ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফলাফল প্রকাশে নানা অনিয়ম

পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও মেধাতালিকায় স্থান

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২২ মে ২০১৫

পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও মেধাতালিকায় স্থান

মানিক সরকার মানিক, রংপুর ॥ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ইউনিটের (কলা অনুষদ) ভর্তি পরীক্ষায় ফলাফলে ব্যাপক জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। ভর্তি পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও মেধা তালিকায় স্থান পাইয়ে দেয়া, উত্তরপত্র মূল্যায়ন না করেই ফলাফল প্রকাশ করা এবং উত্তরপত্রগুলো পরে সংশ্লিষ্ট ডিনের (সমন্বয়ক) বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া ছাড়াও ডি ইউনিটের এক শিক্ষক নিজে প্রশ্নকর্তা হয়ে তার আপন ছোট বোনকে ভর্তি পরীক্ষার মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান পাইয়ে দেয়ার মত গুরুতর অভিযোগ আছে। অথচ নিয়ম রয়েছে, কোন শিক্ষকের আত্মীয় ভর্তিচ্ছুক থাকলে তিনি সংশ্লিষ্ট ভর্তি কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেন না। এসব ঘটনার সঙ্গে কলা অনুষদের ডিন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. নাজমুল হকসহ অনুষদভুক্ত কিছু শিক্ষক ও কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশ রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। জানা গেছে, কলা অনুষদের ভর্তি পরীক্ষার ১৮টি উত্তরপত্র মূল্যায়ন না করেই ১৩ মে ফলাফল প্রকাশ করা হয় এবং তালিকা অনুযায়ী ১৮ ও ১৯ মে তাদের সাক্ষাতকার নেয়া হয়। সে অনুযায়ী বৃহস্পতিবার তাদের বিভাগ বন্টন করার কথা থাকলেও এ নিয়ে নানা বিতর্কের কারণে বিভাগ বন্টন করা হয়নি। উত্তরপত্র মূল্যায়ন না করেই ফলাফল প্রকাশ করার বিষয় নিয়ে ডিন নাজমুল হকের কাছে কিছু শিক্ষক জানতে চাইলে প্রথমে তিনি অস্বীকার করেন। পরে চাপের মুখে ১৮টি অমূল্যায়িত উত্তরপত্র তিনি তার বাসা থেকে এনে দেন। প্রশ্ন উঠেছে দাফতরিক উত্তরপত্র তার বাসায় থাকবে কেন ? একই ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা না দিয়েও মানবিক গ্রুপ থেকে মেধা তালিকায় ১৬১ পজিশনে স্থান পেয়েছেন ১৪৬০২৫ রোলধারী মোস্তাফিজুর রহমান। তবে তিনি ১৮ মে সাক্ষাতকার বোর্ডে উপস্থিত হননি। এছাড়া বিজ্ঞান গ্রুপ থেকে তিনজনের উত্তরপত্র খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানা গেছে। তবে তারা সাক্ষাতকার বোর্ডে অংশ নিয়ে এখন বিভাগ পাওয়ার অপেক্ষায়। এছাড়াও এই অনুষদে সাক্ষাতকার দিতে আসা বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে সন্দেহ করা হলে অনুষদের দু’একজন শিক্ষকের সুপারিশে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ১৯ মে অনুষ্ঠিত সাক্ষাতকার বোর্ডে ইতিহাস ও প্রতœতত্ত্ব বিভাগের প্রভাষক মোঃ মনিরুজ্জামান এক মহিলা পরীক্ষার্থীকে চ্যালেঞ্জ করলে একাডেমিক শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার জাহেদুর রহমান সেখানে ছুটে আসেন। পরে ইতিহাস ও প্রতœতত্ত্ব বিভাগের অপর প্রভাষক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সহকারী প্রভোস্ট আকতারুল ইসলাম ওই ছাত্রীকে ছাড়িয়ে নেন। ওই পরীক্ষার্থী সহকারী রেজিস্ট্রার জাহেদুর রহমানের আত্মীয়। ভর্তি পরীক্ষার এসব জালিয়াতির সঙ্গে ডিন ড. নাজমুল হকসহ ইতিহাস বিভাগের প্রধান গোলাম রব্বানী, ইংরেজী বিভাগের প্রধান সাজিয়া আফরিন, ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সহকারী প্রভোস্ট আকতারুল ইসলাম, একাডেমিক শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার জাহেদুর রহমান, কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে সহকারী রেজিস্টার জাহেদুর রহমান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এছাড়া গণিত বিভাগে সদ্য যোগদানকারী শিক্ষক মোঃ ইসমাইল হোসেন মেধা তালিকায় তার ছোট বোন ইহতিশানুন নিশাকে দ্বিতীয় স্থান পাইয়ে দিয়েছেন। এই ইসমাইল হোসেন ডি ইউনিটের প্রশ্নকর্তা ও প্রশ্ন মর্ডারেশন বোর্ডের সদস্য। যেহেতু তার বোন পরীক্ষার্থী সেহেতু নিয়ম অনুযায়ী তিনি কোনভাবেই পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কমিটিতে থাকতে পারেন না। শুধু তার বোন নয়, অভিযোগ রয়েছে, তিনি আরও বেশ কয়েক পরীক্ষার্থীকে মেধা তালিকায় স্থান করে দিয়েছেন। এ বিষয়ে ওই শিক্ষকের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান তিনি।
×