ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দেশের ফুটবলে নারী জাগরণ

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১৯ মে ২০১৫

দেশের ফুটবলে নারী জাগরণ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দল এবং সম্প্রতি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ফুটবল দলে যোগ দেয়া কৃতী ফরোয়ার্ড সাবিনা খাতুন আবারও মালদ্বীপে ফুটবল খেলতে যাচ্ছেন। এবার তার সঙ্গী হয়েছেন আরও দুই কৃতী ফুটবলার সাবিনা আক্তার এবং মিরোনা। মালদ্বীপের ধিভেহি সিফেইনগে ক্লাবের পক্ষে ‘এফএএম ওমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপ’ খেলার লক্ষ্যে আজ মঙ্গলবার ঢাকা ত্যাগ করবেন এই তিন নারী ফুটবলার। মালদ্বীপের এই ফুটবল প্রতিযোগিতা ২৪ মে থেকে ১২ জুন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে সোমবার বিকেল ৩টায় বাফুফে কনফারেন্স রুমে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন সাবিনা খাতুন, সাবিনা আকতার ও মিরোনা। এ ছাড়া বক্তব্য রাখেন বাফুফে মহিলা ফুটবল কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ, বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ প্রমুখ। প্রথম মহিলা ফুটবলার হিসেবে বিদেশে খেলার সুযোগ পেয়ে নিজেকে দারুণভাবে মেলে ধরা সাবিনা খাতুনের সঙ্গে এবার সুযোগ পেলেন আরও দু’জন। সন্দেহ নেই বাংলাদেশের মহিলা ফুটবলের জন্য এ এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন। পাশাপাশি দেশের ফুটবলে নারী জাগরণের বিষয়টাও তিন খেলোয়াড়ের মালদ্বীপ খেলার মধ্যে দিয়ে প্রমাণ হলো। সাবিনা খাতুনের পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকলেও অন্য দু’জনও নামের সুবিচার করে খেলতে দারুণভাবে আত্মবিশ্বাসী। তাদের উজ্জ্বল নৈপুণ্য আগামীতে আরও বড় সুযোগ বয়ে আনে, বিষয়টা মাথায় নিয়ে মালদ্বীপ মাতাতে চান তারা। ‘মালদ্বীপে গিয়ে ফুটসাল টুর্নামেন্টে খেলে নিজেকে প্রমাণ করার পাশাপাশি বাংলাদেশের মহিলা ফুটবলের সুনাম বয়ে এনেছি। আগামীতে আমার লক্ষ্য থাকবে ইউরোপের লীগে খেলা। নিয়মিত কঠোর অনুশীলন ও ভাগ্য সহায় থাকলে এই স্বপ্নও পূরণ করা সম্ভব’Ñ এমনটাই বলেছিলেন সাবিনা খাতুন। মালদ্বীপস উইমেন্স ফুটসাল ফিয়েস্তা টুর্নামেন্টের ফাইনালে গত ১৮ এপ্রিল সাবিনার দল মালদ্বীপ পুলিশ ক্লাব হেরে যায় প্রতিপক্ষ ইমেগ্রেশন ক্লাবের কাছে। ফাইনালে সাবিনা একটি গোল করলেও তা দলের হার এড়াতে যথেষ্ট ছিল না। বাংলাদেশ মহিলা ফুটবলের গর্ব সাবিনা দেশে ফেরেন গত ২১ এপ্রিল। দলকে শিরোপা জেতাতে না পারলেও ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে ছিলেন সমুজ্জ্বল। টুর্নামেন্টের ব্যক্তিগত সর্বাধিক গোলদাতা হয়েছিলেন তিনি। ৬ ম্যাচে ৫ হ্যাটট্রিকসহ করেছিলেন ৩৭ গোল। ৫ ম্যাচেই হন ম্যাচসেরা। টুর্নামেন্টে সাবিনা জেতেন একাধিক পুরস্কার : ‘বেস্ট ফাইভ প্লেয়ার্স অব দ্য টুর্নামেন্ট’, ‘এল্লিয়েড সালহি গোল স্কোরার’, ‘এডিডাস হ্যাটার্স বুট’ ও ‘টপ গোল স্কোরার এ্যাওয়ার্ড’। ওই ফুটসাল টুর্নামেন্টে প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগের কাছে ভূমিকম্পের মতো মূর্তিমান আতঙ্ক ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের এই সহঅধিনায়ক। হৃদয় রাঙানো উদ্ভাসিত নৈপুণ্যে মাতান মালদ্বীপ। জয় করেন সেখানকার দর্শকদের চিত্ত। উল্লেখ্য, ওই ফুটসাল টুর্নামেন্টে মোট তিন দেশের চার বিদেশী ফুটবলার অংশ নেন, যাদের মধ্যে সুইডেনের ২ এবং বাংলাদেশ এবং ইন্দোনেশিয়ার ১ ফুটবলার ছিলেন। মালদ্বীপ পুলিশ ক্লাবের হয়ে সাবিনা খেলতে গিয়েছিলেন ৬০০ ডলারের পারিশ্রমিকে। ক্লাবের কর্মকর্তারা সাবিনার খেলায় খুশি হয়ে তাকে আরও ১০০ ডলার বোনাস দেন। বিদেশী ক্লাবে খেলা প্রথম বাংলাদেশী পুরুষ ফুটবলার ছিলেন বাফুফের বর্তমান সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন। তিনি ১৯৭৫ সালে হংকংয়ের এফসি ক্যারোলিনে খেলেছিলেন। পরবর্তীতে ভারতীয় লীগে অনেকে খেলছেন। তবে পেশাদার লীগ খেলা একমাত্র ফুটবলার কাজী সালাউদ্দিনই। সাবিনা বলেন, মালদ্বীপের তিন ক্লাব আগামী মৌসুমে তাকে খেলার প্রস্তাব দিয়েছিল। পারিশ্রমিক দেবে ১৫০০ ডলার। তাছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় দলের গোলরক্ষক সাবিনা আক্তার ও মিডফিল্ডার মিরোনাকেও সাবিনার মাধ্যমে খেলার প্রস্তাব দেয়। সাবিনা দেশে ফিরে বিষয়টা বাফুফেকে অবহিত করেছিলেন। বাফুফের সবুজ সঙ্কেত পেয়েই এই তিনজন আবারও উড়াল দিচ্ছেন মালদ্বীপে। এখন দেখার বিষয়, মালদ্বীপে আবারও খেলতে গিয়ে সাবিনা আগের মতো উদ্ভাসিত এবং তার স্বদেশী দুই সতীর্থ সাবিনার মতো খেলে দেশের জন্য আবারও সুনাম বয়ে আনতে পারেন কি না।
×