ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মঞ্চে দর্শক সঙ্কট কেটে যাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ১৯ মে ২০১৫

মঞ্চে দর্শক সঙ্কট কেটে যাচ্ছে

নাট্যজন ড.ইনামুল হক। দীর্ঘ ৫৫ বছরেরও অধিক সময় ধরে নাট্যাঙ্গনে আলো ছড়িয়ে রেখেছেন বহুমুখী প্রতিভা নিয়ে। একজন প্রকৌশলী হয়েও মেধা ও মননে বাংলা নাট্যাঙ্গন প্রাণিত হয়েছে বার বার। নাট্যকার হিসেবে আমাদের ইতিহাসের অংশ হয়ে আছেন। অভিনয় আর নির্দেশনায় রয়েছে স্বাচ্ছন্দ্য বিচরণ। সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পাশাপাশি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়েছেন। স্বাধীনতার পর যুক্ত হয়েছেন সাংস্কৃতিক আন্দোলনে। সুস্থ প্রজন্ম নির্মাণের তার লড়াই আজও অব্যাহত রেখেছেন। বহুমুখী কর্ম তৎপরতার জন্য পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার একুশে পদক। গুণী এই শিল্পীর নিজ হাতে গড়া সংগঠন ‘নাগরিক নাট্যাঙ্গন’ এর ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমিতে আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে আট দিনব্যাপী নাট্যোৎসব। উৎসব ও নাটক নিয়ে তার সঙ্গে কথা হয়। নাগরিক নাট্যোৎসব ২০১৫’র আয়োজনে কি থাকবে? ইনামুল হক : অনেক চড়াই-উতরাইয়ে নাগরিক নাট্যাঙ্গন দুই দশক পার করেছে। প্রতিষ্ঠার ২০তম বছরকে স্মরণীয় করে রাখার জন্যই এ উৎসবের আয়োজন। এবারের উৎসবের স্লোগান ‘চিত্ত আমার ভয় শূন্য উচ্চ আমার শির’। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে সন্ধ্যা ৬ টায় ৮ দিনের এ উৎসব উদ্বোধন করবেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। সম্মানিত অতিথি থাকবেন নাট্যজন আতাউর রহমান, মামুনুর রশীদ, নাসিরউদ্দীন ইউসুফ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, নাট্যজন ঝুনা চৌধুরী, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল আখতারুজ্জামান ও পথনাটক পরিষদের সভাপতি মান্নান হিরাসহ সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ব্যক্তিবর্গ। সভাপতিত্ব আমাকেই করতে হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হবেন দেশের খ্যাতনামা অভিনয়শিল্পী ফেরদৌসী মজুমদার। এতে তিনি একক অভিনয়ও করবেন। উৎসবে আমাদের দেশের ৫টি এবং ভারতের দুটি দল অংশগ্রহণ করবে। উদ্বোধনী দিনে মঞ্চায়ন হবে ঢাকা থিয়েটারের দুটি নাটক ‘গল্প নিয়ে গল্প’ ও ‘ইতি পত্রমিতা’। এবারের উৎসবে ব্যতিক্রমী আয়োজন কি থাকছে? ইনামুল হক: আমাদের সংগঠনের দীর্ঘ দুই দশকের অর্জন নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা হোক এটাই মূল উদ্দেশ্য। নারীরা যে নাট্যাঙ্গনে অসাধারণ ভূমিকা রাখতে পারে, তার বাস্তব উদাহরণ জীবন্ত কিংবদন্তি অভিনয়শিল্পী ফেরদৌসী মজুমদার। ফেরদৌসী মজুমদার দেশের নারী নাট্যকর্মীদের প্রেরণা। তিনি শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও এখনও অভিনয় করে চলেছেন, এতে নতুন প্রজন্ম উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। তাকে সম্মাননা জানানোর মধ্য দিয়ে আমরা এই বিষয়টিকে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে প্রয়াসী। উৎসবের তৃতীয় দিন লেখক অপূর্ব কুমার কুন্ডুর মূল গ্রন্থনায় ‘মঞ্চ নাটকের সংবাদ উপস্থাপনা : সংবাদপত্র এবং টেলিভিশন’ শীর্ষক এক সেমিনার হবে সকাল ১০ টায়। এছাড়া উৎসবের চতুর্থ দিন সন্ধ্যা ৭ টায় নাগরিক নাট্যাঙ্গনের প্রযোজনায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোট গল্প অবলম্বনে, মাহমুদুল ইসলাম সেলিমের নাট্যরূপ ও লাকী ইনামের নির্দেশনায় মঞ্চায়ন হবে ‘প্রাগৈতিহাসিক’ নাটকের শততম মঞ্চায়ন। এতে যারা কোন অনুপস্থিতি ছাড়া পুরো একশটি মঞ্চায়নে অংশ নিয়েছেন তাদের সম্মাননা দেয়াকেও ব্যতিক্রমী এক আয়োজন মনে করছি। নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করানোর লক্ষ্যে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের দু’জন নাট্য ব্যক্তিত্বকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো হবে। এর একজন হলেন নাট্যকার ও অভিনেতা প্রয়াত শম্ভু মিত্র এবং অন্যজন প্রয়াত শেক্সপিয়ার। দলের দীর্ঘ ২০ বছরের পথচলা নিয়ে যদি কিছু বলেন ইনামুল হক : আমরা যে সব কিছুতেই সফল হয়েছি তা নয়। তবে আমরা অভিনয়শিল্পী, নাট্যকার ও নাট্যাঙ্গনে এখন যারা অবদান রাখছেন তাদের অনেককেই দর্শকের কাছে পরিচিত করানোর ভূমিকা রেখেছি এবং এখনও সেটা অব্যাহত। নাগরিক নাট্যাঙ্গন ইনস্টিটিউট অব ড্রামা (এনএনআইডি) নামের স্কুল থেকে প্রতি বছর অনেক শিক্ষার্থী পাস করে স্বমহিমায় নিজেকে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। এখান থেকে ১৯তম ব্যাচের শিক্ষা সমাপনী হলো। তবে যাদের তৈরি করেছি তাদের কেউ কেউ যদি অতীতকে ভুলে যায় তখন কষ্ট হয়। থিয়েটারের বর্তমান অবস্থা কেমন মনে হয়? ইনামুল হক : আগের চেয়ে অনেক বেশি যৌক্তিক হয়েছে। থিয়েটার বা মঞ্চনাটকে দর্শক সঙ্কটের কারণ নিরাপত্তাহীনতা, এটা সাময়িক। বিশেষ করে রাজধানীতে দর্শকের আসা-যাওয়ার নানাবিধ সমস্যার কারণে দর্শক উপস্থিতি আগের তুলনায় কম। তবে মঞ্চে দর্শক সঙ্কট কেটে যাচ্ছে। মঞ্চ নিয়ে আগামী পরিকল্পনা কি? ইনামুল হক : ‘এনএনআইডি’ নিয়ে অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। স্কুলটিকে কিভাবে আরও প্রসারিত ও ভাল করা যায় সেটা নিয়ে ভাবছি। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মকে নাটক বিষয়ে আরও সমৃদ্ধ করে তুলতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছি। -গৌতম পাণ্ডে
×