ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

কালবৈশাখীতে সারাদেশে নিহত দশ আহত শতাধিক

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ২৫ মে ২০১৫

কালবৈশাখীতে সারাদেশে নিহত দশ আহত শতাধিক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রশান্তির বৃষ্টি হলেও শনিবার রাতের কালবৈশাখী ঝড়ে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ঝড়ে সারাদেশে ১০ জনের মৃত্যু ঘটে, আহত হয় শতাধিক। বজ্রপাত, দেয়াল ও গাছ চাপায় এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। বিধ্বস্ত হয়েছে শত শত ঘরবাড়ি। উপড়ে ও ভেঙ্গে পড়ে কয়েক হাজার গাছপালা। কয়েক শ’ খুঁটি ভেঙ্গে পড়ে অনেক এলাকার বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। ঘরবাড়ি হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে শত শত পরিবার। বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজারের মহেশখালী চ্যানেলে দমকা হাওয়ায় ২০টি ফিশিং ট্রলার ডুবে যায়। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি। রবিবার দিনভর রাজধানীর আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন, বিরাজ করে প্রশান্তির আবহাওয়া। আজ সোমবারও দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হতে পারে। স্টাফ রিপোর্টার, নিজস্ব সংবাদদাতা, আবহাওয়া অফিস এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রসমূহ জানায়, দিনাজপুরে গর্ভবতী মহিলা ও নানা-নাতিসহ ৫ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক। কক্সবাজারে বজ্রপাতে ১ জনের মৃত্যু ও আহত ১ জন, লক্ষ্মীপুরে ঝড়ে আতঙ্কে মৃত্যু হয় ১ মহিলার, গাছ ও ঘরচাপায় রংপুরে ২ জনের মৃত্যু এবং জয়পুরহাটে দেয়ালচাপায় মৃত্যু হয় ১ জনের। স্টাফ রিপোর্টার দিনাজপুর থেকে জানান, দিনাজপুরে শনিবার রাতের কালবৈশাখী ঝড়ে গর্ভবতী মহিলা ও নানা-নাতিসহ ৫ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শতশত ঘরবাড়ি, ভেঙ্গে ও উপড়ে গেছে হাজার হাজার গাছ। শনিবার রাতে দু’দফায় কালবৈশাখী ঝড়ের তা-ব শুরু হয় দিনাজপুরের সদর, ফুলবাড়ী, চিরিরবন্দর, নবাবগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি উপজেলায়। ঘূর্ণিঝড়ের তা-বে দেয়াল ধসে ও গাছচাপা পড়ে নিহত হয়েছে ৫ জন। নিহতরা হলেনÑ ফুলবাড়ী উপজেলার খয়েরপুকুর গ্রামের মুকুল চন্দ্র রায়ের গর্ভবতী স্ত্রী মিতু রায় (২২), নবাবগঞ্জ উপজেলার হাতিশাল গ্রামের মৃত মোশারফ আলীর ছেলে সিরাজুল ইসলাম (৬০) ও তার নাতি সাব্বির (৮), চিরিরবন্দর উপজেলার কামারপাড়া গ্রামের মৃত সবেত আলীর স্ত্রী আলেয়া বেগম (৬৫) এবং একই উপজেলার সুকদেবপুর গ্রামে এক মহিলা নিহত হয়েছেন। স্টাফ রিপোর্টার রংপুর থেকে জানান, শনিবার রাতে এবং রবিবার ভোরে রংপুরের বিভিন্ন এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড়ে সহস্রাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত। উপড়ে গেছে অনেক গাছপালা এবং বিদ্যুতের পিলার। গাছচাপা পড়ে মারা গেছে এক মহিলাসহ দুইজন। ঝড় প্রথম আঘাত হানে শনিবার রাত ৯টার দিকে। এ সময় নগরীর সাতমাথা এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সার ওপর গাছ উপড়ে পড়লে আশরাফুল ইসলাম (৩৫) নামের এক ব্যক্তি গুরুতর আহত হন। তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে তিনি মারা যান। এ সময় রংপুর সদর, কাউনিয়া, পীরগাছা, মিঠাপুকুর, পীরগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় সহস্রাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি ও গাছপালা উপড়ে পড়ে। এতে আহত হন কমপক্ষে ২৫ জন। ঝড় দ্বিতীয়বার আঘাত হানে রবিবার ভোরে। এ সময় পীরগাছায় জয়নব (৪০) নামের এক মহিলা ঘরচাপা পড়ে নিহত হন। মাগুরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউর রহমান শাহ বলেন, শনিবার রাত নয়টা থেকে টর্নেডো চলে ২০ মিনিটি। এরপর নামে মুষলধারে বৃষ্টি। আকস্মিক টর্নেডোর আঘাতে ইউনিয়নের এক থেকে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কুটিপাড়া, কলেজপাড়া, বানিয়াপাড়া, মিয়াপাড়া, বালাপাড়া, তেলিপাড়া ও কাজীপাড়ার ৪ হাজার কাঁচা, আধাপাকা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। উপড়ে পড়ে অসংখ্য গাছপালা। স্টাফ রিপোর্টার কক্সবাজার থেকে জানান, কক্সবাজার সদরের চৌফলদ-ীতে বজ্রপাতে এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। একই ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছে তার পিতা। রবিবার সকাল সাড়ে নয়টায় চৌফলদ-ী খামারপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। বজ্রসহ বৃষ্টি শুরু হলে লবণ মাঠ থেকে পলিথিন তুলে আনতে যায় মিজানুর রহমান (১৫) ও তার পিতা রহমত আলী। এ সময় হঠাৎ বিকট শব্দে বজ্রপাত হলে পিতা-পুত্র অজ্ঞান হয়ে পড়ে। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে ঈদগাঁও হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা মিজানকে মৃত ঘোষণা করেন। মিজান চৌফলদ-ী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিল বলে জানা গেছে। নিজস্ব সংবাদদাতা জয়পুরহাট থেকে জানান, শনিবার রাতে জয়পুরহাট জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যায় প্রচ- কালবৈশাখী ঝড়। ঝড়ে দেয়ালচাপা পড়ে ১ জন নিহত এবং কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছে। রাত সোয়া একটায় শুরু হওয়া ১৫ মিনিট স্থায়ী এ ঝড়ে জয়পুরহাট পৌর এলাকার হাড়াউল গ্রামে আব্দুল মান্নানের হোটেল কর্মচারী জাহিদুল ইসলাম (৩৫) দেয়ালচাপায় মারা যায়। নিজস্ব সংবাদদাতা গাইবান্ধা থেকে জানান, গাইবান্ধা জেলায় শনিবার রাতে প্রচ- ঝড়ে সাদুল্যাপুর, গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ী, সুন্দরগঞ্জ ও সদরসহ ৫টি উপজেলায় প্রায় ১০ হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি এবং শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ ও আংশিকভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে। ঝড়ে গাছচাপা পড়ে কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছে। নিজস্ব সংবাদদাতা লক্ষ্মীপুর থেকে জানান, লক্ষ্মীপুরে রবিবার ভোরে জেলার বিভিন্ন স্থানে ঘূর্ণিঝড়ে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বেশ কয়েকটি গ্রামের বিদ্যুত সংযোগ। এদিকে রামগঞ্জ উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের ফতেহপুর গ্রামে ঝড়ের সময়ে নিজ ঘরের পাশে আম কুড়াতে গিয়ে আতঙ্কে নাসরিন আক্তার নামে এক প্রবাসীর স্ত্রী মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিহত নাসরিন প্রবাসী সোলায়মানের স্ত্রী।
×