ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভূমিকম্পের পর ঝুঁকিপূর্ণ, ক্লাস গাছতলায়

পাবনায় ৬১ প্রাইমারি স্কুল ভবন জরাজীর্ণ

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২৩ মে ২০১৫

পাবনায় ৬১ প্রাইমারি স্কুল ভবন জরাজীর্ণ

নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা, ২২ মে ॥ সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে জেলায় ৬১টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এত প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করায় শিক্ষার্থীদের খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করতে হচ্ছে। এসব ভবন নির্মাণ করা হয়েছে নব্বইয়ের দশকে। এত স্বল্প সময়ে ভবনগুলোর জীর্ণদশায় শিক্ষক অভিভাবকরা সংশ্লিষ্ট দফতরের প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদের অতি মুনাফা লোভকেই দায়ী করেছেন। ১৯৯৫-’৯৬ অর্থবছরে নির্মিত আটঘরিয়া উপজেলার হাঁপানিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। ছাদের প্লাস্টার খুলে পড়ায় ১১ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। ছাদ দিয়ে পানি পড়ায় শিক্ষার্থীরা এখন ক্লাস করছে গাছতলায়। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুস সালাম জানিয়েছেন, স্কুলের চারটি কক্ষের অবস্থা খুবই খারাপ হওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীরা এখন গাছতলায় ক্লাস করছে। একটু বৃষ্টি হলেই স্কুল ছুটি দিতে হয়। একই অবস্থা সদর উপজেলার টেবুনিয়া ওয়াসিম পাঠশালা, তাজিয়ারপাড়া, তাজপাড়া, সিংগা, ভজেন্দ্রপুর, নারায়ণপুর, দক্ষিণরাঘবপুর, শিবরামপুর মডেল স্কুল, শহীদ অশোক স্কুল, হেমায়েতপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর বড়দিকশাইল, শিবরামপুর মিলন সংঘ স্কুল, আদর্শ স্কুল ও পলিটেকনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়। হাঁপানিয়া সরকারী বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘এ বিদ্যালয়টির নির্মাণ কাজ এতটাই নি¤œমানের যে সামান্য ঝড়বৃষ্টিতেই ছাদ থেকে সিমেন্টের চাপ খসে পড়ে। আর ভূকম্পনের সময় স্কুলটির পুরো ছাদ ধসে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। টেবুনিয়া ওয়াসিম পাঠশালার সভাপতি জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন, ‘আমার বিদ্যালয় ভবনটি ভূকম্পনে ঝুঁকিপূর্র্র্ণ হয়েছে। দোতলায় ক্লাস বন্ধ করে দিয়েছি।’ পাটেশ্বর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল্লাহ জানিয়েছেন, ‘এ বিদ্যালয় ভবনটি নির্মাণ হয়েছে মাত্র ১৫ বছর আগে। অথচ এটি এখন জরাজীর্ণ। আমরাও খোলা আকাশের নিচে ক্লাস নিচ্ছি।’ সাঁথিয়া উপজেলার সিলন্দা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, রায়েকমারি, সোনাতলা, কাজিপুর, কে পদ্মবিলা, সামান্যপাড়া, গোটেংরা, ভাটোপাড়া সোনাতলা ও পিয়াদহ প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুজানগর উপজেলার বিন্যাডাঙ্গি, নরসিংহপুর, মালিফা, সুফিয়া খাতুন স্কুল, বনকোলা-২, চালনা ও বনকোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়, চাটমোহর উপজেলার সেনগ্রাম, বালুদিয়ার, বরাদ্দনগর, বাহাদূরপুর, গুনাইগাছা, ঝাকড়া, ভেংড়ি ও স্থল স্কুল, বেড়া উপজেলার জাতসাকিনী, কোমরপুর, রাকশা, সিন্দুরী ও ভবানীপুর স্কুল, ফরিদপুর উপজেলার হরিপুর, খাগুড়িয়া, দক্ষিণ বৃন্দলাহিড়িবাড়ি ও খাগরবাড়িয়া স্কুল, আটঘড়িয়া উপজেলার রঘুনাথপুর, পাটেশ^র, রাঘপপুর, গোকুলনগর, পারখিদিরপুর, সুজাপুর ও দেবোত্তর স্কুল, ভাঙ্গুড়া উপজেলার সারুটিয়া, নূরনগর, পাটুল ও দোহারিগ্রাম স্কুল এবং ঈশ^রদী উপজেলার মাজদিয়া ইসলামপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। এসব প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন ১৯৯৪ থেকে ২০০৬ সময়ে নির্মিত। মাত্র ১৫ থেকে ২০ বছরে পাবনা জেলার ৬১টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের জীর্ণ দশায় শিক্ষক অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ উদ্বিগ্ন। স্কুলশিক্ষক আব্দুর রহিম বললেন, প্রকৌশলী এবং বিত্তবান ঠিকাদাররা শুধু নিজেদের লাভটাই হিসাব করে নি¤œ মানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে ইমারত নির্মাণ করেছেন। শিশু-কিশোরদের জীবনের কথাটি একবারও ভাবেননি। এটাই আমাদের দুর্ভাগ্য। তিনি সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রকৌশলীদের দেশপ্রেম নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম জানিয়েছেন, ঝুকিপূর্ণ এ ভবন দ্রুত মেরামতের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তিনি শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
×