ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অর্থপাচার বন্ধে পদক্ষেপ দাবি ২১ সংগঠনের

প্রকাশিত: ০৫:২২, ২৫ মে ২০১৫

অর্থপাচার বন্ধে  পদক্ষেপ দাবি  ২১ সংগঠনের

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আগামী ২০১৫-১৬ বাজেট বাস্তবায়নের আগে দেশ থেকে অর্থ পাচার বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে ২১টি অধিকার ভিত্তিক সংগঠন। রবিবার বেসরকারী এনজিও সংস্থা ইকুইটিবিডি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। এতে বলা হয়, অভ্যন্তরীণ সম্পদের যোগান বৃদ্ধি ও উন্নয়ন বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হলে অর্থ পাচার বন্ধ করার বিকল্প নেই। একই সঙ্গে অর্থ পাচার বন্ধে আট দফা দাবি পেশ করেন সংগঠনের নেতারা। ইকুইটিবিডি’র আহসানুল করিম বাবর বলেন, গ্লোবাল ফিন্যাসিয়াল ইন্টিগ্রেটি (জিএফআই)-এর ২০১৪ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০০৩ সাল থেকে ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে ১ হাজার ৮৪১ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে। এই টাকা বাংলাদেশে থাকলে সরকার প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় সম্ভব। কৃষক ফেডারেশনের বদরুল আলম বলেন, বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় আমরা বৈদেশিক ঋণ ছাড়া প্রয়োজনীয় অর্থায়ন করতে পারি না। এই ব্যর্থতা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে রাজস্ব বাড়ানোর জন্য অর্থ পাচার রোধ করার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। অনলাইন নলেজ সেন্টারের প্রদীপ কুমার রায় বলেন, সুইস ব্যাংকে টাকা জমানোর হার বাংলাদেশীদের ক্ষেত্রে ক্রমেই বাড়ছে। সরকারকে এ বিষয়ে একটি আইনগত পদক্ষেপ নিতে হবে এবং স্বচ্ছতা বজায় রাখার স্বার্থে অর্থ জমা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। উন্নয়ন ধারা ট্রাস্টের আমিনুর রসুল বাবুল বলেন, এ পর্যন্ত ২ হাজার ৩৭০ জন বাংলাদেশী মালেশিয়ার ‘সেকেন্ড হোম’ নীতিমালার সুবিধা গ্রহণ করেছেন। এতে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। কিভাবে এই অর্থ লেনদেন হয়েছে তার তথ্য সরকারকে তদন্তের মাধ্যমে প্রকাশ করার দাবি জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনের সঞ্চালক রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, আমাদের দরিদ্র শ্রমিক বিদেশ থেকে ডলার পাঠাচ্ছে ও গার্মেন্টস কর্মীরাই তাদের শ্রম দিয়ে বিদেশী মুদ্রা আয় করছে আর সেই ডলার দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে। আমাদের দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও শ্রমিক পরিবারের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্যই সরকারকে অর্থ পাচার বন্ধ করতে হবে এবং তাদের উন্নয়নে বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে অর্থ পাচার বন্ধে আট দফা দাবি পেশ করেন সংগঠনের নেতারা। দাবিগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশী নাগরিক বা কোন দ্বৈত নাগরিকত্ব সম্পন্ন বাংলাদেশীর বিদেশে সম্পদ ও ব্যাংক এ্যাকাউন্ট থাকলে তার বিবরণী প্রতি বছর বাংলাদেশে জমা দিতে হবে। তথ্য গোপন ও কর ফাঁকি দিলে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে যেসব বাংলাদেশী নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন, তাদের সকল অনৈতিক আর্থিক লেনদেনের তথ্য পরীক্ষা করে শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে। সুইজারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ব্যাংক লেনদেনের স্বচ্ছতার উপর আন্তঃদেশীয় চুক্তি সম্পাদন করতে হবে। আইনগত শাস্তির বিধান রেখে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার বন্ধ করতে হবে। কোন সরকারী বা বেসরকারী চাকরিজীবী হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠালে তাকে বরখাস্ত করতে হবে। বেনামী সম্পদ কেনা বন্ধ করার জন্য ভারতের সম্প্রতি গৃহীত পদক্ষেপ অনুসরণ করে আইন প্রণয়ন করতে হবে। যেমন, ২০০০ ডলারের উপর যে কোন কেনাকাটা ও লেনদেনের ক্ষেত্রে টিন নাম্বার ব্যবহার এবং এক্ষেত্রে নগদ লেনদেন নিষিদ্ধ করা। অন্যথায় বেনামী সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা।
×