ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বেসরকারী হাসপাতালের ‘বোনাস’ মানেই মেডিক্যাল কলেজ;###;মেডিক্যাল শিক্ষা যখন বাণিজ্য, অদক্ষ ডাক্তারের হাতে ছুরি-কাঁচি!;###;লাখ লাখ টাকার ভর্তি বাণিজ্য

ডাক্তার তৈরির নামে হাত খুলে অনুমোদন ॥ দেদার মেডিক্যাল কলেজ

প্রকাশিত: ০৫:২১, ২২ মে ২০১৫

ডাক্তার তৈরির নামে হাত খুলে অনুমোদন ॥ দেদার মেডিক্যাল কলেজ

নিখিল মানখিন ॥ হাসপাতাল স্থাপনের ‘বোনাস’ হিসেবে দেয়া হয়েছে অনেক মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন! বাণিজ্যিক হাসপাতাল স্থাপনের কয়েক দিনের মধ্যেই টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে মেডিক্যাল কলেজের সাইনবোর্ডও। সরকারও দেদার অনুমোদন দিয়েছে। এখন হাসপাতালের আয়ের পাশাপাশি মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি করে নেয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। অবশ্য এসব কলেজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে অনেক আগেই। অর্থের বিনিময়ে সার্টিফিকেট নিয়ে এসব শিক্ষার্থী ভবিষ্যতে দেশের কেমন স্বাস্থ্যসেবা করবেÑ এ নিয়ে আতঙ্কিত সব স্তরের মানুষ। বর্তমানে অবশ্য শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে নতুন মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন। হাসপাতাল স্থাপনের ক’দিনের মাথায় ঝুলিয়ে দেয়া হতো মেডিক্যাল কলেজের সাইনবোর্ড। ভাবটা এমন যে হাসপাতাল স্থাপন করতে পারা মানেই বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন পাওয়া গেছে। তখন মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের সামগ্রিক শর্তপূরণে তোয়াক্কা করা হয়নি। এ সুযোগে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী গড়ে তুলেছে মেডিক্যাল কলেজের সস্তা বাজার, যেখানে প্রকৃত মেডিক্যাল শিক্ষা নয়, আর্থিক বাণিজ্যই মূল লক্ষ্য হয়ে ওঠে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে মানুষের জীবন বাঁচানোর ‘দক্ষ ও প্রকৃত চিকিৎসক’ বের হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই নেই। কলেজ কর্তৃপক্ষের ইচ্ছেমতো সবকিছু চলে। ডাক্তারি ডিগ্রী পাওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে কলেজ কর্তৃপক্ষের ওপর। বাইরে থেকে হস্তক্ষেপের খুব বেশি সুযোগ নেই। তাই নতুন মেডিক্যাল কলেজ অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যথাযথভাবে তদন্ত করে দেখার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন চিকিৎসক নেতৃবৃন্দ। তবে বর্তমানে বিএমডিসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে একটি অভিন্ন মূল্যায়ন কমিটি গঠন হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আর ওই সময়ে শর্ত ভঙ্গ করে অনুমোদনপ্রাপ্ত বেশ কয়েকটি বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের কার্যক্রম স্থগিত করেছে সরকার। বিশেষজ্ঞরা জানান, বেসরকারী মেডিক্যাল শিক্ষা আজ ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। গত কয়েক দশক ধরে মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনে অনিয়ম ও দায়িত্বহীনতার কারণে দেশের কতিপয় অসাধু চক্র এ সেক্টর নিয়ে ব্যবসা করার সুযোগ পেয়েছিল। ওই সময় হাসপাতাল থাকলেই মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন মিলেছে। বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের পেছনের দিকসমূহ তুলে ধরে বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশে বর্তমানে ৩৫ সরকারী ও ৬৫ বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের সময় বাংলাদেশে সরকারী মেডিক্যাল কলেজ ছিল মোট আটটি। বাকি সাতটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পাকিস্তান আমলে। