ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সোমবার থেকে চাঁদা গ্রহণ শুরু

ইস্যু মূল্যের চেয়ে সম্পদ মূল্য কম আমান ফিডের

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ২৪ মে ২০১৫

ইস্যু মূল্যের চেয়ে সম্পদ মূল্য কম আমান ফিডের

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আগামীকাল সোমবার থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে চাঁদা তোলা শুরু করবে আমান ফিড। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের সঙ্গে ২৬ টাকা প্রিমিয়াম নিচ্ছে কোম্পানিটি। অর্থাৎ ৩৬ টাকা ইস্যু মূল্যে কোম্পানিটি পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের অনুমোদন পেয়েছে। ২ কোটি শেয়ার ছেড়ে পুঁজিবাজার থেকে ৭২ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিটি শেয়ারের ইস্যু মূল্য ৩৬ টাকা হলেও কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদের পরিমাণ আইপিও পরবর্তী সময়ে দাঁড়াবে ৩২.০৮ টাকায়। এর ফলে প্রতি শেয়ারে ৩.৯২ টাকা করে কম সম্পদের মালিক হবেন বিনিয়োগকারীরা। কোম্পানিটির তথ্য বিবরণী (প্রসপেক্টাস) বিশ্লেষণে এ তথ্যের প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রসপেক্টাসে দেয়া তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৪ সালের ৩০ জুন শেষ হওয়া অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী, আমান ফিডের শেয়ারপ্রতি সম্পদ (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৩০.৭৭ টাকায়। ৩৬ টাকা দরে আইপিওতে আবেদনের পর কোম্পানির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য গিয়ে দাঁড়াবে ৩২.০৮ টাকায়। এক্ষেত্রে একজন বিনিয়োগকারী ৩৬ টাকার বিনিয়োগের বিপরীতে ৩২.০৮ টাকার সম্পদের মালিকানা পাবেন। অর্থাৎ কোম্পানিটি সম্পদের তুলনায় বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে বেশি অর্থ সংগ্রহ করছে। বাংলাদেশ এ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড (বিএএস)-১২ অনুযায়ী, হিসাবভিত্তিক ও করভিত্তিক (এ্যাকাউন্টিং বেসিস ও টেক্স বেসিস) হিসাবে স্বল্প মেয়াদী পার্থক্যের ক্ষেত্রে বিলম্বিত কর (ডেফার্ড ট্যাক্স) গণনা করতে হয়। এক্ষেত্রে জমি অবচয়যোগ্য না হওয়ায় ও দীর্ঘ মেয়াদী পার্থক্য সৃষ্টি হওয়ার কারণে বিলম্বিত কর (ডেফার্ড ট্যাক্স) গণনা করা হয় না। কিন্তু আমান ফিড কর্তৃপক্ষ পুনর্মূল্যায়নের কারণে বৃদ্ধি পাওয়া জমির উপরে ডেফার্ড ট্যাক্স গণনা করেছে। ফলে ২০১২-১৩ অর্থবছরে কোম্পানির মুনাফার পরিমাণ কমে গেছে। দেখা গেছে, নতুন তালিকাভুক্ত হওয়া অনেক কোম্পানি জমি পুনর্মূল্যায়নজনিত কারণে বৃদ্ধি পাওয়া অংশের উপরে ডেফার্ড ট্যাক্স গণনা করেনি। যার মধ্যে রয়েছে রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস (আরএসআরএম), খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, সাইফ পাওয়ারটেকসহ অনেক কোম্পানি। চার্টার্ড এ্যাকাউন্টেন্ট ওবায়দুর রহমান (এফসিএ) বলেন, জমির রিভ্যালুয়েশন সার প্লাসের উপর ডেফার্ড ট্যাক্স গণনা প্রযোজ্য না। কারণ এটি এ্যাকাউন্টিং বেসিস ও ট্যাক্স বেসিসের মধ্যে টেমপোরারি নয় পারমানেন্ট ডিফারেন্স (স্বল্প মেয়াদী নয় স্থায়ী পার্থক্য)। আমান ফিডের প্রসপেক্টাসের ৭১ পৃষ্ঠায় নোট ২.