ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিদেশী ঋণ ব্যয়ে অনীহা

প্রকাশিত: ০৬:২২, ২১ মে ২০১৫

বিদেশী ঋণ ব্যয়ে অনীহা

বৈদেশিক ঋণের অর্থ ব্যয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে না মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে তাদের ঝোঁক বাড়ছে সরকারের নিজস্ব তহবিলের অর্থের প্রতি। দিন দিন বাড়ছে এই প্রবণতা। বৈদেশিক ঋণের অর্থ ব্যয় করতে গিয়ে নানা প্রক্রিয়া সমাপ্ত করা; দাতাদের আমলাতান্ত্রিকতা, দুর্নীতির সুযোগ কম থাকা এবং ব্যাপক মনিটরিংসহ নানা কারণে এমনটি হচ্ছে। এ কারণে সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণের ওপর চাপ পড়ছে এবং বেসরকারী বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অন্যদিকে বাড়ছে বৈদেশিক সহায়তার পাইপলাইন। এমনিতে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থা পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারছে না বৈদেশিক ঋণের অর্থ। এ কারণেই ধারাবাহিকভাবে প্রতিবছরই সংশোধিত এডিপিতে কমানো হচ্ছে বৈদেশিক ঋণের বরাদ্দ। যেসব প্রকল্পে বৈদেশিক সাহায্য রয়েছে সেসব প্রকল্পের পরিচালকরা বরাদ্দ অর্থ পুরোপুরি ব্যয় করতে না পারার জন্য কোন জবাবদিহির আওতায় আসছেন না। প্রকল্প পরিচালকরা সরকারী অর্থ ব্যয়ে যতটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, ঠিক ততটাই যেন অস্বস্তিবোধ করেন বরাদ্দ বৈদেশিক অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে, যা কখনই কাম্য হতে পারে না। অথচ মন্ত্রণালয় এজন্য কোন কার্যকর পন্থা অবলম্বন করছে না। কোন কোন মন্ত্রণালয় প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বৈদেশিক সহায়তার অর্থ ব্যয় করতে না পেরে ফেরত দিয়েছে। কিন্তু দেখা গেছে, ওই একই প্রকল্পের জন্য ওই মন্ত্রণালয় সরকারী তহবিল থেকে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ চেয়েছে। এবারের সংশোধিত এডিপি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সরকারী তহবিলের চেয়ে বৈদেশিক সহায়তা থেকে বেশি অর্থ ছেঁটে ফেলা হয়েছে। যেমন মূল এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ৮০ হাজার ৩শ’ ১৪ কোটি। সেটি কমিয়ে করা হয়েছে ৭৫ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্প পরিচালকদের অদক্ষতা, ইংরেজী ভাষায় পশ্চাদপদতা, অযোগ্যতার কারণে অবস্থা এমনটা দাঁড়িয়েছে বলে পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে। দাতাদের শর্ত ও নানা নিয়ম-কানুন রয়েছে। এসব শর্ত মানার ক্ষেত্রে বিভিন্ন কাগজপত্র পূরণ করতে হয়। তাছাড়া বিদেশী টাকা ব্যয়ের জন্য জবাবদিহির ব্যবস্থা। প্রকল্প পরিচালকরা এক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেন না। ভাষাগত সমস্যাসহ অন্যান্য সমস্যার কারণে তাঁরা উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে কার্যকর ‘নেগোসিয়েশন’ করতে পারেন না। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, একজন প্রকল্প পরিচালক একসঙ্গে ১২টি প্রকল্পের দায়িত্বে রয়েছেন। ফলে কোন প্রকল্পের জন্য সময় প্রদান দুষ্কর হয়ে দাঁড়ায়। এসব কারণে বৈদেশিক ঋণের অর্থ ব্যয়ে তাঁরা অস্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে আসছেন। পাশাপাশি সরকারী তহবিলের অর্থ যথেচ্ছ ব্যয় করা যায় বলেই তাতে তাঁদের আগ্রহ। কোন রকমভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায়, যার জন্য কোন জবাবদিহি করতে হয় না। আবার সরকারী অর্থ আগে বা পরে কিংবা সুবিধাজনকভাবে ব্যয় করার অবাধ সুযোগ রয়েছে, যা বৈদেশিক ঋণের ক্ষেত্রে অসম্ভব। অথচ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে বৈদেশিক ঋণের অর্থ ব্যয় বাড়ানো জরুরী হলেও তা করা হচ্ছে না। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ বৈদেশিক সহায়তার অর্থ ব্যয় করতে না পারার বা অনাগ্রহের কতিপয় কারণ চিহ্নিতও করেছিল। কিন্তু সেসব বিষয়ের কোন সমাধানের চেষ্টা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি না বাড়ায় উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুত প্রায় ১ হাজার ৯শ’ ৪৬ কোটি ডলার অর্থ পাইপলাইনে আছে। দেশের ইতিহাসে এই প্রথম বৈদেশিক সহায়তায় এত অর্থ জমা হওয়ার ঘটনা। নিয়মানুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন যত বাড়বে, অর্থছাড় ততই হবে। কিন্তু বাস্তবে বাস্তবায়ন গতি অতি ধীর। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় গত ক’বছর ধরে সৃষ্ট এই সমস্যাগুলোর সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। অথচ উচিত বৈদেশিক সহায়তা প্রকল্প বাস্তবায়নে পৃথক মনিটরিং সেল গঠন করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া। আমলাতন্ত্রের অদক্ষতা, অযোগ্যতার দায়ভার দেশবাসী কেন নেবে? বরং দ্রুত এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে দেশ ও জাতির স্বার্থে।
×