ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

আটক বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনবে জাতিসংঘ

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২০ মে ২০১৫

আটক বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনবে জাতিসংঘ

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ নৌকা করে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে কয়েকটি দেশে আটক বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনতে রাজি হয়েছে জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা আইওএম। ঢাকায় আইওএমের মুখপাত্র আসিফ মুনীর বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের একটি অনুরোধে তারা সম্মতি দিয়েছেন। তিনি জানান, জরুরীভিত্তিতে ১০ লাখ মার্কিন ডলারের একটি তহবিল মঞ্জুর করা হয়েছে। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়াতে দুই থেকে তিন হাজারের মতো বাংলাদেশী আটক রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তালিকা তৈরি হচ্ছে ॥ আইওএম জানিয়েছে, জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর এবং স্থানীয় বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোর সহযোগিতায় আটক বাংলাদেশী নাগরিকদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেছে। মুনীর জানান, প্রথমে মালয়েশিয়া আটক বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনা হবে। মালয়েশিয়ার লাংকাউয়ি দ্বীপে কয়েকটি নৌকায় পৌঁছানো অভিবাসীদের মধ্যে সাতশ’র মতো বাংলাদেশী রয়েছে। এছাডা অভিবাসী ভর্তি যে নৌকাটি গত সপ্তাহে ইন্দোনেশিয়ার জেলেরা উদ্ধার করেছে, তাতে ছয় থেকে সাতশ’র বাংলাদেশী রয়েছে বলে জানা গেছে। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ার উপকূলের কাছে কয়েক ডজন নৌকায় ভাসছে কয়েক হাজার মানুষ ধারণা করা হচ্ছে, আটক বাংলাদেশীদের সংখ্যা থাইল্যান্ডে অনেক বেশি। গত দু’তিন বছর ধরে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে থাইল্যান্ডে তাদের অনেকে আটক হয়েছে। পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, থাইল্যান্ডের বিভিন্ন কারাগারে এবং বন্দী শিবিরে বর্তমানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় বাংলাদেশী আটক রয়েছে। তবে দেশে ফিরিয়ে আনার আগে, আটককৃতদের নাগরিকত্ব শনাক্ত করবে বাংলাদেশ সরকার। আইওএমের নীতি অনুযায়ী তারা শুধু দেশে ফিরতে ইচ্ছুকদের সহযোগিতা করতে পারে। কেউ ফিরতে না চাইলে, জাতিসংঘের এই সংস্থার কিছু করার থাকে না। ভাসমান অভিবাসীদের জায়গা দেবে ফিলিপিন্স ॥ এদিকে বাংলানিউজ জানায়, সাগরে ভাসমান মিয়ানমারের তিন শ’ রোহিঙ্গা অভিবাসীকে জায়গা দেয়ার ব্যাপারে ইচ্ছা প্রকাশ করেছে ফিলিপিন্স। এই রোহিঙ্গা অভিবাসীরা গত সপ্তাহেই মিয়ানমার ছেড়ে সমুদ্রপথে পাড়ি জমিয়েছিল। ফিলিপিন্সের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাতে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএন-এইচসিআর) মুখপাত্র বার্নার্ড কারব্লাট মঙ্গলবার ফিলিপিন্সের বিচারমন্ত্রী লাইলা ডি লিমার সঙ্গে সাক্ষাত করেন। এ সময় সাগরে ভাসমান অভিবাসীদের ব্যাপারে ফিলিপিন্সের করণীয় বিষয়েও আলাপ করেন দুজন। এ বৈঠকের একদিন আগেই সাগরে ভাসমান অভিবাসীদের সুরক্ষা ও সহযোগিতা প্রদানের ঘোষণা দেয় ফিলিপিন্স। এ ব্যাপারে ফিলিপিন্সের বিচারমন্ত্রী লাইলা ডি লিমা জানান, শরণার্থী বিষয়ক ১৯৫১ সালের কনভেনশনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সাগরে ভাসমান দক্ষিণ এশীয় অন্যান্য অভিবাসীদের জায়গা দেয়ার ব্যাপারেও আশ্বাস প্রদান করেন তিনি। ইউএনএইচসিআরের আহ্বান ॥ সমুদ্রে ভাসমান মানুষ উদ্ধারে কিছু করার জন্য জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর প্রতি ফের আহ্বান জানিয়েছে। মঙ্গলবার থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার প্রতি সতর্কতা উচ্চারণ করে সংস্থাটি জানায়, সমুদ্রে ভাসমান অসহায় হাজার হাজার মানুষ সরকারের প্রতি কিছু করার জন্য অসহায়ভাবে আবেদন করে যাচ্ছে। উদ্বাস্তু মানুষের উদ্ধারে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এখনই কিছু একটা করা উচিত। ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র এড্রিয়ান এডওয়ার্ড জেনেভায় সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের হিসাব মতে, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের চার হাজারের বেশি মানুষ সমুদ্রে ভাসমান রয়েছেন। এর মধ্যে মাত্র ৪০ দিনে দুই হাজারের বেশি অভিবাসী বহনকারী অন্তত পাঁচটি নৌকা ইতোমধ্যে দেশ দুটির উপকূল ছেড়ে এসেছে। ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি সাংবাদিকদের জানান, ইতোমধ্যে মিয়ানমারের কয়েকশ’ অভিবাসী রাখাইন রাজ্যে ফিরে গেছেন। তবে এজন্য পাচারকারীদের গড়ে দুই লাখ থেকে তিন লাখ কিয়াট (১৮২-২৭৩ মার্কিন ডলার) মুক্তিপণ হিসেবে দিতে হয়েছে। এডওয়ার্ড থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও মিয়ানমারের প্রতি জরুরী মানবিক আবেদন জানিয়ে বলেন, ভাসমান মানুষদের জন্য প্রাণ বাঁচানোর ওষুধ, নিরাপত্তা এবং তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার এখনই সময়। তবে সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। তিনি এ সময় মিয়ানমারের প্রতি আবেদন জানিয়ে বলেন, যেসব উদ্বাস্তু নাগরিক আবার নিজে দেশে ফিরে যাচ্ছেন, তাদের যেন কোন রকম শাস্তির মুখোমুখি করা না হয়।
×