ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এল নিনোর আগাম বার্তা

প্রকাশিত: ০৩:৩৮, ২০ মে ২০১৫

এল নিনোর আগাম বার্তা

নির্ধারিত সময়ের আগেই দেশে মৌসুমি বায়ু ঢুকে পড়ছে। এল নিনোর প্রভাবে ভয়াবহ খরার কবলে পড়ছে দেশের উত্তরাঞ্চলসহ অনেক এলাকা। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের অভাবে দেশের অনেক অঞ্চলে স্বাভাবিক চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। সকাল থেকে আকাশ বেশ মেঘলা থাকছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেঘ কেটে জ্বালা ধরানো রোদে প্রাণান্তকর অবস্থা, আবার রাতের দিকে অনেক সময়ই বৃষ্টি নামবে নামবে করেও আর নামছে না। একটা দমকা হাওয়াতেই উড়ে যাচ্ছে একটু স্বস্তির যাবতীয় সম্ভাবনা। এ অবস্থায় চলতি মে মাসের তৃতীয় সপ্তাতেই বর্ষার খোঁজ শুরু হয়ে গেছে। এবার আগাম বর্ষায় কম বৃষ্টি হতে পারে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুটি দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এটি উত্তরে মোড় নিয়ে বাংলাদেশে ঢুকবে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই। জুন থেকে সেপ্টেম্বর অবধি বর্ষাকালে স্বাভাবিকের চেয়ে বৃষ্টি কম হলে ফসল নষ্ট হবে। গত পঞ্চাশ বছরের স্বাভাবিক গড়ের তুলনায় এ বছর বৃষ্টিপাত হবে ৯৩ শতাংশ। বৃষ্টি যে কম হবে তার সম্ভাবনা ৩০ শতাংশ আর স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা ২৮ শতাংশ। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে মোট বৃষ্টিপাতের ৭০ শতাংশ হয়ে যায়। তার চেয়ে কম হলে ফসলহানি ঘটে। ফলে সমস্যা বাড়ে নানাভাবে, নানা দিকে। গত বছরও এল নিনোর প্রভাবে ২১ দশমিক ৭ শতাংশ বৃষ্টি কম হয়েছে। ফলে উত্তরবঙ্গে খরার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। এবারও তাই। এ বছর অবশ্য মার্চে অসময়ে বৃষ্টি হয়েছে। বেশ কিছু আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থা ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছে এল নিনোর কারণে গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চলে বৃষ্টি কম হতে পারে। স্প্যানিশ শব্দ এল নিনো মানে দুরন্ত ছেলে আর তা যখন নেগেটিভ রূপ ধারণ করে তখন তাকে লা নিনো (দুরন্ত মেয়ে) বলা হয়। এ সময় প্রশান্ত মহাসাগরের বিষুবরেখা বরাবর পূর্ব এবং কেন্দ্রীয় সমুদ্রপৃষ্ঠে পানি গরম হয়ে ওঠে। তার প্রভাব পড়ে বিশ্বের বায়ু প্রবাহে এবং ভারতীয় উপমহাদেশের মৌসুমি বায়ুর ওপরও। সমুদ্র তলদেশের এই উষ্ণ প্রাকৃতিক অবস্থাকে ভূগোলের ভাষায় এল নিনো বলা হয়। যার কারণে বঙ্গোপসাগর-আরব সাগরে নিম্নচাপ গঠনের প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে গতি হারায় বর্ষা। তাই এল নিনোর উপস্থিতি ধরা পড়লেই মৌসুম প্রমাদ গনে। গতবারের মতো এবারও বর্ষার গোড়ায় এল নিনো ভালরকম শক্তি নিয়ে হাজির থাকতে পারে। জুনের প্রথম থেকে জুলাই পর্র্যন্ত এল নিনোর প্রভাব ৫০ থেকে ৬০ ভাগ থাকার সম্ভাবনা। এ বছর ইতোমধ্যে এল নিনো শুরু হয়ে গেছে। আবহাওয়াবিদদের মতে, পুরো ২০১৫ সাল ধরেই এল নিনো পরিস্থিতি চলতে পারে। দুর্বল হয়ে পড়বে তাহলে মৌসুমি বায়ু। এমন অবস্থাটা ফসলসহ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। নির্ধারিত সময়ের আগেই বৃষ্টিপাতহীন বর্ষার আগমন ঘটছে। কিন্তু দেশজুড়ে খরার যে উপদ্রব, তা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া সর্বাগ্রে জরুরী।
×