ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সাংবাদিক প্রবেশে বাধা দেয়া হয়নি সিটি নির্বাচনে

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৯ মে ২০১৫

সাংবাদিক প্রবেশে বাধা দেয়া হয়নি সিটি নির্বাচনে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে সাংবাদিক প্রবেশে বাধা দেয়া ও তাদের নাজেহাল হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা। উল্টো ভোট কেন্দ্রে একসঙ্গে অনেক সাংবাদিকদের প্রবেশের সমালোচনা করেন তারা। নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে সাংবাদিক প্রবেশে বাধা দেয়া ও তাদের নাজেহাল হওয়ার ঘটনায় ইসির গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে তারা এমন বক্তব্য দেন। এ বিষয়ে আগামীকাল পুলিশের বক্তব্য শোনা হবে বলে জানিয়েছে তদন্ত কমিটি। গত রবিবার এ বিষয়ে ইসির তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ঢাকার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের কাছে বিভিন্ন কেন্দ্রের ৩০ জন প্রিসাইডিং অফিসার তাদেনর বক্তব্য তুলে ধরেন। প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা মৌখিক ও লিখিতভাবে তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছেন, কোন কোন কেন্দ্রে একাধিক সাংবাদিক প্রবেশ করেছেন। কয়েক মিনিট কেন্দ্রে ঘুরেছেনও। ভোটকেন্দ্রের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। বাধা দেয়া ও নাজেহালের কোন ঘটনা ঘটেনি উল্লেখ করেন। তদন্ত কমিটির সদস্য ইসির উপ সচিব আব্দুল অদুদ বলেন, সংশ্লিষ্ট ৩০ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার শুনানি হয়েছে। তাদের বক্তব্য পেয়েছি। পুলিশ সদস্যদের শুনানি হবে ২০ মে। এ মাসের শেষে ভুক্তভোগী সাংবাদিকদেরও বক্তব্য নেয়া হবে। সবার বক্তব্য নিয়ে প্রয়োজনীয় সুপারিশসহ প্রতিবেদন কমিশন সচিবালয়ে উপস্থাপন করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। গত ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কেন্দ্রে সাংবাদিকদের বাধার বিষয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুটি তদন্ত কমিটি করে ইসি। ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রায় ৩০টি ভোট কেন্দ্রে সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা ও নাজেহালের ঘটনার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। ইসির গঠিত তদন্ত কমিশনে প্রাথমিকভাবে এ ৩০ কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসারদের শুনানির জন্য ডাকা হয়। শুনানিতে কমিটির পক্ষ থেকে প্রিসাইডিং অফিসারদের কাছে পাঁচটি বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। এর মধ্যে ভোটের দিন সংশ্লিষ্ট ভোট কেন্দ্রে কোন সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন কিনা, কতক্ষণ সেখানে ছিলেন, কেন্দ্রের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন ছিল, কেন্দ্রে সাংবাদিক প্রবেশে বাধা ও নাজেহালের ঘটনা ঘটেছে কিনা, ঘটে থাকলে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে তা জানানো হয়েছিল কিনা, ভোটকেন্দ্র নিয়ে অন্য কোন মন্তব্য বা বক্তব্য রয়েছে কিনা। সেগুনবাগিচায় অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে রবিবার বেলা ১১টার দিকে ৩০ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা উপস্থিত হন। তাদের জানানো হয় নীতিমালা মেনে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে ভোট কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা বা নাজেহালের যেসব অভিযোগ এসেছে, সে বিষয়ে মৌখিক ও লিখিত বক্তব্য নেয়া হবে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে ৩০টি ভোটকেন্দ্রের তালিকা করে সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদেরই বক্তব্য নেয়া হয় এ বিষয়ে। এসব কেন্দ্রের মধ্যে ছিল, হযরত শাহ আলী গার্লস স্কুল এ্যান্ড কলেজ (কেন্দ্র ১ ও ২), জামিয়া মোহাম্মাদিয়া ইসলামিয়া কড়াইল টিএ্যান্ডটি কলোনি মাদ্রাসা (কেন্দ্র ১ থেকে ৬); বাসাবো উচ্চ বিদ্যালয় (কেন্দ্র ১ থেকে ৪); শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনির মাহবুব আলী ইনস্টিটিউট, ঢাকা বধির হাই স্কুল (কেন্দ্র ১ ও ২), সেগুনবাগিচা উচ্চ বিদ্যালয় (কেন্দ্র ১ থেকে ৩); লালবাগ মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজ (কেন্দ্র ১ থেকে ৪); সেন্ট্রাল ইউম্যান্স কলেজ (কেন্দ্র ১ ও ২); সিলভারডেল প্রিপ্যারেটরি এ্যান্ড গার্লস হাই স্কুল (কেন্দ্র ১ ও ২), দক্ষিণ মুহসেন্দি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (কেন্দ্র ১ থেকে ৩) এবং শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র। এদিকে সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে বাধা প্রদান সংক্রান্ত নির্বাচনী অনিয়ম খতিয়ে দেখতে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের বক্তব্যের পর এবার পুলিশের শুনানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন গঠিত তদন্ত কমিটি। আগামীকাল ২০ মে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। ওইদিন সংশ্লিষ্ট ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা এবং সে এলাকায় অবস্থিত সংশ্লিষ্ট থানার ওসির বক্তব্য শুনবে তদন্ত কমিটি। এরপর ভুক্তভোগী সাংবাদিকদের বক্তব্যও শুনবে কমিটি। ইসির উপসচিব আব্দুল অদুদ সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের আগামীকালের শুনানিতে উপস্থিত থাকতে ইসির নির্দেশনা পাঠিয়েছেন। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ডিসিসি নির্বাচনের সময় অনুমোদিত সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে বাধা প্রদান এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের নাজেহাল করার ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ইসি। তদন্ত কমিটি যেসব কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তাদের বক্তব্য শুনবে। একই সঙ্গে ওইসব ভোটকেন্দ্র যেসব থানার অন্তর্ভুক্ত সেসব থানার ওসিদেরও শুনানিতে উপস্থিত থাকতে হবে। কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে নির্বাচনে কেন্দ্রে সাংবাদিক প্রবেশে বাধা এবং নাজেহাল হওয়ার বিষয়টির পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সেজন্য ঘটনার কারণ উদঘাটন ও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই এ শুনানি করছে ওই তদন্ত কমিটি।
×