ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ছায়ানটে প্রাণের উচ্ছ্বাসে জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলন শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২৩ মে ২০১৫

ছায়ানটে প্রাণের উচ্ছ্বাসে জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলন শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শুক্রবার সকাল থেকেই প্রাণের উচ্ছ্বাস বয়ে যায় ধানম-ির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনে। আর এই উচ্ছ্বাসের ভেতর ছিল সুরের স্রোত। সুরাশ্রিত আয়োজনে সকালের সূচনায় দুপুর পেরিয়ে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা অতিক্রম করে রাত পর্যন্ত বহমান ছিল সুর-তাল আর লয়ের খেলা। গানের মাঝে ছিল অনবদ্য নৃত্যের উপস্থাপনা ও আবৃত্তি পরিবেশনা। সব মিলিয়ে সৃষ্টি হয় অনিন্দ্য উৎসবমুখরতার দৃশ্যকল্প। আর এমন হৃদয় স্নিগ্ধ করা আনন্দময়তার উপলক্ষ ছিল জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ আয়োজিত পরিষদের তিন দিনব্যাপী চৌত্রিশতম বার্ষিক অধিবেশন। এ অধিবেশনের ভেতর দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলন ও প্রতিযোগিতা। এবারের অধিবেশনের আহ্বান ‘এখনো ঘোর ভাঙে না তোর’। এবারের সম্মেলনের প্রতিযোগিতায় কিশোর ও সাধারণ এই দুই বিভাগে সারাদেশ থেকে অংশ নিচ্ছে ৪০০ জন প্রতিযোগী। তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন আরও দুই শতাধিক শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী ও সংগঠক। এবারের সম্মেলনে গুণীজন সম্মাননা ও রবীন্দ্রপদকে ভূষিত করা হবে প্রবীণ শিল্পী সুধীন দাশ ও প্রকৃতিবিদ দ্বিজেন শর্মাকে। সকাল সাড়ে নয়টায় শুরু হয় সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা। ততক্ষণে সারাদেশ থেকে আসা রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীদের আনাগোনায় সরগরম হয়ে ওঠে ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তন। মূল মিলনায়তনে শুরু হয় উদ্বোধনী পর্ব। সম্মেলক কণ্ঠে ‘এখনো ঘোর ভাঙে না তোর’ শীর্ষক বোধন সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে সূচনা হয় তিনদিনের চৌত্রিশতম বার্ষিক রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলনের। সম্মেলন উদ্বোধন করেন শিক্ষাবিদ ও সংস্কৃতিকর্মী অধ্যাপক ড. অনুপম সেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সম্মিলন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমেদ লিসা। সভাপতিত্ব করেন সম্মিলন পরিষদের সভাপতি সন্জীদা খাতুন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই সদ্যপ্রয়াত শিল্পী তপন ভট্টাচার্যের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর অতিথিরা মঙ্গলপ্রদীপ জ্বালিয়ে উৎসব উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী বক্তব্যে ড. অনুপম সেন বলেন, মাইকেল মধুসূদন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে ভিত্তি দিয়েছিলেন আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভাষা ও সাহিত্যকে দিয়েছেন পূর্ণতা। রবীন্দ্রনাথ শুধু ভাষাকেই নয় বাঙালীর জাতিসত্তারও রূপ দিয়েছিলেন। অনুষ্ঠানের সভাপতি ড. সন্জীদা খাতুনও গানের কথার সঙ্গে মিলিয়েই বললেন, শিক্ষা ছাড়া মানুষ জাগে না, অন্ধকার বিলুপ্ত হয় না। মøানমুখে ভাষা দিতে হবে। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে তা ছড়িয়ে দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মানুষকে সবচেয়ে বড় করে দেখেছেন। তাঁর সাধনা ছিল আগে বাঙালী হওয়া, পরে বিশ^মুখী হওয়া। অথচ দুঃখের বিষয় আমরা আগেই বিশ^মুখী হই, দেশমুখী হই না। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হয় সঙ্গীতানুষ্ঠান। দলীয় সঙ্গীতের পাশাপাশি অনুষ্ঠানে একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিমু রানী দে, মুস্তাফিজুর রহমান তূর্জ ও শ্রাবণী মজুমদার। একক নৃত্য পরিবেশন করেন দীপংকর বিশ্বাস। আর নৃত্য শর্মিলী বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পীরা। বেলা আড়াইটা থেকে শুরু কিশোর বিভাগের চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা। এরপর প্রদীপ প্রজ্বালনের মাধ্যমে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় শুরু হয় সান্ধ্যকালীন অধিবেশন। গুণীজনের সুবচনের আয়োজন রবিরশ্মির সঙ্গে ছিল আবৃত্তি, নৃত্য ও সঙ্গীতানুষ্ঠান। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে শেষ হয় প্রথম দিনের অধিবেশন। পরবর্তী দুটি দিনের সান্ধ্য অধিবেশন সাজানো হয়েছে গুণীজনের সুবচন রবিরশ্মি, আবৃত্তি, পাঠ, নৃত্য ও গান দিয়ে। অধিবেশনের দ্বিতীয় দিন আজ শনিবার বিকেল চারটায় অনুষ্ঠিত হবে সেমিনার। এবারের বিষয় আবুল মোমেনের লেখা প্রবন্ধ ‘রাষ্ট্র ও ধর্ম : রবীন্দ্র ভাবনা ও বর্তমান বাস্তবতা’। এ পর্বে সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সভাপতি সান্জীদা খাতুন। আলোচনায় অংশ নেবেন ডাঃ সারওয়ার আলী ও মফিদুল হক। দৈনিক আয়োজন রবিরশ্মিতে কথা বলবেন বিশিষ্টজনরা। এদিকে কিশোর ও সাধারণ সঙ্গীত প্রতিযোগিতার বাছাই পর্ব শুরু হয়েছে উদ্বোধনের আগের দিন বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে। শুক্রবার দুপুরে কিশোর বিভাগের চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় এবং আজ শনিবার সকালে সাধারণ বিভাগের চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। উভয় বিভাগের পুরস্কার এবং গুণী সম্মাননা ও রবীন্দ্র পুরস্কার প্রদান করা হবে রবিবার বিকেলের সমাপনী অধিবেশনে। বার্ষিক অধিবেশন উপলক্ষে যথারীতি প্রকাশিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির নানা দিক নিয়ে বিশিষ্টজনদের লেখা প্রবন্ধের সংকলন সঙ্গীত সংস্কৃতি। আন্তর্জাতিক নজরুল চর্চা কেন্দ্রের নজরুলজয়ন্তীর আয়োজন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ওপর প্রবন্ধ পাঠ, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে কবির ১১৬ম জন্মবার্ষিকী উদ্্যাপন করল আন্তর্জাতিক নজরুল চর্চা কেন্দ্র। শুক্রবার বিকেলে বাংলা একাডেমির সহযোগিতায় একাডেমির কবি শামসুর রাহমান হলে সংগঠনটির এই আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়। ‘পঞ্চম জাতীয় কনভেনশন’ ও ‘বিশ্বজনীন নজরুল’’ শীর্ষক প্রামান্য অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন এমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান এবং আন্তর্জাতিক নজরুল চর্চা কেন্দ্রের স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান ভারতের নজরুল গবেষক ড. বাঁধন সেন গুপ্ত। নজরুল গবেষক অধ্যাপক করুণাময় গোস্বামীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ পাঠ করেন অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী। আলোচনায় অংশ নেন নজরুলসঙ্গীত শিল্পী খালিদ হোসেন ও বুলবুল মহলানবীশ।
×