ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শরণখোলায় ৭-৮টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ

বেড়িবাঁধ মেরামত শেষ না হতেই ধস-

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ১৯ মে ২০১৫

বেড়িবাঁধ মেরামত শেষ না হতেই ধস-

বাবুর সরদার, বাগেরহাট ॥ শরণখোলায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ওয়ামিপ (ডব্লিউএমআইপি) প্রকল্পের আওতায় পাউবোর ৩৫/১ পোল্ডারের ক্ষতিগ্রস্ত ৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ মেরামত ও ব্লক স্থাপনের কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ৩২ কোটি টাকার এ প্রকল্পের কাজ হস্তান্তরের সর্বশেষ মেয়াদ এক মাস আগে শেষ হলেও এখনও চলছে কাজ। এছাড়া নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করায় ইতোমধ্যে বাঁধের ৭-৮টি পয়েন্টে ধস নেমে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে বলেশ্বর নদের প্রবল ঢেউয়ে বাঁধের ওই সব ঝুঁকিপূর্ণ অংশ সম্পূর্ণ বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কাজ শেষ হতে না হতেই বাঁধ ধসে পড়ার আশঙ্কায় এলাকাবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। কাজের তদারকির দায়িত্বে বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডে কর্মকর্তারা এমন দুর্নীতি ও অনিয়ম দেখেও রহস্যজনক উদাসীন। ঠিকাদার তদারককারীদের ম্যানেজ করেই তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালে সুপার সাইক্লোন সিডরে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫-১ পোল্ডারের বেড়িবাঁধের ব্যাপক ক্ষতি হয়। সেই বাঁধ মেরামতে বিশ্বব্যাংক ৩২ কোটি টাকা অর্থ সহায়তা দেয়। দরপত্রের মাধ্যমে দুই প্যাকেজে কাজটি পায় ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসএস, এসি জয়েন্টভেন্সার। এর মধ্যে উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের তাফালবাড়ি লঞ্চঘাট থেকে বগীবন্দর পর্যন্ত প্রথম প্যাকেজে ৩ হাজার ৬৭৪ মিটার এবং ওই লঞ্চঘাট থেকে সন্ন্যাসী পর্যন্ত দ্বিতীয় প্যাকেজে ৩ হাজার ৩৩৬ মিটার। কাজ শুরু হয় ২০১২ সালের ১ ডিসেম্বর। দুই বছর মেয়াদের এ কাজ হস্তান্তরের কথা ২০১৪ সালের ২ মার্চ। কিন্তু কাজ শুরু হওয়ার পর কয়েক দফা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে নির্দিষ্ট সময়ে তা শেষ করতে না পারায় কাজের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০১৫ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু সেই মেয়াদেরও এক মাস অতিবাহিত হলেও কাজ এখনও শেষ হয়নি। নিয়মবহির্ভূতভাবে দুর্নীতি-অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে ঠিকাদার তড়িঘড়ি করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দরপত্রের নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ প্রথমে মাটি দিয়ে মেরামত ও উঁচু করার কথা। সেখানেও অনিয়ম করা হয়। এর পর শুরু হয় ব্লক নির্মাণের কাজ। ব্লকে ব্যবহার করা হয় নিম্নমানের পাথর। দেয়া হয়নি পরিমাণ মতো সিমেন্ট। পরবর্তীতে ব্লক স্থাপনের সময় শুরু হয় পুকুর চুরি। প্রথমে মাটির উপর ৪ ইঞ্চি বালু দিয়ে তার উপর জিও ব্যাগ এবং জিও ব্যাগের উপরে আরও ৪ ইঞ্চি ইটের খোয়া দিয়ে তার উপরে ব্লক স্থাপনের কথা। কিন্তু ব্লকের নিচে-উপরে ৪ ইঞ্চি করে বালু ও খোঁয়া কোনোটাই দেয়া হয়নি। এছাড়া নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ব্লক নির্মাণ করায় স্থাপনের সময়েই অনেক ব্লক ভেঙ্গে গেছে। এমনকি পুরনো ব্লকও বসানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরেজমিন দেখা গেছে, ইতোমধ্যে সাউথখালী ইউনিয়নের তাফালাবাড়ি লঞ্চঘাট, স্লুইস গেট, বগী, রায়েন্দা ইউনিয়নের রাজেশ্বর ও খোন্তাকাটা ইউনিয়নের কুমারখালীসহ ৭-৮ পয়েন্টে ধস দেখা দিয়েছে। এ সব এলাকার বিভিন্ন অংশের ব্লকসহ মূল মাটির বাঁধ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া নির্দিষ্ট সময় শেষ হওয়ার পরও সন্ন্যাসী এলাকার ১ হাজার ১৮০ মিটার এলাকার কাজ এখনো চলমান রয়েছে। এখানে ব্যাপক দুর্নীতি চলছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন। কাজ তদারকির দায়িত্বে বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি মোঃ আলতাব হোসেন কাজে অনিয়মের কথা স্বীকার করে বলেন, এসব বিষয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বাগেরহাটের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ মাঈনুদ্দিন বলেন, কাজে অনিয়মের বিষয়টি তার জানা নেই। তবে খোঁজখবর নিয়ে অনিয়ম প্রমাণিত হলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×