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ২০ বছরে নতুন আরও দুই-একটি সরকারী মেডিক্যাল কলেজ এ তালিকায় যুক্ত হয়। নব্বইয়ের দশকে বেসরকারী পর্যায়ে মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের অনুমতি দেয়া হলে বিভিন্ন স্থানে বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন শুরু হয়। বর্তমানে দেশে সরকারী-বেসরকারী মিলিয়ে ১০০টির মতো মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৩৫টি সরকারী এবং বাকিগুলো বেসরকারী। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সরকারী ও বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এ ছাড়া রয়েছে একটি সরকারী ডেন্টাল কলেজ ও ৯ ডেন্টাল ইউনিট এবং ১২টির বেশি বেসরকারী ডেন্টাল কলেজ। অন্যদিকে চিকিৎসা বিষয়ে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৯৮ সালে চালু করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। দেশের প্রথম এই মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়টির সঙ্গে সম্প্রতি অনুমোদনপ্রাপ্ত চট্টগ্রাম ও রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় দুটিকে যুক্ত করলে সরকারী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা তিন। দেশে সরকারী যেমন-তেমন; বেশির ভাগ বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের প্রতিষ্ঠা, শিক্ষাদান, পরীক্ষা গ্রহণসহ নানা কর্মকা- নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার কোন শেষ নেই। খুবই আকস্মিক ও অপরিকল্পিতভাবে অনেকটা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য নিয়ে এগুলো তৈরি করা হয়েছে। হাতেগোনা দুই-চারটি ছাড়া বাকি বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজকে ঘিরে চিকিৎসা শিক্ষা বাণিজ্যের যে হাট বিস্তার লাভ করেছে, তা দেশের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সেক্টরের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য বড় বড় শহরে ১৯৯১ সাল থেকে এই যে বেসরকারী এতগুলো মেডিক্যাল কলেজ স্থাপিত হলো, তা কতটুকু প্রয়োজন আর পরিকল্পনামাফিক হয়েছেÑ এসব প্রশ্ন কোনক্রমেই উপেক্ষা করা যাবে না। এ ধরনের একেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের বিষয় যখন হঠাৎ যেখানে সেখানে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠার সঙ্গে হরহামেশাই তুলনা করা হয়। গত ৪৪ বছরে, বিশেষ করে ১৯৯০ সালের পর আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষা দানোপযোগী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। বেশিরভাগ বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের অবকাঠামো, লেখাপড়ার পরিবেশ ও সুযোগ-সুবিধা, শিক্ষার্থী ভর্তি, পরীক্ষাসহ যাবতীয় কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার যেন শেষ নেই। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, চিকিৎসাশিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মানের বিষয়টি দায়িত্বশীল কারও কাছেই কখনও গুরুত্ব পায়নি। চিকিৎসা শিক্ষা কিংবা চিকিৎসাসেবার এতগুলো ঐতিহ্যবাহী ও খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান থাকা সত্ত্বেও আত্মনির্ভরশীল হওয়া তো দূরের কথা, এ দীর্ঘ সময়ে এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের ন্যূনতম আস্থাটিও বোধ করি অর্জন করতে পারিনি। আর এ কারণে চিকিৎসা শিক্ষা বা চিকিৎসাসেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে কেন্দ্র করে বলতে গেলে প্রতিনিয়ত সংঘটিত হচ্ছে নানা অবাঞ্ছিত, অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক ঘটনা। দেশে স্বাস্থ্যসেবার এতসব উদ্যোগ-আয়োজন থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী ও অন্য সামর্থ্যবানসহ বিপুলসংখ্যক মানুষ স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য যে ঘন ঘন বিদেশে যাতায়াত করেন, সেটাও মূলত অনাস্থা, অবিশ্বাস ও সন্দেহের কারণেই। চিকিৎসা