা কুঁকড়ে পড়ে আছে ওই গাড়ির আরোহী। আগুন খেলা শীর্ষক মোহাম্মদ হাসানুর রহমানের সৃজিত স্থাপনাশিল্পটি বিশেষভাবে নজর কাড়ছে দর্শনার্থীদের। দর্শকদের যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে কিছুদিন আগে আন্দোলনের নামে ঘটে যাওয়া বীভৎস রাজনৈতিক সহিংসতার কথা। সমকালীন প্রেক্ষাপটে নির্মিত এই শিল্পকর্মটি এখন শোভা পাচ্ছে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার দ্বিতীয় তলার প্রদর্শনালয়ে। উপলক্ষ একুশতম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী ২০১৫। বহুমাত্রিক শিল্পের সম্ভারে রবিবার থেকে নবীন-প্রবীণ শিল্পীদের অংশগ্রহণে জাতীয় পর্যায়ের এই প্রদর্শনী। শিল্প বৈভবের এ আয়োজনে অংশ নিচ্ছেন সারা দেশের বাছাইকৃত ২৬১ চারুশিল্পী। প্রদর্শিত হচ্ছে তাঁদের সৃজিত রকমারি বিষয়ের ২৭৩টি শিল্পসম্ভার। উপস্থাপিত হচ্ছে তেলরং, এ্যাক্রেলিক, জলরং, গোয়াশ, ট্যাপেস্ট্রি, পেন্সিল ও মিশ্রমাধ্যমে আঁকা বহুমাত্রিক ১৫৮টি চিত্রকর্ম। রয়েছে কাঠ, সিমেন্ট, পাথর, প্লাস্টার, সিরামিকসহ নানা মাধ্যমে গড়া ৪৯টি ভাস্কর্য। সেই সঙ্গে আছে উডকাট, এচিং, ড্রাই পয়েন্ট, লিথোগ্রাফ, এচিং এ্যাকুয়ান্টি ও মিশ্রমাধ্যমে সৃজিত ৩২টি ছাপচিত্র। ঠাঁই পেয়েছে ৩১টি স্থাপনা ও ভিডিও স্থাপনা। উপস্থাপিত হচ্ছে তিনটি পারফরমেন্স আর্ট। শিল্পের এই বৃহৎ উৎসব শিল্পরসিকদের জন্য সৃষ্টি করেছে একসঙ্গে দেশের প্রতিষ্ঠিত ও নবীন শিল্পীদের শিল্পকর্ম অবলোকনের অবারিত সুযোগ। রবিবার জ্যৈষ্ঠের বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে প্রদর্শনীর সূচনা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত । বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও বরেণ্য চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রদর্শনীর ‘বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার’সহ ১০টি শাখায় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধান অতিথি । প্রদর্শনীর গুরুত্ব তুলে ধরে রফিকুন নবী বলেন, শিল্পীদের জন্য নিজের সর্বোচ্চ মেধার প্রকাশ ঘটানো শিল্পটি তুলে ধরার দারুণ এক সুযোগ জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী। অন্যদিকে এটা নবীন শিল্পীদের জন্য সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী। এতে অংশগ্রহণের মধ্যে সম্পৃক্ত আছে একজন শিল্পীর স্বীকৃতির বিষয়টি। পরবর্তীতে শিল্পী-জীবনের নানা তৎপরতায় এটি বিশেষভাবে বিবেচ্য হয়। এ কারণেই শিল্পীর জীবনে এই প্রদর্শনীর গুরুত্ব অসীম। সমাজজীবনে শিল্পীদের সম্পৃক্ততা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের যে কোন সঙ্কটময় মুহূর্তে আমরা শিল্পীরা জাগ্রত হয়েছি। রেখেছি নিজেদের ভূমিকা। আর প্রদর্শনীর পুরস্কারপ্রাপ্তি প্রসঙ্গে বলেন, যে কোন শিল্পীর জন্য এ পুরস্কার থেকে অনুপ্রেরণার উৎসব। তবে পুরস্কারপ্রাপ্তিতে অতিমাত্রায় উৎফুল্ল হওয়া যাবে না, সেক্ষেত্রে আবার নিমজ্জিত হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। আসাদুজ্জামান নূর বলেন, যে কোন ছবি দেখলেই আমার মধ্যে আফসোস তৈরি হয়। বার বার মনে হয়, ছবি আঁকাটা কেন আমার শেখা হলো না। যে কোন সৃজনশীল কাজ দেখলেই এমনটা মনে হয়। অথচ আমার নিজের শিল্প জীবনের কাজটাকে পছন্দ হয় না। জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীর তাৎপর্য তুলে ধরে তিনি বলেন, এ প্রদর্শনী গুরুত্বপূর্ণ এ জন্য যে এর মাধ্যমে নবীন শিল্পী উঠে আসে। একপর্যায়ে তাঁরা প্রতিষ্ঠিত শিল্পীতে পরিণত হয়। এর পর তিনি শিল্পকলাবিষয়ক সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কিছু পদক্ষেপের উল্লেখ করে বলেন, ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ছাড়কৃত ১ কোটি টাকার ছবি কেনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। বরেণ্য শিল্পীদের দ্বারা নির্বাচিত কমিটি নির্ধারণ করবেন কোন্ ছবিগুলো কেনা হবে। ভবিষ্যতে এই চিত্রশালায় একটি স্থায়ী প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। যেখানে সারা বছরই নতুন নতুন ছবি প্রদর্শনী হবে। ছাপচিত্র কারখানা স্থাপনেরও পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে বসে শিল্পীরা তাঁদের শিল্প সৃজন করবেন। একটি ইনডিপেনডেন্ট আর্ট গ্যালারি নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি শিল্পকলায় শিল্পীদের নির্ধারিত একটি আড্ডার স্থান নির্ধারণের ভাবনাও রয়েছে পরিকল্পনায়।
×