ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ষাকালে জল-কাদায় ঘরবন্দী থাকতে হয় স্থানীয়দের

রংপুর সিটিতে কয়েক লাখ মানুষ নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২২ মে ২০১৫

রংপুর সিটিতে কয়েক লাখ মানুষ নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত

স্টাফরিপোর্টার, রংপুর ॥ রংপুর সিটি করপোরেশন ভবন থেকে সাবেক তপোধন ইউনিয়নের ‘মনাদর’ গ্রামের দূরত্ব মাত্র ৬ কিলোমিটার। বর্তমানে এটি ৯ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। মহানগর লাগোয়া এই গ্রামে যাতায়াতের জন্য আজও গড়ে ওঠেনি কোন পাকা সড়ক, স্থাপিত হয়নি বিদ্যুত কিংবা পানির সংযোগ। এতে করে একদিকে যেমন বর্ষাকালে চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়ছে ওই সড়ক, অন্যদিকে বিদ্যুত অভাবে প্রচন্ড গরমে হা-পিত্যাশ করছেন এলাকাবাসী। এছাড়াও লেখাপড়া বিঘিœত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এলাকাবাসী বলছেন এটি এক ধরণের মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। শুধু এই মনাদর গ্রামই নয়, এমন নাগরিক সুবিধা বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত বর্ধিত এলাকার অন্তত দুই শ’ গ্রামের কয়েক লাখ মানুষ। বিদ্যুত, পানি, রাস্তাঘাটসহ কোন ধরনের সুযোগ সুবিধাই নেই ওই এলাকাগুলোতে। এতে করে বর্ষাকালে কর্দমাক্ত পথের কারণে একদিকে যেমন অবরুদ্ধ হয়ে গৃহবন্দী থাকছেন তারা, অন্যদিকে বিদ্যুত অভাবে প্রচ- গরমে নাভিশ্বাসের পাশাপাশি লেখাপড়া থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, নামেই সিটি করপোরেশন, এতে করে বিরম্বনা তাদের বেড়েছে আরও বেশি। এই সিটি করপোরেশন এলাকায় এখন মোট জনসংখ্যা প্রায় ৭ লাখ। কিন্তু বাড়েনি বিন্দুমাত্র নাগরিক সুযোগ সুবিধা। মনাদর গ্রামের ফটো সাংবাদিক ফুলন চক্রবর্তী, কৃষিজীবী সাগর মিয়াসহ অনেকেই জানান, সিটি করপোরেশন হওয়ার আগেই তারা অনেক ভাল ছিল। এখন তাদের উচ্চহারে কর দিতে হয়। যা আগে ছিল না। শুধু তাই নয়, আগে ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে থাকায় নিয়মিত টিআর, কাবিখাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজ হলেও এখন সিটি করপোরেশন হওয়ায় সেসবও বন্ধ হয়ে গেছে। তারা জানান, মাত্র ৫টি বিদ্যুতের পিলার স্থাপন করা হলেই তাদের গ্রামে বিদ্যুত আনা সম্ভব। এ বিষয়ে তারা বারংবার পল্লী বিদ্যুতের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও ব্যবস্থা নেয়নি তারা। অথচ ওই এলাকার আশপাশেই পল্লী বিদ্যুতের রয়েছে বেশ কিছু অবৈধ সংযোগ। যা পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পল্লী বিদ্যুতের জেনারেল ম্যানেজার সোহরাব হোসেন জানান, বিষয়টি তার জানা নেই। তাছাড়া বিদ্যুত সংযোগ দিতে কোন সমস্যা নেই। অচিরেই তিনি নতুন সংযোগসহ অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান। জানতে চাইলে বর্ধিত এলাকার সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নাজমুন নাহার নাজমা এবং নজরুল ইসলাম নজু জানান, তারা এখন অসহায়। না পারছেন এলাকাবাসীর মন যোগাতে না উন্নয়ন করতে। এ অবস্থায় অনেকটাই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা। ৫২ বর্গ কিলোমিটারের রংপুর পৌরসভাকে এখন ২০৫ বর্গ কিলোমিটারে উন্নীত করে সিটি করপোরেশন করায় নগরপিতা মুক্তিযোদ্ধা সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু নিজেও বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, দেশী বিদেশী বিশেষ সহযোগিতা ছাড়া বর্ধিত অংশে উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং নিজে রংপুরকে সাজিয়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন। এখন তাকেই রংপুরের দিকে নজর দিতে হবে।
×