ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ছাত্রাবাস পর্যায়ে ইতোমধ্যেই কাজ শুরু হয়েছে

পুরো ঢাবি এলাকাকে সিসিটিভির আওতায় আনা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২০ মে ২০১৫

পুরো ঢাবি এলাকাকে সিসিটিভির আওতায় আনা হচ্ছে

মুহাম্মদ ইব্রাহীম সুজন ॥ ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ও নিয়মিত মনিটরিংয়ের উদ্দেশ্যে সম্পূর্ণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকাকে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার (সিসিটিভি) আওতায় আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। হল পর্যায়ে ইতোমধ্যে এই কাজ শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিস ও হল অফিস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বর্ষবরণ অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও জাতীয় দিবসে এই ক্যাম্পাসে লোকসমাগম বৃদ্ধি পায়। তাই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থেকে যায়। এবারের পহেলা বৈশাখে টিএসসি এলাকায় নারীদের উপর যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটে। যা সিসিটিভির ফুটেজ দেখে নিশ্চত করা হয়। এই টিভির ফুটেজ দেখে জড়িত সন্দেহে আটজনের ছবির তালিকা দিয়েছে ডিএমপি। এরপর থেকেই পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে সিসিটিভির আওতায় আনার বিষয়টি সবার নজরে আসে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে বিএনপির লাগাতার হরতাল-অবরোধের কর্মসূচীর সময় বিচ্ছিন্ন ককটেলের বিস্ফোরণ ও পেট্রোলবোমা নিয়ে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছিল। এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা উঠে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রাধ্যক্ষদের স্ট্যান্ডিং কমিটির একটি বৈঠকে ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়। এই মিটিংয়ে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগের প্রস্তাব করা হয়। বৈঠকে আলোচনার পর দুইভাবে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার পরামর্শ আসে। ক্যাম্পাসের হল ও আবাসিক এলাকা এবং ক্যাম্পাসের বিভিন্ন একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনকে এই উদ্যোগের আওতায় এনে বাস্তবায়ন করা। হলগুলোকে তাদের নিজস্ব অর্থায়নের মাধ্যমে এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করবে, যার দেখভাল করবেন হল প্রশাসন। ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি), ভিসি চত্বর, কলা ভবন, কার্জন হল, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ ভবন, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারসহ ক্যাম্পাসের প্রতিটি প্রবেশপথ ও গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী সিসিটিভি বসানো হবে। যা প্রক্টরের সরাসরি তত্ত্বাবধানে মনিটরিং করা হবে। কয়েকটি হলে এখন এই উদ্যোগের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক এম আমজাদ আলী এ বিষয়ে জনকণ্ঠকে বলেন, পুরো ক্যাম্পাসকে সিসিটিভির আওতায় আনার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। হলগুলোতে সিসিটিভি স্থাপনের কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। তবে আর্থিক সমস্যার কারণে কেন্দ্রীয়ভাবে এই কাজ তেমন অগ্রসর হয়নি। তিনি আরও বলেন, ক্যাম্পাসের যেসব জায়গাগুলোকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে সে হিসাব অনুযায়ী মোট ১০৮ থেকে ১১৬টির মতো সিসিটিভি দিয়েই প্রয়োজনীয় মনিটরিং নিশ্চিত করা যাবে। এতে প্রয়োজন হবে আনুমানিক এক কোটি টাকা। সিসিটিভি স্থাপন ও মনিটরিংয়ের খরচের ব্যাপারে ইতোমধ্যে দুটি কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলেও জানান তিনি। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশিন (ইউজিসি) পরিচালিত ‘হায়ার এডুকেশন কোয়ালিটি এনহান্সমেন্ট প্রজেক্ট (হেকেপ)-এর মাধ্যমে ঢাবি ক্যাম্পাসকে অপটিক্যাল ফাইবারের আওতায় আনার জন্য কেবল স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। উচ্চ গতির ডেটা ট্রান্সফারে সক্ষম এই কেবল দিয়েই সিসিটিভি পরিচালনা করার সম্ভাব্যতাও যাচাই করে দেখছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ব্যাপারে সিসিটিভি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলেও জানান প্রক্টর। তিনি আরও জানান, সিসিটিভি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিংয়ের জন্য ইন্টারনেটের এই কেবল ব্যবহার করা যাবে এবং এতে খরচ অনেক কমে আসবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনেট ব্যবস্থা মনিটরিংয়ের জন্য প্রশাসনিক ভবনে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ রয়েছে। সিসিটিভি মনিটরিংয়ে একটি আলাদা কক্ষ তৈরির পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি। তবে ঠিক কত দিনের মধ্যে এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হতে পারে সে সম্পর্কে স্পষ্ট করে তিনি কিছুই বলেননি। তিনি জানান, যতদ্রুত সম্ভব আমরা পুরো ক্যাম্পাসকে সিসিটিভির আওতায় নিয়ে আসব। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীম উদ্দীন হল ও মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে সিসিটিভি স্থাপন করা হয়েছে। এগুলোর নিয়ন্ত্রণ কক্ষ হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে হল অফিসকে। এখান থেকেই ২৪ ঘণ্টা মনিটরিং করা হচ্ছে হল দুইটির সার্বিক কার্যক্রম। এ বিষয়ে কবি জসীম উদ্দীন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোঃ রহমত উল্লাহ জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের হলে নয়টি সিসিটিভি লাগানো হয়েছে। যার মধ্যে ছয়টি ক্যামেরা সচল রয়েছে। এ ছয়টি ক্যামেরা দ্বারা হলের সার্বিক নিরাপত্তা কর্মকা- মনিটরিং করা হচ্ছে। বাকি তিনটি ক্যামেরাও কয়েকদিনের মধ্যেই চালু করা হবে। এছাড়া শামসুন নাহার হল, রোকেয়া হলসহ ছাত্রীদের পাঁচটি হলেই একাধিক সিসিটিভি স্থাপন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। মাস্টার দা সূর্য সেন হলে সিসিটিভি বসানোর কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন হলটির প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে সিসি ক্যামেরা ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য জিনিস ক্রয় করা শেষ হয়েছে। হলটির সংস্কার কাজ শেষ করে খুব দ্রুতই এই সিটিটিভিগুলো বসানো হবে।
×