ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দুই শ’ মেগাওয়াট সোলার বিদ্যুত পার্ক স্থাপনের প্রস্তাব সিঙ্গাপুরের

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ১৯ মে ২০১৫

দুই শ’ মেগাওয়াট সোলার বিদ্যুত পার্ক স্থাপনের প্রস্তাব সিঙ্গাপুরের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সান এডিসন এনার্জি হোল্ডিং নামে সিঙ্গাপুরভিত্তিক একটি কোম্পানি দেশে ২০০ মেগাওয়াটের সোলার পার্ক স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছে। বিদ্যুত বিভাগে দেয়া প্রস্তাবে কোম্পানিটি ৪০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সরকার চাইলে এই বিনিয়োগের পরিমাণ ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি করতে চায় কোম্পানিটি। দেশে এ পর্যন্ত সৌরবিদ্যুত উৎপাদন প্রস্তাবগুলোর মধ্যে এটিই সব থেকে বড়। সরকার দীর্ঘদিন ধরে সোলার পার্ক স্থাপনের চেষ্টা চালালেও উপযুক্ত বিনিয়োগ এবং জমির দুষ্প্রাপ্যতার জন্য তা বাস্তবায়ন জটিল আকার ধারণ করেছে। বিদ্যুত বিভাগ বলছে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্লিন এনার্জি থেকে বিদ্যুত উৎপাদনের ওপর আবারও গুরুত্বারোপ করেছেন। বিদ্যুত বিভাগ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর নতুন করে বিনিয়োগকারী খোঁজার চেষ্টা করছে। বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এ প্রসঙ্গে বলেন, বিদ্যুত বিভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎস থেকে বিদ্যুত উৎপাদন বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। কিছু কিছু ছোট আকারের সোলার পার্ক স্থাপন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ বছরের মধ্যে ১০০ মেগাওয়াটের সোলার পার্ক স্থাপনের কাজ শুরু হবে। কিছুটা দাম বেশি পড়লেও সৌরবিদ্যুত পরিবেশবান্ধব। এই বিদ্যুত উৎপাদনে পরিবেশে কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না। কাজেই আমাদের এই দিকটিও হিসাব করতে হবে। আর এসব বিষয় সমন্বয় করা হলে বিদ্যুতের দাম অনেক কমে আসবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুত উৎপাদনে নিজেদের করা পরিকল্পনা থেকে সরকার এখনও অনেক পিছিয়ে রয়েছে। সরকারের প্রাথমিক পরিকল্পনায় ২০১৫ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুত উৎপাদনের পাঁচ ভাগ অর্থাৎ ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত সৌরশক্তি থেকে আসার কথা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত সোলার হোম সিস্টেম কিছু মিনি এবং ন্যানো গ্রিডের মাধ্যমে ১৭৬ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুত পাওয়া যাচ্ছে। গ্রিডভিত্তিক সৌর বিদ্যুত এখনও উৎপাদনে আসেনি। অন্যদিকে পরিকল্পনায় রয়েছে ২০২০ সালের মধ্যে মোট উৎপাদনের অন্তত ১০ ভাগ আসবে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে। যার পরিমাণ দাঁড়াবে দুই হাজার মেগাওয়াট। আর পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্লান অনুযায়ী ২০৩০ এ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করে চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু যে গতিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন বাড়ছে তাতে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন দুরুহ হতে পারে। সিঙ্গাপুরভিত্তিক সান এডিসন এনার্জি হোল্ডিং প্রাইভেট লিমিটেডের প্রস্তাবটি বিবেচনা করতে সরকারকে আবারও তাগেদা দিয়েছে কোম্পানিটি। এক চিঠিতে তারা বলছে অনেক দিন আগেই সোলার পার্ক স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছে সরকারের কাছে। ময়মনসিংহের ত্রিশালে এজন্য এক হাজার একর জমিও কিনতে আগ্রহী। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায় কোম্পানিটি ২০ বছরের জন্য সোলার পার্ক স্থাপন করতে চায়। চুক্তির ১৮ মাসের মধ্যে ময়মনসিংহের ত্রিশালে কেন্দ্রটি স্থাপন করতে পারবে। এখান থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুত তারা ১৪ টাকা ৭৫ পয়সায় বিক্রির জন্য প্রস্তাব দিয়েছে। দেশের ভাড়াভিত্তিক তেলচালিত বিদ্যুত কেন্দ্রের তুলনায় এই দাম বেশ কম। বিদ্যুত বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, এ বিষয়ে দরকষাকষি করার সুযোগ রয়েছে। যেহেতু সরকার সোলার পার্ক স্থাপনে আপাতত কোন প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র আহ্বান করছে না তাই এ ধরনের প্রকল্পগুলো বিদ্যুত জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ আইন-সংশোধিত ২০১৫ এর আওতায় করতে হবে। আর ওই আইনে প্রতিযোগিতামূলক বিভিন্ন দরপত্র বিবেচনা করে দরকষাকষির মাধ্যমে চুক্তি চূড়ান্ত করার সুযোগ রয়েছে। সান এডিসনের প্রস্তাবটি পিডিবির কারিগরি কমিটি আর্থিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। তারা মন্ত্রণালয়ে প্রেরিত মতামতে বলছে কোম্পানিটির বিভিন্ন দেশে সৌরবিদ্যুত স্থাপনে পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে। এজন্য জমি ক্রয়ের অনুমোদন দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছে কমিটি। ওই চিঠিতে তারা বলছে সান এডিসন বিশ্বে ১০০টি সোলার পার্ক স্থাপন করেছে। ময়মনসিংহে স্থানীয় ভূমি মালিকদের সঙ্গে তাদের প্রাথমিক চুক্তির কথাও জানিয়েছে কোম্পানিটি।
×