ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অষ্টম শ্রেণির পড়াশোনা

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ২৩ মে ২০১৫

অষ্টম শ্রেণির পড়াশোনা

ঔপনিবেশিক যুগ ও বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রাম অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর : (পূর্ব প্রকাশের পর) ১০. বাংলার পরাজয় ও ঔপনিবেশিক শক্তির বিজয়ের কারণগুলো কী কী? উত্তর : পাল বংশের পর থেকেই বাংলায় বহিরাগত শাসন চলতে থাকে। বহিরাগত শাসকদের ক্রমাগত পুঁজি পাচার, অর্থনৈতিক শোষণ, অতিরিক্ত করের বোঝা বাংলার জনগণের আর্থিক দুর্দশার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শাসকদের শোষণ, বর্গীদের হামলা, দুর্ভিক্ষের ফলে জনজীবন দুর্বিষহ। নবাব আলীবর্দীর মৃত্যুর পর তার ২২ বছর বয়সী নাতি, নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সিংহাসনে বসেন, সিরাজের বড় খালা ঘসেটি বেগম, সিপাহসালার মীর জাফর খান, ক্ষমতালোভী স্বার্থন্বেষী বণিকগণ ইংরেজদের সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। এর ফলে পলাশীর যুদ্ধে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার নবাব তথা বাংলার পরাজয় ঘটে। এ ছাড়া ২শ’ বছরের শোষণে শাসকদের প্রতি বিমুখ ও উদাসীনতা, স্বাধীনতার অবসান সম্পর্কে ধারণার অভাব। বাংলার শাসকদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, ইংরেজদের ধূর্ত পরিকল্পনা বোঝার মতো রাজনৈতিক-সামাজিক শক্তির অভাবেই বাংলার পরাজয় ও ঔপনিবেশিক শক্তির বিজয়ের প্রধান কারণ। ১১. ব্রিটিশবিরোধী অন্দোলনের চূড়ান্ত পরিণতি কি? উত্তর : ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল সমগ্র ভারতবর্ষে। বাংলার সেই আন্দোলন বেশ অগ্রসর ও জোরালো ছিল। বাঙালির স্বদেশ চেতনার আবেগ জোরদার হবার কালে স্বদেশী আন্দোলন, স্বরাজ আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন, সশস্ত্র যুদ্ধ বিগ্রহ ইত্যাদি ঘটে। এসব নিরবচ্ছিন্ন ও ধারাবাহিক আন্দোলনের ফলেই ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটে। কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের নেতৃত্বে দ্বন্দ্বে বাংলার হিন্দু-মুসলমান পরিচয়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ফলে ১৯৪০ সালে মুসলিম লীগ দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত বিভক্তির ফর্মুলা প্রদান করে এবং এর সূত্র ধরেই ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি নতুন রাষ্ট্রের সূচনা ঘটে, যা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের চূড়ান্ত ফল। ১২. ঔপনিবেশিক আমলে আধুনিক শিক্ষার প্রভাব ব্যাখ্যা কর। উত্তর : ইংরেজরা তাদের শাসন পাকাপোক্ত করার লক্ষ্যে দেশীয়দের মধ্য থেকে ইংরেজী শিক্ষিত একটি অনুগত শ্রেণি তৈরিতে মনোযোগ দেয়, যার ফলে কলকাতা মাদ্রাসা, সংস্কৃত কলেজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো অসংখ্য শিক্ষালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। আধুনিক শিক্ষার ফলে স্থানীয় মানুষের মধ্যে নতুন চেতনার স্ফুরণ ঘটতে থাকে। প্রচলিত বিশ্বাস, সংস্কার, বিধান সম্পর্কে বাস্তবধর্মী চেতনার বিকাশ ঘটল। আধুনিক শিক্ষা ও জাগরণের ফলে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ ঘটেছিল সেই সাথে স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা ও গণতান্ত্রিক অধিকার রোধেরও উন্মেষ ঘটতে থাকে। স্বদেশী আন্দোলনে আগ্রহ বৃদ্ধি পায় এবং সমগ্র বাংলায় ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে দেশপ্রেম ও রাজনৈতিক চেতনায় জোয়ার আসে। ১৩. মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা কর। উত্তর : মুসলমান সমাজের দাবি-দাওয়া, শিক্ষা, রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের জন্য ঢাকায় ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। মুসলমানদের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এই দল গঠন করেন। ভারতের মুসলমানদের রাজনৈতিক অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা ইত্যাদি ছিল মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য। এ দলটির উদ্দেশ্য ছিল চাহিদাও প্রয়োজন সরকারের নিকট ব্যক্ত করা, সরকারের সঙ্গে মুসলমানদের সুসম্পর্ক গড়ে তোলা। ১৪. দ্বৈতশাসন বলতে কী বোঝ? উত্তর : রবার্ট ক্লাইভ দ্বিতীয়বারের মতো বাংলায় ১৭৬৫ সালে গভর্নর হয়ে আসে। অন্যদিকে কোম্পানি সম্রাটকে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যায় রাজস্ব আদায়ের জন্য ২৬ লক্ষ টাকা দিয়ে ক্ষমতা দখল করে। এইভাবে কোম্পানি রাজ্যের রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব বা দেওয়ানি লাভ করে। কোম্পানির হাতে রাজস্ব ও প্রশাসন ধরে রেখে ক্ষমতাহীন নবাবকে সিংহাসনে রাখে। সিংহাসনে নবাবকে প্রশাসন কার্যের জন্য বসিয়ে রাখার আড়ালে কোম্পানির হাতে রাজস্বর দেওয়ানি ও দায়িত্ব থাকার সময়কে ইতিহাস দ্বৈত শাসন নামে চিহ্নিত করা হয়। দুই ধরনের শাসনকে একইসঙ্গে কার্যকর করে রবার্ট ক্লাইভ যে শাসন ব্যবস্থা জারি রেখেছিলেন তাই মূলত দ্বৈতশাসন। ১৫. ভাগ কর শাসন করÑনীতি কী? ব্যাখা কর। উত্তর : ব্রিটিশ সরকারের সময়ে লর্ড কার্জন বাংলায় রাজনৈতিক সচেতনতার বিষয়ে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন ছিলেন। তিনি আশঙ্কা করেছিলেন বাঙালি মধ্যবিত্ত ও বুদ্ধিজীবীরা ক্রমশ জাতীয়তাবাদ ও রাজনীতি-সচেতন হয়ে উঠছে বাংলার একতা বিনষ্ট করে শাসন কার্যে সফলতা আনার লক্ষ্যে তিনি ভাগ কর ও শাসন কর নীতি প্রয়োগ করে বাংলাকে বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন এতে বাঙালিরা দুর্বল হয়ে পড়বে এবং বাংলা থেকে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন শক্তিহীন হয়ে পড়বে।
×