ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কেন এ ব্যর্থতা

প্রকাশিত: ০৩:৩৭, ২০ মে ২০১৫

কেন এ ব্যর্থতা

বর্ষবরণের দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নারী লাঞ্ছনার ঘটনার এক মাস চলে গেছে। সম্প্রতি সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ থেকে পাওয়া আটজনের ছবি দিয়ে তাদের ধরিয়ে দিতে জনপ্রতি এক লাখ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক। তিনি অবশ্য এর আগে এ ঘটনাকে ‘কিছু ছেলের দুষ্টামি’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। প্রথম থেকেই ওই ঘটনায় পুলিশের ব্যর্থতায় একাধিক ছাত্র সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করে আসছে। এ ছাড়া নারী নির্যাতনবিরোধীদের প্রতিবাদ সমাবেশে একদল পুলিশ নারী নির্যাতন করে নিন্দা কুড়িয়েছে। বর্ষবরণ উৎসবে নারীর ওপর যৌন নিপীড়নের ঘটনাটিকে নিছক বখাটেপনা বা উচ্ছৃঙ্খলতা হিসেবে দেখা চলে না। সুপরিকল্পিতভাবে এ ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়ে দেশে নারীর অবাধ চলাচল, উৎসবে সক্রিয় অংশগ্রহণের ওপরই আঘাত হানা হয়েছে। নারী স্বাধীনতা তথা নারীর অগ্রযাত্রাকে যারা ভাল চোখে দেখে না, যারা নারীকে কেবল ভোগের সামগ্রী হিসেবেই বিবেচনা করে এটি সন্দেহাতীতভাবে তাদেরই অপকর্ম। একইসঙ্গে বাঙালী সংস্কৃতি এবং অসাম্প্রদায়িকতাবিরোধী মনোভাবও এ থেকে প্রকাশিত। প্রকাশ্যে নারীর ওপর একের পর এক নির্যাতনের বিষয়টি প্রতিরোধ এবং অপরাধকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিদের হাতেনাতে পাকড়াও করার ব্যর্থতা অবশ্যই পুলিশের ওপর বর্তায়। গোটা পুলিশ বাহিনীকে দোষ দেয়া আমাদের অভিপ্রায় নয়। পুলিশের অনেক সদস্য এবং কতিপয় উর্ধতন কর্মকর্তার কাজ জনমনে বিভিন্ন সময় নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। পহেলা বৈশাখে ঘটনার সময়ই সিসিটিভির লাইভ ছবি দেখে কর্তব্যরত পুলিশের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ সমীচীন ছিল। লোকবল কম থাকলে দ্রুত আলাদা পুলিশ ফোর্স নিয়োগের উদ্যোগ নেয়াই সঙ্গত হতো। উৎসবের আগে যদিও পুলিশ আশ্বস্ত করেছিল এই কথা বলে যে, সেদিন তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যদি সত্যিই তাই হয়ে থাকে তাহলে নারী লাঞ্ছনার ঘটনার পরপরই দুর্বৃত্তদের পাকড়াও অসম্ভব হতো না। আমরা মনে করি বর্ষবরণ উৎসব নারীর যৌন হয়রানির ঘটনায় পুলিশ অবশ্যই বড় ধরনের ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু কেন এই ব্যর্থতা? সফলতার জন্য পুরস্কার দেয়া হলে ব্যর্থতার জন্যও দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ রীতির আওতায় পড়ে। এক মাসে একজনও নারী লাঞ্ছনাকারীকে গ্রেফতার করতে না পারা পুলিশের দক্ষতা ও সক্রিয়তাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। গোয়েন্দা বাহিনীও বা কি করছে! এটা কি সরকারকেও বিব্রত করছে না? নারীর ওপর হামলাকারীরা যেই হোক না কেন আইনের দৃষ্টিতে তারা সবাই অপরাধী ও যৌন নিপীড়ক। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই তাদের প্রাপ্য, যাতে ভবিষ্যতে এ জাতীয় দুষ্কর্ম করার দুঃসাহস কেউ দেখাতে না পারে। রাষ্ট্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুলিশ বিভাগের মানমর্যাদা ও তার প্রতি জনগণের আস্থা ধরে রাখার স্বার্থে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করার বিকল্প নেই। এজন্য পুলিশ বিভাগকে আত্মশুদ্ধির পথে যেতে হবে বলে আমরা মনে করি। পুলিশ নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা বাড়ানো এবং অপরাধ দমনের সুবিধার্থে হাল্কা অস্ত্র দেয়া সময়ের দাবি। জনবল, সরঞ্জাম, দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের ঘাটতি কাটানোর পাশাপাশি পুলিশের সদাচারণ ও সেবার মান বৃদ্ধি এবং মানসিক গঠন পরিবর্তনের মাধ্যমে সুনাম বাড়ুক, পুলিশ হয়ে উঠুক জনগণের বন্ধু- এটাই প্রত্যাশা।
×