ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জঙ্গী দমনে গঠিত হচ্ছে ‘কাউন্টার টেররিজম ইউনিট’

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২০ মে ২০১৫

জঙ্গী দমনে গঠিত হচ্ছে ‘কাউন্টার টেররিজম ইউনিট’

শংকর কুমার দে ॥ খুব দ্রুতই গঠন করা হচ্ছে জঙ্গীবাদ দমনে চৌকস বাহিনী নিয়ে ‘কাউন্টার টেররিজম ইউনিট’। গত ছয় বছর ধরে ফাইল চালাচালির মধ্যে আটকা পড়ে থাকা কাউন্টার টেররিজম ইউনিট গঠনের প্রক্রিয়া আশার আলো দেখতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। এই ধরনের বিশেষায়িত ইউনিট না থাকায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে জঙ্গীরা। একের পর এক মুক্তমনা লেখক ও ব্লগার খুন হচ্ছে। অথচ খুনের পরিকল্পনাকারীসহ শীর্ষ পর্যায়ের জঙ্গীরা ধরা পড়ছে না। জঙ্গীদের তালিকাভুক্ত টার্গেট করা ৭৩ মুক্তমনা লেখক ও ব্লগার আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে ওঠার পটভূমিতে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। আমেরিকাসহ উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত এন্টি টেররিজম সংস্থার আদলে এই ধরনের সংস্থা গঠন করার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে প্রায় ছয় বছর আগে ’০৯ সালে। এর উদ্দেশ্য জঙ্গী তৎপরতা ও সন্ত্রাসী কর্মকা- দমন। সরকারের নীতি নির্ধারক মহলে এই প্রস্তাব পেশ করেছে পুলিশ সদর দফতর। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে পুলিশের সদর দফতর। পুলিশ সদর দফতরের প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়েছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতে মৌলবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বর্তমানে দেশে নাশকতামূলক কর্মকা- ঘটানোর জন্য তৎপরতা চালাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী বর্তমানে জঙ্গী তৎপরতা এবং সন্ত্রাসী কর্মকা- একটি বহুল আলোচিত সমস্যা হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহরীর, জেএমবি, হরকত-উল-জিহাদ, চরমপন্থী সর্বহারা গোষ্ঠী এই মুহূর্তে দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। বিশ্বায়ন ও প্রযুক্তির ব্যবহারে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী যে ধরনের সন্ত্রাসী ও জঙ্গী কর্মকা- সংঘটিত হচ্ছে তাতে ওই ধরনের অপরাধজনক কর্মকা- প্রতিরোধ করা জরুরী। এই জন্য আধুনিক লজিস্টিক, গোয়েন্দা সরঞ্জামসহ ন্যাশনাল পুলিশ ব্যুরো অব কাউন্টার টেররিজম ইউনিট গঠন করা ছাড়া জঙ্গী তৎপরতা, সন্ত্রাসী কর্মকা-ের মতো ভয়াবহ অপরাধ দমন কঠিন হয়ে পড়েছে। পুলিশের প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়, দেশের র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), আর্মড ব্যাটালিয়ন পুলিশ (এপিবিএন), ইউনিফর্ম পুলিশ, মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ সব ধরনের কাজ করে থাকে একত্রে। কিন্তু সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী এবং জঙ্গী কর্মকা- দমনে প্রয়োজন প্রযুক্তিনির্ভর বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ, অভিজ্ঞতা ও কৌশল। এটার এখন খুবই অভাব। ভয়াবহ ধরনের অপরাধ দমনে উন্নত প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনও অনেক পিছিয়ে আছে। এ কারণেই জঙ্গী গোষ্ঠী ও সন্ত্রাসীরা মারাত্মক ধরনের অপরাধ করে পার পেয়ে যাচ্ছে বার বার। এতে নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ছে দেশ ও দেশের মানুষজন। স্বরাষ্ট্্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, হিটলিস্টে থাকা ভিআইপি ব্যক্তি, বিশিষ্ট নাগরিক ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের ওপর আঘাত করার পরিকল্পনা থাকে জঙ্গী গোষ্ঠীর। জঙ্গীদের তৎপরতা ঠেকাতে ২০০৯ সালের ১৫ নবেম্বর কাউন্টার টেররিজম ইউনিট গঠন করতে পুলিশ সদর দফতর থেকে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। যাচাই-বাছাই শেষে প্রস্তাবটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে যায়। পুলিশ সদর দফতর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে, আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে, আবার অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে, এভাবে এক মন্ত্রণালয় থেকে আরেক মন্ত্রণালয় ঘুরে লাল ফিতায় এতদিন বন্দী হয়ে পড়ে ছিল কাউন্টার টেররিজম ইউনিট গঠন প্রক্রিয়া।
×