ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শহরমুখী জনস্রোত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭.২ শতাংশ;###;মাসে ৫ হাজার মানুষ রাজধানীতে আসে;###;কর্মসংস্থানসহ নানা সুযোগ-সুবিধার খোঁজে শহরে ভিড় জমায়;###;শহরমুখী জনস্রোত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭.২ শতাংশ;###;মাসে ৫ হাজার মানুষ রাজধানীতে আসে;###;কর্মসংস্থানসহ নানা সুযোগ-সুবিধা

গ্রাম থেকে ছুটছে মানুষ ॥ ভারি হচ্ছে শহর

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ২৩ মে ২০১৫

গ্রাম থেকে ছুটছে মানুষ ॥ ভারি হচ্ছে শহর

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ গ্রাম ছেড়ে শহরের দিকে ছুটছে মানুষ। এ হার বাড়ছে দিন দিন। গ্রামে কর্মসংস্থানের অভাব, শহরে কর্মসংস্থানের সুযোগ, স্বাস্থ্য-শিক্ষাসহ নানা সুযোগ-সুবিধা ও নাগরিক জীবনের আরাম আয়েশের কথা চিন্তা করেই শহরের প্রতি আকর্ষণ বাড়ছে মানুষের। এ অবস্থায় জনসংখ্যার ভারে ন্যূজ হয়ে পড়ছে শহরগুলো। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা। মানুষের পদভারে দিন দিন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে এই মহানগরী। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপে দেখা গেছে ২০০৯ সালে যেখানে পল্লী অঞ্চল থেকে শহরে মানুষের আসার হার ছিল ২১ দশমিক ৯ শতাংশ, সেটি এখন বেড়ে ২০১৩ সালে দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ২ শতাংশে। সম্প্রতি প্রকাশিত অন্য এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি মাসে ঢাকা শহরে ৫০ হাজার মানুষ আসছে গ্রাম থেকে। ফলে বস্তির সংখ্যা বাড়ছে। অন্যদিকে, শহর থেকে গ্রামে যাওয়া মানুষের সংখ্যা দিন দিন কমছে। সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও কোনটিই কাজে আসছে না। এ পরিপ্রেক্ষিতে গ্রামে নাগরিক জীবনের স্বাদ পৌঁছে দিতে নতুন করে হাতে নেয়া হয়েছে পল্লী জনপদ প্রকল্প। তবে শহরমুখী মানুষের ঢল ঠেকাতে বিশেষ উদ্যোগ থাকছে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়। চূড়ান্ত হতে যাওয়া এ পরিকল্পনায় আগামী ৫ বছরে (২০১৬Ñ২০) দেশের সবগুলো গ্রামে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। ফলে গ্রামগুলোতে তৈরি হবে কর্মসংস্থানের বিভিন্ন ধরনের সুযোগ। মানুষ শহরে আসতে নিরুৎসাহিত হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, আগামী পাঁচ বছরে পরিকল্পনার মেয়াদে গ্রামগুলোতে শতভাগ বিদ্যুত পৌঁছে দিতে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। যাতে করে গ্রামভিত্তিক ছোট ছোট শিল্প-কারখানা গড়ে উঠতে পারে, মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পায়। গ্রামীণ অর্থনীতিকে আরও বেশি চাঙ্গা করতে নানাবিষয় থাকবে এ পরিকল্পনায়। ফলে ধীরে ধীরে মানুষের শহরে আসার প্রবণতা কমে আসবে। নগর পরিকল্পনাবিদ ড. নজরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, গ্রাম থেকে মানুষ শহরে আসবে এটি স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু আমাদের দেশের জন্য তা উদ্বেগজনক। কেননা ঢাকা ও চট্টগ্রামে যদি বেশি লোক বাড়ে তাহলে ভবিষ্যতে ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক সমস্যা দেখা দেবে। তাছাড়া নির্মাণ ও পরিবহন শ্রমিক, রিক্সাচালক ও ছোট ছোট দোকানদারের এক কথায় অশিক্ষিত বা স্বল্পশিক্ষিত মানুষের কর্মসংস্থান হয়ত হবে। কিন্তু শিক্ষিত মানুষ যারা যে কোন কাজও করতে পারবে না আবার তাদের উপযোগী কর্মসংস্থানের অভাবে শহরে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়ে