যেমন-তেমন, এটা কেমন কথা যে দেহে কোনো রোগবালাই আছে কিনা, তা শনাক্ত করতেও বিদেশের হাসপাতালগুলোর শরণাপন্ন হতে হবে? তাই জেলায় জেলায় মেডিক্যাল কলেজ ও বিভাগে বিভাগে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের আগে নিজেদের প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষা ও সেবার মান নিশ্চিত করা কিংবা বাড়ানোটা আজ জরুরী হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশের কিছুসংখ্যক বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের কারণে পুরো চিকিৎসা সেক্টর প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি অধ্যাপক মাহমুদ হাসান। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, বিভিন্ন কারণে পর্যাপ্ত দক্ষ চিকিৎসক তৈরি হচ্ছে না। অনেক বেসরকারী কলেজে শিক্ষক, মেডিক্যাল উপকরণ সঙ্কট রয়েছে। নতুন মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আর শিক্ষকদের যোগ্যতা ভালভাবে মনিটরিং করা হয় না। একজন শিক্ষককে শিক্ষাদান ও চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে হয়। অনেক সময় শিক্ষাদানের তুলনায় চিকিৎসাদানে বেশি সময় দিতে হয় শিক্ষকদের। অনেক শিক্ষক একাধিক মেডিক্যাল কলেজে সম্পৃক্ত থাকেন। তিনি আরও বলেন, বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলোর মান বজায় রাখতে হবে। নিম্নমানের কলেজ থেকে বের হয়ে একজন দক্ষ চিকিৎসক এবং মানসম্মত চিকিৎসাসেবা দেয়া সম্ভব নয়। এ ধরনের চিকিৎসকরা অনেক সময় জাতির জন্য হুমকি হয়ে উঠেন। ভাড়াটে ক্যাম্পাসে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ থাকে না। নতুন কলেজ অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান অধ্যাপক মাহমুদ হাসান। বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক রশীদ-ই মাহবুব জানান, দক্ষ চিকিৎসক সৃষ্টি এবং মানসম্মত কলেজ গড়তে হলে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির প্রয়োজন রয়েছে। আর তা আন্তরিকভাবেই বাস্তবায়ন করতে হবে। কারণ নিম্নমানের বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের বিরুদ্ধে এক সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও আরেক সরকার এসে তা পুনর্প্রতিষ্ঠা করে। কলেজগুলোর ওপর শক্তিশালী ও স্বচ্ছ মনিটরিং ব্যবস্থা থাকলে দেশে দক্ষ চিকিৎসক ও মানসম্মত কলেজ বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন। ন্যূনতম নিয়মনীতি মেনে চলে না এমন বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজও দেশে রয়েছে বলে স্বীকার করেছেন রাজধানীর বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজের পরিচালক অধ্যাপক আব্দুর রউফ সরদার। তবে প্রশ্নবিদ্ধ কলেজগুলো বন্ধ না করে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে সেগুলোর মানোন্নয়নে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, একটি বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ গড়তে বিপুল অর্থ ও কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন বিষয় জড়িত থাকে। তাই অভিযুক্ত কলেজগুলোকে বন্ধ করা ঠিক হবে না। তিনি জানান, মেডিক্যাল কলেজ থাকলেও হাসপাতাল নেই- এমন কলেজের সংখ্যা খুবই কম। তবে এ ধরনের কলেজও দেশে রয়েছে। আর ভাড়াটে শিক্ষক দিয়েই চলে অনেক কলেজ। এসব অনিয়ম দূর করতে শক্তিশালী মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা উচিত। আর কিছুসংখ্যক কলেজের দুর্বলতার জন্য সকল বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজকে একই শ্রেণীর ভাবা ঠিক হবে না বলে মনে করেন অধ্যাপক আব্দুর রউফ সরদার। বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সভাপতি অধ্যাপক এএসএম আহমেদ আমীন সাংবাদিকদের জানান, মেধাবী শিক্ষার্থীদের সুযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। মেধা মূল্যায়িত হবেÑ এমন