ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিস্ময় ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুনের

হাইকোর্টের নির্দেশ উপেক্ষা করে খুলনায় রাজাকার সবুরের নামে সড়ক!

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১৮ মে ২০১৫

হাইকোর্টের নির্দেশ উপেক্ষা করে খুলনায় রাজাকার সবুরের নামে সড়ক!

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ ১৯৭১ ঃ গণহত্যা নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রবিবার সকালে খুলনা মহানগরীর বিএমএ ভবন মিলনায়তনে দু’দিনব্যাপী আর্টক্যাম্প উদ্বোধন করা হয়। পরে খুলনা প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের ট্রাস্টিদের সঙ্গে সাংবাদিকদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। মতবিনিময় সভায় বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ, গবেষক লেখক ১৯৭১ ঃ গণহত্যা নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের সভাপতি প্রফেসর ড. মুনতাসীর মামুন তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, খুলনার প্রধান সড়ক যশোর রোডের নাম পরিবর্তন করে স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার খান এ সবুরের নামে রাখা হয়েছে। ওই নামকরণ বাতিল করতে নিজ উদ্যোগে মহামান্য হাইকোর্টে রিট করি। সেই রিটের আলোকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নোটিস দেয়া হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত এই সড়কটির নাম যশোর রোড নামে পুনর্বহাল করা হয়নি। হাইকোর্টের নির্দেশনা উপেক্ষা করে রাজাকার খান এ সবুরের নামে খুলনায় সড়কের নাম চালু রয়েছে। তিনি বলেন, ছাত্রলীগ-যুবলীগের বুকের পাটা নেই। তা যদি থাকত তাহলে খুলনায় এখনও রাজাকার খান এ সবুরের নামে সড়কের নাম থাকত না। এ প্রসঙ্গে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ১৪ দলের নেতারা কি করেন, তারা এ ব্যাপারে নীরব কেন? মুনতাসীর মামুন আক্ষেপ করে বলেন, জনপ্রতিনিধিরা যেখানে-সেখানে সরকারী টাকা দিলেও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণে টাকা দেন না। এক বছর আগে খুলনায় প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের প্রথম ১৯৭১ ঃ গণহত্যা নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের জন্য স্থানীয় কোন সংসদ সদস্য, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও স্থানীয় মন্ত্রী কেউ কোন সহযোগিতা করেননি। এখানে কি কাজ হচ্ছে তা কেউ জানতেও চাননি। জনপ্রতিনিধিদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, তারা নিজেদের ক্ষুদে জমিদার মনে করেন, আর জনগণকে প্রজা ভাবেন। তিনি খুলনার সর্বস্তরের মানুষের কাছে এই প্রতিষ্ঠানটি বাঁচিয়ে রাখতে প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন প্রকাশনা ও দেশবরেণ্য শিল্পী হাশেম খানের আলোকচিত্র কিনে প্রতিষ্ঠানটিকে সহযোগিতা করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান। এ মতবিনিময় সভায় সূচনা বক্তব্য দেন ১৯৭১ ঃ গণহত্যা নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের ট্রাস্টি সম্পাদক ডাঃ শেখ বাহারুল আলম। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ট্রাস্টি দেশবরেণ্য চিত্রশিল্পী হাশেম খান, ট্রাস্টি খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর, ট্রাস্টি গৌরাঙ্গ নন্দী, ট্রাস্টের পরিচালনা পরিষদের সম্পাদক অধ্যাপক শংকর কুমার মল্লিক প্রমুখ। শিল্পী হাশেম খান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে দেশে যে হত্যা, নির্যাতন ও ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে পৃথিবীর ইতিহাসে এ ধরনের নৃশংসতার নজির নেই। রাজাকার আলবদররা যা করেছে তা জানোয়ারদের সঙ্গেই তুলনা করা চলে। তিনি বলেন, একটি দেশের যুদ্ধে অনেক ত্যাগ থাকে। বিশ্বের ইতিহাসে কোন যুদ্ধে এতবেশি সংখ্যক হত্যাযজ্ঞের কোন ঘটনা ঘটেনি। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর স্বাধীনতার মূলমন্ত্র ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টা চলেছে। প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ১৭ মে ঐতিহাসিক দিন। এই দিনে বঙ্গবন্ধুকন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। এই দিনটির সঙ্গে আর্কাইভ ও জাদুঘর প্রতিষ্ঠা দিনের মিল রয়েছে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় না থাকলে যুদ্ধাপরাধী রাজাকারদের বিচার হতো না, ফাঁসিও হতো না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ আবার ফিরে আসছে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। এর আগে সকালে বিএমএ ভবন মিলনায়তনে ‘শিল্পীর চোখে ১৯৭১ এর গণহত্যা ও নির্যাতন’ শীর্ষক চিত্রাঙ্কনের উদ্বোধন করেন দেশবরেণ্য চিত্রশিল্পী হাশেম খান। প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি ১৫ শিল্পীর হাতে ছবি আকার রংতুলি এবং এপ্রোন (পোশাক) তুলে দেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত এই ১৫ শিল্পী হলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিউটের শিক্ষক বিমানেশ বিশ্বাস, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তরিকত ইসলাম, বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কলেজের অধ্যাপক সুকুমার বাগচী, যশোর আর্ট কলেজের শিক্ষক গৌতম বিশ্বাস, চিত্রশিল্পী প্রদ্যুত ভট্টাচার্য, প্রশান্ত দাশ, নাজমুল ইসলাম, এবিএম হাফিজুল ইসলাম, সুমন সরদার, শায়লা জিন্নাত রুমি, মোহাম্মদ রুমি ময়মনসিংহ আর্ট কলেজের ফরহাদ হোসেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের রকিব হাসান, ঢাকার চিত্রশিল্পী ধর্ম দাশ মল্লিক ও রাজশাহী আর্ট কলেজের শিক্ষক একেএম হাসান ইমাম। আর্টক্যাম্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখেন ১৯৭১ ঃ গণহত্যা নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের ট্রাস্টি সম্পাদক ডাঃ শেখ বাহারুল আলম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ, গবেষক ১৯৭১ ঃ গণহত্যা নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের সভাপতি প্রফেসর ড. মুনতাসীর মামুন, ট্রাস্টি দেশবরেণ্য চিত্রশিল্পী হাশেম খান, ট্রাস্টি খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর প্রমুখ। আজ সোমবার অনুষ্ঠানমালার সমাপনী দিনে বেলা এগারোটায় খালিশপুরের মুন্সীবাড়িতে গণহত্যা স্মৃতি নামফলক পুনস্থাপন করা হবে এবং বিকেল চারটায় খুলনা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে শহীদ স্মৃতি স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠান। স্মারক বক্তা লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ, লেখক, ১৯৭১ ঃ গণহত্যা নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের সভাপতি প্রফেসর ড. মুনতাসীর মামুন। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন ট্রাস্টি সম্পাদক ডাঃ শেখ বাহারুল আলম।
×