০৭-এ উল্লেখ করা হয়েছে, ইমপেয়ারমেন্ট টেস্ট (অবনতির বা ক্ষতির পরীক্ষা) করার মতো কোন ইন্ডিকেশন (লক্ষণ) নেই। কোম্পানিটি প্রায় ৮২ কোটি টাকার ফিক্সড এ্যাসেট ব্যবহার করে। এমতাবস্থায় ইমপেয়ারমেন্ট করার মতো কোন ইন্ডিকেশন থাকাটা স্বাভাবিক। ইমপেয়ারমেন্ট টেস্ট করা হলে একটি কোম্পানির ব্যয় বেড়ে মুনাফার পরিমাণ কম হয়। বিভিন্ন গ্রাহকের কাছে আমান ফিডের প্রায় ১২৪ কোটি টাকার পাওনা রয়েছে। কিন্তু এ জন্য আর্থিক প্রতিবেদনে প্রভিশনিং রাখেনি। এর মাধ্যমে কোম্পানি ব্যয় কম দেখিয়ে মুনাফা বেশি দেখিয়েছে। কোম্পানিটি যদি দেনাদারের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে ব্যর্থ হয় তাহলে ভবিষ্যতে আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সংশ্লিষ্টরা জানান, দেনাদারের কাছে টাকা পাওনা থাকলে অবশ্যই অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতি গঠন করতে হবে। তবে ১০০ ভাগ রফতানিমুখী কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে পাওনা এলসির মাধ্যমে আদায় গ্যারান্টি থাকায় এক্ষেত্রে প্রভিশনিং করতে হয় না। আমান ফিড কর্তৃপক্ষ আসবাবপত্রের উপর ১০ শতাংশ হারে রিডিউসিং ব্যালেন্স মেথডে অবচয় চার্জ করেছে। যাতে আসবাবপত্রের আয়ুষ্কাল প্রায় ২০ বছর ধরা হয়েছে। সাধারণত আসবাবপত্র ২০ বছর ব্যবহার করা যায় না। এক্ষেত্রে কোম্পানি অবচয় চার্জ ১০ শতাংশ হারে করে ব্যয় কম দেখিয়েছে। এর মাধ্যমে কোম্পানি মুনাফা ও সম্পদের পরিমাণ বেশি দেখিয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। শ্রম আইন অনুযায়ী, ২০০৬ সাল থেকে নিট আয়ের ৫ শতাংশে শ্রমিক ফান্ড গঠন বাধ্যতামূলক হলেও আমান ফিড কর্তৃপক্ষ এটি গঠন করেছে ২০১১ সাল থেকে। এর মাধ্যমে কোম্পানিটি কর্মচারীদের সুবিধাবঞ্চিত করেছে। কোম্পানির তথ্যে আরও দেখা গেছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৩-১৪ অর্থবছরে কোম্পানির উৎপাদিত পণ্যের বিক্রয় বাড়লেও মোট মুনাফা (গ্রস প্রফিট) কমেছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে বিক্রয়ের পরিমাণ ছিল ২৫৪ কোটি টাকা আর মোট মুনাফার পরিমাণ ৫৯ কোটি টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বিক্রয়ের পরিমাণ ১০ কোটি বেড়ে ২৬৪ কোটি টাকা হয়েছে। তবে মোট মুনাফা ২০১২-১৩ অর্থবছরের চেয়ে ৩ কোটি কমে হয়েছে ৫৬ কোটি টাকা। এদিকে ২০১২-১৩ ও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে নিট মুনাফার পরিমাণ প্রায় ২০১১-১২ অর্থবছরের কাছাকাছি হয়েছে। ২০১১-১২ অর্থবছরে নিট মুনাফার পরিমাণ ছিল ২৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। যার পরিমাণ হয়েছে ২০১২-১৩ অর্থবছরে ২৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে হয়েছে ২৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা। অর্থাৎ কোম্পানিটির মুনাফা আটকে রয়েছে ২৯ কোটি টাকার ঘরে।
×