ন্যূনতম নম্বর নির্ধারিত করা দরকার। অনেক কলেজে পুরনো দিনের পাঠ্যপুস্তক দিয়ে আগামী দিনের ডাক্তারদের পড়ানো হয়। কিন্তু মেডিক্যাল প্রযুক্তি প্রতিনিয়তই পরিবর্তন হচ্ছে। এক্ষেত্রে শিক্ষকদের যোগ্যতা নিশ্চিত করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন অধ্যাপক এএসএম আহমেদ আমীন। বেসরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজগুলো সরকারী নিয়ন্ত্রণে নেই। অধিকাংশ কলেজ নিজেদের তৈরি নিয়মে চলছে। বেসরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজ স্থাপন ও পরিচালনা আইন ২০১৩ চূড়ান্তকরণ না হওয়ার কারণেই এমনটি হচ্ছে। চিকিৎসক নেতৃবৃন্দ এবং হাসপাতাল ও কলেজ মালিকদের চাপে সরকার এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে পিছুটান দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অথচ বেসরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজ স্থাপন ও পরিচালনা আইন-২০১৩ নামের একটি আইনের খসড়া প্রস্তুত করে রেখেছে সরকার। খসড়া আইনটি চূড়ান্ত ও কার্যকর শুরু হলে বিদ্যমান বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলোর অধিকাংশই প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। গরিব মেধাবী শিক্ষার্থীদের পড়ার সুযোগ হয় না ॥ বেসরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজ স্থাপন ও পরিচালনা আইন-২০১৩ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। বেসরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজগুলো সরকারী নিয়ন্ত্রণে নেই। প্রতিবছরের ভর্তি ফি’র বিষয়টি আলোচনায় চলে আসে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ভর্তি ফি বাবদ ১২ থেকে ১৬ লাখ নেয়া হয় বলে জানা গেছে। তবে ভর্তি ফি’র পরিমাণ কোন কোন কলেজে ১৫ থেকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়। প্রথম শ্রেণীর মেডিক্যাল কলেজগুলোতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেতে অনেক শিক্ষার্থী গোপনে মোটা অংকের টাকা দেয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। সব প্রতিষ্ঠানে এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সে ভর্তি ফি নির্ধারণে হস্তক্ষেপ করে না স্বাস্থ্য অধিদফতর। ফলে স্বাধীনভাবে ভর্তি ফি আদায় করতে পারে বেসরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজগুলো। প্রতি সেশনেই তিক্ত অভিজ্ঞতা পাচ্ছেন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। দীর্ঘদিন ধরে বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলোর বিরুদ্ধে শিক্ষার নামে বাণিজ্যের অভিযোগ উঠে আসছে। প্রতিবছরই শিক্ষাবর্ষে ভর্তি ফি, উন্নয়ন ব্যয়, বিধিসহ নামী-বেনামী অনেক খাতের অজুহাত দেখিয়ে চড়া ফি আদায়ের প্রতিযোগিতা চলে। ওই সব প্রতিষ্ঠানের ভর্তি বাণিজ্যসহ নানা নিয়মের বিষয়টি দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মেধাবী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের তীব্র যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। একমাত্র অর্থের কারণে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মেধাবী শিক্ষার্থীরা বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পায় না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি অধ্যাপক মাহমুদ হাসান জনকণ্ঠকে জানান, বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলোর মান বজায় রাখতে হবে। নিম্নমানের কলেজ থেকে বের হয়ে একজন দক্ষ চিকিৎসক এবং মানসম্মত চিকিৎসাসেবা দেয়া সম্ভব নয়। এ ধরনের চিকিৎসকরা অনেক সময় জাতির জন্য হুমকি হয়ে ওঠেন। দেশের শতকরা ৬০ ভাগ চিকিৎসক বের হয় বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ থেকে। আর তাদের সকলেই ধনাঢ্য পরিবার থেকে আসে। ফলে তারা গরিব মানুষের কষ্ট অনুভব করতে পারেন না বলে মনে করেন বিএমএ সভাপতি।
×