ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীত

প্রকাশিত: ০৩:২২, ২২ মে ২০১৫

জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীত

জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীত একটি দেশ ও জাতির আত্মপরিচয়, আত্মগৌরব, আত্মমর্যাদা, আত্মঅহঙ্কারকে সমুন্নত রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত বা প্রকাশ করে। জাতির মর্যাদার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে তার ইতিহাস-ঐতিহ্য আর সাংস্কৃতিক গৌরবগাথা। এজন্য একটি দেশ ও জাতির পতাকা এবং সঙ্গীত বহন করে সেই দেশ ও জাতির আশা-আকাক্সক্ষা এবং অনন্ত সম্ভাবনা। এ-ই হচ্ছে পতাকা ও সঙ্গীতের সর্বজনীন মৌলিক তাৎপর্য। কিন্তু যে জাতি তার স্বাধীনতা বা দেশের পতাকা ও সঙ্গীতের জন্য ১৯৭১ সালের ভয়াবহ সঙ্কটের কাল পেরিয়ে এসেছে যুদ্ধ, গণহত্যা আর নারী নির্যাতনের দগদগে ক্ষত নিয়ে, সেই জাতির জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা ভিন্ন এবং অনন্য। স্বাধীনতার ৩৯ বছর পর ২০১০ সালে জাতীয় পতাকা ও সঙ্গীতের অবমাননা, অপব্যবহার রোধ করতে আইন করতে হয়েছে। তার মানে এসবের অবমাননা হয়ে আসছিল এ দেশে। শুধু তাই নয়, ১৯৭৫-এর পর জান্তা শাসকরা জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তনের সুকৌশলে চেষ্টা চালিয়েও সুবিধা করতে পারেনি। তবে অনেকবারই এসবের ওপর আঘাত হানার চেষ্টা হয়েছে নানা সময়ে। বিষয়টি অনাকাক্সিক্ষত এবং উদ্বেগের। এক সময় যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী পদে বসিয়ে, তাদের গাড়িতে পতাকা উড়িয়ে অবমাননার ঘটনাও জাতি প্রত্যক্ষ করেছে। যে জাতি লাখ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জন করেছে পতাকা ও সঙ্গীত, কেন তাকে অমর্যাদার আসনে বসানো হবে সে প্রশ্নও এসেছে বার বার। এটা রুঢ় বাস্তব যে, অনেক ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জিত হলেও পতাকা বা সঙ্গীতের মর্যাদা সর্বাংশে অক্ষুণœ রাখতে সফল হয়নি। দেশের বিভিন্ন গোষ্ঠী পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অবমাননা হতে দেখা গেছে। জাতীয় সঙ্গীতের প্রতি চরম অবহেলা প্রদর্শন করা হয়। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে গাওয়াই হয় না। জাতীয় সঙ্গীত বিধিমালা মানা হয় না বহুকাল। ১৯৭২ সালে জাতীয় পতাকা বিধিমালা এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল এ্যান্থেম ফ্ল্যাগ এ্যান্ড এমব্লেস অর্ডার জারি করা হয়। পতাকা ও সঙ্গীতের অবমাননা হচ্ছে বলে তা রোধে ২০১০ সালে নয়া আইন পাস হয় সংসদে। তথাপি মোবাইল ফোনের রিংটোন হিসেবে জাতীয় সঙ্গীতের বাণিজ্যিক ব্যবহারের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত আদালতকে কয়েকটি কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি ও জরিমানা বহাল করতে হয়েছে। যা দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দেয়ার নির্দেশও ঝুলে আছে। ১৯৭২ সালের ১৩ জানুয়ারি কেবিনেট সচিব এইচটি ইমামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ‘আমার সোনার বাংলা’ জাতীয় সঙ্গীত বা ন্যাশনাল এ্যান্থেম, ‘ধনধান্য পুষ্পভরা’ জাতীয় গীত বা ন্যাশনাল সঙ এবং ‘চল চল চল ঊর্ধ্ব গগনে’ রণসঙ্গীত হিসেবে অনুমোদন দেয়া হয়। সংবিধানে এসব সংরক্ষণের বিধানও রয়েছে। ১৯৭৫ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় গীত এবং শেষে জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হতো। ১৯৭৮ সালে জান্তা শাসক নয়া বিধিমালা জারি করে, যাতে জাতীয় গীত নেই। তবে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে দলীয় গান বাজানো হতো। জাতীয় গীতের এই অবমাননা রোধ বা তাকে পুনর্¯’াপনের কোন উদ্যোগ সরকারের তরফ থেকে দেখা যায়নি। স্বাধীনতার পর টিভি ও বেতারে বাণীসহ জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হতো। ফলে সাধারণ মানুষও বার বার শুনে তা যেমন শিখতে পারত, শিক্ষার্র্থীরাও শুদ্ধভাবে গাইতে ও এর মর্যাদাদানে সচেষ্ট হতো। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, স্বাধীনতার ৪৪ বছরেও জাতীয় সঙ্গীতের কোন রেকর্ড সরকারীভাবে প্রকাশ হয়নি। সব মিলিয়ে এসব বিষয়ে কারোরই নজর নেই। যাদের দায়িত্ব তাদেরও নেই। দেশ ও স্বাধীনতার মতো জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীতকে নতুন প্রজন্ম যাতে ভালবাসতে শেখে, সেই শিক্ষা বিস্তার নিশ্চিতকরণে দায়িত্ব রাষ্ট্রেরই।
×