যাবে। এটি একটি বড় নগর সমস্যা হিসেবে দেখা দেবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্রাম থেকে শহরে বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের মতো শহরে মানুষ আসা কমাতে হলে সামগ্রিক বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। প্রথমত, রাজনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ, যেমন স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে। দ্বিতীয়ত, প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ, যেমন জেলা প্রশাসনকে শক্তিশালী করতে হবে। সেই সঙ্গে বিভাগীয় শহরগুলোতে নানা সুযোগ- সুবিধা সৃষ্টি করতে হবে। যাতে মানুষকে যে কোন কাজের জন্য শহরমুখী হতে না হয়। তৃতীয়ত, অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এক্ষেত্রে উপজেলা পর্যায়ে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করতে হবে। শিল্পায়ন গড়ে তুলতে হবে। চতুর্থত, মান সম্মত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা উপজেলা পর্যায়ে ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণ করতে হবে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্র গ্রামীণ জীবন উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এক জায়গায় বসে মানুষ বিভিন্ন বিষয়ে সেবা পাচ্ছে। এরকম বড় ধরনের উদ্যোগ আরও নিতে হবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যার ব্যুরোর সম্প্রতি তৈরি হওয়া মনিটরিং দি সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস অব বাংলাদেশ-২০১৩ প্রকল্পের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পল্লী অঞ্চল হতে শহরে মানুষের স্থানান্তরের হার বাড়ছে। ২০১৩ সালে এ হার দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ২ শতাংশ। যা ২০১২ সালে ছিল ২৬ দশমিক ২ শতাংশ, ২০১১ সালে ছিল ২৩ দশমিক ৭ শতাংশ, ২০১০ সালে ছিল ২৪ দশমিক ৫ এবং ২০০৯ সালে ছিল ২১ দশমিক ৯ শতাংশ। এ বিষয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, নগরায়ণের চিত্র সারাবিশ্বে একই ধরনের। ১৯৫০ সালে যেখানে ২৭ থেকে ২৮ শতাংশ মানুষ শহরে বসবাস করতো, সেখানে আগামী ২০৫০ সালে ৬৫ শতাংশ মানুষ শহরে বসবাস করবে। বাংলাদেশের চিত্রও একই। মানুষকে জোর করে শহরে আসা আটকানো যাবে না। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে দেখা যাচ্ছে মানুষ কমছে, তার মানে ওই মানুষগুলো শহরে চলে এসেছে। এজন্য যেটি করতে হবে সেটি হচ্ছে, গ্রামে অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে হবে। অর্থাৎ গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে হবে। মানুষ যাতে কাজ পায়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগসহ অন্যান্য সুবিধা পায় সে বিষয়ে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। গ্রামে ওই এলাকায় স্থানীয় মানুষজনের উপযোগী কর্মসংস্থান তৈরি করতে আমরা হাস-মুরগি ও গরু-ছাগল পালনসহ বিভিন্ন প্রকল্প পাস করছি এবং বাস্তবায়ন করছি। বিবিএস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শহর হতে পল্লী অঞ্চলে স্থানান্তরের হার কমছে। এ হার ২০১৩ সালে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ১ শতাংশ। যা ২০১২ ও ১৩ সালে ছিল ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০১০ সালে শহর হতে পল্লীতে স্থানান্তরের হার ছিল সবচেয়ে বেশি ৬ শতাংশ, তার আগের বছর অর্থাৎ ২০০৯ সালে ছিল ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। প্রতিবেদন বিষয়ে এমএসভিএসবি প্রকল্পের পরিচালক এ কে এম আশরাফুল হক জনকণ্ঠকে