ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আপাতত নিশ্চয়তা

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ২৪ মে ২০১৫

আপাতত নিশ্চয়তা

অবশেষে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাচারের শিকার হয়ে সাগরে আটকেপড়া প্রায় ৭ হাজার অবৈধ অভিবাসীকে ‘আপাতত’ আশ্রয় ও মানবিক সহায়তা দিতে রাজি হয়েছে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া। জানা গেছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় এক বছরের জন্য এদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশিরভাগ বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গাকে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার অস্থায়ী আশ্রয় ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। তবে বাংলাদেশীদের উদ্ধারের পর প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে দেশে ফেরত পাঠানো হবে। এদিকে সাগরে আটকেপড়া মানুষকে উদ্ধারে আন্তর্জাতিক উদ্যোগের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করছে। বিলম্বে হলেও এই সিদ্ধান্তে অসহায় মানুষগুলোর জীবন রক্ষা পাবে। বেশ কিছুদিন ধরেই সাগরে ভেসে থাকা মানুষের খবর আসছে। খবর আসছে মৃত্যুর। খাবার নেই, পানীয় নেই, নেই আশ্রয়। ফুরিয়ে গেছে জ্বালানি। খাবার না পেয়ে অনাহারে মরছে মানুষ। ভাগ্যান্বেষণে উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে কর্মের সন্ধানে যাচ্ছে নানা দেশের বিপুলসংখ্যক কর্মক্ষম মানুষ। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও এমন ঝুঁকিপূর্ণ পথ বেছে নিচ্ছে তারা। চাকরি নামের সোনার হরিণ ধরতে দালালদের মাধ্যমে মৃত্যুপথের যাত্রী হচ্ছে বাংলাদেশীরাও। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে এমন হতভাগ্যদের সংখ্যা বেড়েই চলবে। কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন স্থান দিয়ে এই মানবপাচারের ঘটনাগুলো ঘটছে। এই সুযোগে মিয়ানমারের রোহিঙ্গারাও এই পথ ব্যবহার করছে। এদিকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দরিদ্র অসহায় মানুষকে অল্প টাকায় সহজে বিদেশ পাঠানোর লোভ দেখিয়ে প্রলুব্ধ করছে তারা। নানা সময়ে এই পাচার রোধে বাংলাদেশ সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু তারপরও থামছে না এই উপকূল দিয়ে মানবপাচারের ঘটনা। সম্প্রতি থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া সীমান্তের বন্দীশিবিরে পাচার হওয়া পাঁচ শতাধিক অভিবাসীকে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে। থাইল্যান্ডে গভীর জঙ্গলে সন্ধানকৃত গণকবর থেকে কিছুদিন আগে ২৬ বাংলাদেশীসহ বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা অভিবাসীর দেহাবশেষও উদ্ধার করা হয়েছে। অনেকেই মনে করেন, থাইল্যান্ডের জঙ্গলে গণকবর আবিষ্কৃত না হলে আরও অনেক পাচারের ঘটনা হয়ত দৃষ্টির আড়ালে থেকে যেত। এই অভিবাসীদের কিছু অংশ বাংলাদেশী হলেও বেশিরভাগই মিয়ানমারের রোহিঙ্গা। মিয়ানমার সরকার বলছে, এদের ব্যাপারে দায়িত্ব নেবে না তারা। অথচ, মিয়ানমারের অমানবিক ও বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হয়েই রোহিঙ্গারা বিভিন্ন দেশের উবাস্তু হচ্ছে। কয়েক দশক ধরে রোহিঙ্গা সমস্যাটি বাংলাদেশের ওপর বোঝা হয়ে আছে। এখনও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর চাপ রয়েছে বাংলাদেশের। এরা এদেশে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট করছে। রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে বরাবরই জাতিসংঘ এবং পশ্চিমা দেশগুলো কার্যত নীরব। এরা রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতি দেখালেও মিয়ানমার সরকারকে সোজাপথে আনতে পারেনি। এতদিন কথা বলেনি যুক্তরাষ্ট্রও। তবে আশার কথা মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে নমনীয় হতে চাপ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওবামা প্রশাসন। বাংলাদেশও মনে করে রোহিঙ্গা ইস্যুটির যথাযথ সমাধান হওয়া দরকার। তা না হলে এই সঙ্কটটি হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। যেসব স্থানে বাংলাদেশীরা আশ্রয়ে বা আটকে আছে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা দরকার। দেশের বিভিন্ন স্থানে মানবপাচারকারী দালালরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। মানুষ যাতে এসব প্রতারকের খপ্পরে না পড়ে সেজন্য কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে। জীবিকার পথ নিশ্চিত হলে মানুষ দালালদের ফাঁদে পা দেবে না। আর এটা নিশ্চিত করা গেলে নির্মূল হয়ে যাবে মানবপাচার। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ সফল হলে মিটে যেতে পারে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সমস্যাও।
×