ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইসলামিক স্টেটের পালমিরা দখলের পর আশঙ্কা

ধ্বংসের মুখে বিশ্ব ঐতিহ্য

প্রকাশিত: ০৩:৩৪, ২২ মে ২০১৫

ধ্বংসের মুখে বিশ্ব ঐতিহ্য

ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গীদের হাতে সিরিয়ার ঐতিহাসিক পালমিরা শহরের পতনের ফলে প্রাচীন বিশ্বের খুবই সৌন্দর্যম-িত ও সুরক্ষিত প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য ধ্বংসের মুখে পড়েছে। মরুযাত্রা পথের পাশে অবস্থিত ওই শহরটি প্রথম ও দ্বিতীয় শতাব্দীতে গ্রীক, রোমান ও পারসিক কৃষ্টির মিলনস্থলে পরিণত হয়েছিল। শহরটির সমৃদ্ধ ও চিত্তাকর্ষক ধ্বংসাবশেষের মধ্যে রয়েছে টেম্পল অব বাল একটি প্রাচীন নাট্যমঞ্চ এবং ২০০০ বছর পুরনো এক প্রসিদ্ধ স্তম্ভ শ্রেণী যার, ওপর এরই মধ্যে মর্টারের গুলির ফলে কালো দাগ পড়েছে। আইএস জঙ্গীরা এর আগে যখন সিরিয়া ও ইরাকের বিরাট এলাকা দখল করে তখন তারা পৌত্তলিকতা বলে নিন্দা জানিয়ে অসংখ্য প্রাচীন স্তল ও স্থাপত্যকর্ম ধ্বংস করে। তারা তাদের লড়াইয়ের ব্যয় মেটাতে বহনযোগ্য প্রাচীন পুরাকীর্তিগুলো লুণ্ঠন করে বিক্রি করে দেয়। এ থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উভয়পর্যায়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে যে, জাতিসংঘ ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যস্থল পালমিরার অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করা হতে পারে। ধ্বংসের হুমকির কথা বাদ দিলেও আইএস পালমিরার অঘনিত বিশাল পুরাকীর্তিও অবৈধভাবে পাচার করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে পারে। ইউনেস্কোর ডিরেক্টর জেনারেল আইরিনা বোকোভা বুধবার এক বিবৃতিতে বলেন, পালমিরার বিশ্ব ঐতিহ্যস্থলের পরিস্থিতি নিয়ে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এ প্রতœতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থল। সিরীয় কর্মকর্তারা বলেন, তারা জঙ্গীদের এগিয়ে আসার সময় অনেক পুরাকীর্তি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে ধ্বংসের পরিমাণ সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করেন। দেশের পুরাকীর্তি বিষয়ক প্রধান মামুন আবদুল করিম বলেন, শত শত মূর্তি ধ্বংস ও বিক্রি করা হবে বলে আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম। সেগুলো এখন নিরাপদ স্থানে রয়েছে। তিনি বলেন, শহরের জাদুঘর ও বড় বড় স্মৃতিসৌধ স্পষ্টতই অন্যত্র সরানো যেতে পারে না। তিনি বলেন, এটি সমগ্র বিশ্বের লড়াই। পালমিরার পতন ইসলামিক স্টেটকে পরাজিত করতে ওবামা প্রশাসনের পরিকল্পনা নিয়ে নতুন করে সন্দেহ জাগিয়ে তুলতে বাধ্য। যুক্তরাষ্ট্র ইরাকের আনবার প্রদেশের রাজধানী রামাদির পতনের কী পদক্ষেপ দেবে, তা নিয়েই ব্যতিব্যস্ত রয়েছে। সিরিয়ায় নতুন সঙ্কট দেখা দিয়েছে। পালমিরাতে বা এর আশপাশে যে কোন বিমান হামলা সম্ভবত প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বাহিনীর উপকারে আসবে। এখন পর্যন্ত সিরিয়ায় সরকারের নিয়ন্ত্রণের অনেক বাইরের এলাকাতেই মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনী বহুলাংশে বিমান হামলা চালিয়েছে। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যে নেতাকে ক্ষমতাচ্যুত করার আহ্বান জানিয়েছেন, তিনি তাকেই (আসাদ) সহায়তা করছেন- এমন ধারণা সৃষ্টি এড়ানোই এর উদ্দেশ্য। পালমিরার প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন রক্ষা করতে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে অন্যান্য বিখ্যাত প্রাচীন নীতিগুলোর ওপর আইএসের পরিচালিত হামলার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো আহ্বান জানিয়েছে। পালমিরার পতন আইএস ও আসাদ উভয়ের বিরোধী এমন সিরীয়দের নতুন সঙ্কটের মুখে ফেলে দিয়েছে। শহরটি কিছু সময়ের জন্য আংশিকভাবে স্থানীয় বিদ্রোহী যোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। পরে আইএস সংঘর্ষে এক বড় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। কিন্তু বিদ্রোহীরা আর সেখানে উপস্থিত নেই। এতে আসাদের কোন কোন বিরোধী তার বাহিনীই শহর ও পুরাকীর্তি রক্ষা করতে পারে বলে আশা করার মতো পুরাতন অবস্থানে ফিরে যাচ্ছে। সিরিয়ার পুরাকীর্তি বিষয়ক সাবেক কর্মকর্তা আমর আল আজম বলেন, এটি ঘরে হাতি ঢোকার মতো। পালমিরার প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ রক্ষা করতে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা নিতে তিনিও আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বাস্তবে এর অর্থ হবে এমন সরকারকে সহায়তা করে সামরিক হস্তক্ষেপ করা, যে সরকারের তিনি তীব্র বিরোধী। আইএস জিহাদিরা বৃহস্পতিবার পালমিরার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে বলে এক পর্যবেক্ষণ সংস্থা জানায়। এতে বিশ্ব ঐতিহ্যস্থল ধ্বংসের ঝুঁকির মধ্যে পড়ল। সরকারী সৈন্যরা শহর এবং এর আশপাশের অবস্থানগুলো থেকে পিছু হটেছে। -নিউইয়র্ক টাইমস ও এএফপি
×