জানান, এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রতি দশ বছর পর পর যে আদমশুমারি হয় তার মধ্যবর্তী বৎসরগুলোতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির উপাদানসমূহ যথাÑ জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ, আগমন, বহির্গমন এবং আর্থ-সামাজিক তথ্য সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ এবং নিয়মিতভাবে প্রকাশের মাধ্যমে পরিকল্পনাবিদ ও নীতি নির্ধারকগণকে সুষ্ঠু ও তথ্যভিত্তিক জনসংখ্যা পরিকল্পনায় সহায়তা করা। মাঠ পর্যায় হতে প্রাপ্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই মিলিনিয়াম ডেভলপমেন্ট গোলস-এর ৪৮টির মধ্যে ৪টি ইনডিকেটরস-এর অগ্রগতি মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এক শহর থেকে আরেক শহরে মানুষের স্থানান্তরের হারও বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৩ সাল পর্যন্ত এ হার দাঁড়িয়েছে ৪৯ দশমিক ৭ শতাংশ, যা ২০১২ সালে ছিল ৪৫ দশমিক ৫ শতাংশ, ২০১১ সালে ছিল ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ, ২০১০ সালে ছিল ৪৮ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ২০০৯ সালে ছিল ২৮ দশমিক ৩ শতাংশ। অন্যদিকে পল্লী থেকে পল্লীতে মানুষের স্থানান্তরের সংখ্যাও বাড়ছে। কিন্তু সেটি খুব বেশি নয়। ২০১৩ সালের হিসাবে এ হার দাঁড়িয়েছে ১৭ শতাংশ, যা ২০১২ সালে ছিল ১৬ দশমিক ২ শতাংশ, ২০১১ সালে ছিল ১৫ শতাংশ, ২০১০ সালে ছিল ১৬ দশমিক ২ শতাংশ এবং ২০০৯ সালে ছিল ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ। প্রতিবেদন বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রকল্প পরিচালক এ কে এম আশরাফুল হক জানান, এ প্রকল্পটির কার্যক্রম বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর একটি নিয়মিত ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম।বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ১৯৮০ সাল হতে আন্তঃশুমারি সময়ের জনতাত্ত্বিক তথ্য সংগ্রহের জন্য এ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ২০১৩ সাল থেকে ১৫০০টি নমুনা এলাকায় এ কার্যক্রম চলছে, যেখানে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার পরিবার হতে নিয়মিত জনতাত্ত্বিক তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের গড়ে খানার সদস্য সংখ্যা ৪ দশমিক ৫ জন, এর ফলে প্রায় ৬ লাখ ৭৫ হাজার জন এ প্রকল্পের তথ্য সংগ্রহের আওতায় নিয়মিতভাবে পরিবীক্ষণ করা হচ্ছে। বর্তমানে তথ্যের গুণগতমান বৃদ্ধির জন্য আরও ৫১২টি নমুনা এলাকা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং এ বছর থেকেই তার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। প্রতিবেদনে দেশের বাইরে যাওয়া জনগণের একটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এটি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, শহর থেকে বিদেশ যাওয়া হার দিন দিন বাড়ছে। ২০১৩ সালের হিসাব অনুযায়ী শহর থেকে বিদেশে স্থানান্তরের হার দাঁড়িয়েছে ৭০ দশমিক ৫ শতাংশ, যা ২০১২ সালে ছিল ৬৯ শতাংশ, ২০১১ সালে ছিল ৬৮ দশমিক ৪ শতাংশ, ২০১০ সালে ছিল ৬৭ দশমিক ২ শতাংশ এবং ২০০৯ সালে ছিল ৫৬ দশমিক ৩ শতাংশ। অন্যদিকে পল্লী অঞ্চল থেকে বিদেশে স্থানান্তরের হার বাড়লের শহরের তুলনায় তা অনেক কম। ২০১৩ সালে এ হার দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৭ শতাংশ, যা ২০১২ সালে ছিল ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ, ২০১১ সালে ছিল ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ, ২০১০ সালে ছিল ২৪ দশমিক ৬ এবং ২০০৯ সালে ছিল ১৮ দশমিক ২ শতাংশ। প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, শহর এলাকায় জাতীয়ভাবে মানুষের আগমনের (গ্রাম, দেশ ও বিদেশ মিলে) হার ২০১৩ সালের হিসাব অনুযায়ী হচ্ছে, ৬৭ দশমিক ৫ শতাংশ, ২০১২ সালে ছিল ৬৯ দশমিক ৭ শতাংশ, ২০১১ সালে ছিল ৬৭ দশমিক ৩ শতাংশ, ২০১০ সালে ছিল ৭৩ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ২০০৯ সালে ছিল ৫০ দশমিক ২ শতাংশ। অন্যদিকে পল্লী অঞ্চলে জাতীয়ভাবে আগমনের ( শহর, দেশ ও বিদেশ মিলে) হার ২০ দশমিক ১ শতাংশ, যা ২০১২ সালে ছিল ২১ দশমিক ৬ শতাংশ, ২০১১ সালে ছিল ২২ দশমিক ১ শতাংশ, ২০১০ সালে ছিল ২২ দশমিক ২ শতাংশ এবং ২০০৯ সালে ছিল ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ। নগর পরিকল্পনাবিদ ড. নজরুল ইসলাম আরও বলেন, জেলা বা উপজেলা শহরভিত্তিক জনসংখ্যা বাড়লে তা হবে মঙ্গলজনক। ২০১১ সালে আদমশুমারিতে দেখা গেছে, মোট জনসংখ্যা বৃদ্ধির যে হার তার মধ্যে গ্রামের তুলনায় শহরে বেড়েছে বেশি। এই প্রথম গ্রামের তুলনায় শহরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বাড়লো। গ্রামে দেখা গেছে ১২ মিলিয়ন মানুষ আর শহরে ১৪ মিলিয়ন। ২০৪৫ সালে শহরের জনসংখ্যা মোট জনসংখ্যার বর্তমানের ২৮ ভাগ থেকে বেড়ে ৫০ ভাগ অতিক্রম করে যাবে। ২০৫০ থেকে ৭০ সালের মধ্যে ৭৫ শতাংশ হবে। এ বিষয়ে তাই সতর্ক হতে হবে এখন থেকেই। সূত্র জানায়, শহর থেকে জনগণকে গ্রামে নিয়ে যেতে ইতোমধ্যেই নানা প্রকল্প হাতে নিয়েছিল সরকার। সময় সময় এসব প্রকল্প হাতে নিলেও কার্যকর কোন ফল পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ঘরে ফেরা কর্মসূচী, ভিক্ষুক পুনর্বাসন প্রকল্প অন্যতম। এ অবস্থায় শহরের ওপর চাপ কমাতে গ্রামের মানুষদের শহরের সুবিধা পৌঁছানের নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান সরকার। এটি হচ্ছে কৃষি জমি অপচয়রোধ, গ্রামে শহরের নাগরি জীবনের স্বাদ পৌঁছানো এবং শহরে জনগণের স্থানান্তর কমাতে সমবায়ভিত্তিক বহুতল ভবন পল্লীজনপদ নির্মাণ সংক্রান্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪২৪ কোটি ৩৩ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩৬২ কোটি ৯৮ লাখ এবং সুবিধাভোগীদের ৬১ কোটি ৩৫ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, সিলেট এবং রংপুর বিভাগের একটি করে মোট ৭টি এলাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পটির মাধ্যমে নির্বাচিত গ্রামে একটি এ্যাপ্রোচ সড়কের দু-ধারে চার তলা আবাসিক ও অন্যান্য সুবিধা সম্বলিত ৭টি ভবন নির্মাণ, বহুতল ভবনে গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি পালনসহ উৎপাদিত কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের সুবিধাদি স্থাপন, সৌর প্যানেল স্থাপন, নিরাপদ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা, পানি সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে আঁধার নির্মাণ, অগ্নিনির্বাপনের সুযোগ ও পরিবেশ উন্নয়নে লেক নির্মাণ, রান্নার কাজের জন্য কমিউনিটিভিত্তিক বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট নির্মাণ, বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট হতে উৎকৃষ্টমানের জৈবসার উৎপাদন ও বিপণন, সুফল ভোগীদের জন্য বিভিন্ন আয়বর্ধনমূলক প্রশিক্ষণ পরিচালনা ও ঋণ বিতরণ, শিশুদের জন্য প্লে-গ্রাউন্ড ও বয়স্কদের হাঁটার ব্যবস্থা রাখা, ভবনগুলোর জানালা ও দরজায় পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা, ভবনগুলোর টয়লেট, বাথ ও বেসিন আলাদা আলদা রাখা ইত্যাদি সুবিধা রাখার ব্যবস্থা করা হবে।
×